কাওয়ালি আয়োজকদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে, দাবি ছাত্রলীগের

ছবি: স্টার ফাইল ফটো

বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) পায়রা চত্বরে কাওয়ালি গানের আসরে হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের জড়িত থাকার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারদলীয় এই ছাত্র সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা দাবি করেছেন, এই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।

প্রত্যক্ষদর্শী, অনুষ্ঠানের আয়োজক ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা বলছেন, অনুষ্ঠান শুরুর আগেই হামলা করে চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। হামলায় আহতদের মধ্যে কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীও আছেন।

অনুষ্ঠানটির স্বেচ্ছাসেবক মোস্তাকিম বিল্লাহ মাসুম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, 'এই অনুষ্ঠানটি আয়োজনের প্রস্তুতি প্রায় ২ মাস আগে থেকে নেওয়া হয়েছে। যারা আয়োজক তারা আমার পরিচিত। আমি এই অনুষ্ঠানটি নিয়ে আগ্রহী ছিলাম। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো কাওয়ালির আয়োজন হয়নি। টিএসসিতে কনসার্ট হয়, বিভিন্ন ব্যান্ড আসে, সিনেমা দেখানো হয়, আবৃত্তি হয় সে জায়গা থেকে কাওয়ালি হওয়াটা কোনোভাবেই সমস্যাজনক বলে আমার মনে হয়নি।'

ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৬টায় গানের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন সবাইকে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন।

এ ব্যাপারে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সাদ্দাম হোসেনের অনুসারীরা সেখানে হামলা চালিয়েছেন। ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক নাজির আহমেদ, সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সাব্বির হোসাইন শোভন, জহুরুল হক ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ফরিদ জামানসহ আরও অনেক ছাত্রলীগ কর্মী হামলায় অংশ নেন। এ ছাড়া, কয়েকজনের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাদেরকে হামলার ভিডিও মুছে ফেলতে বলেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাদ্দাম হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। এই ঘটনায় যারা ছাত্রলীগকে দায়ী করছে তারা পূর্ব নির্ধারিত স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী একটি অসৎ উদ্দেশ্যে মনগড়া কথা বলছেন।'

একইসঙ্গে অনুষ্ঠানটির আয়োজকরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজ করছেন বলে দাবি করেন এই ছাত্রলীগ নেতা।

সাদ্দাম বলেন, 'এই আয়োজন বা কাওয়ালি গান, উপমহাদেশের সংস্কৃতির যে ধারা সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই। এখানে আয়োজন নয়, আয়োজকদের উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। তারা প্রশাসনের নিষেধ আমলে নেননি। এই অনুষ্ঠানে টিএসসির সাংস্কৃতিক সামাজিক সংগঠনগুলোর কারো অংশগ্রহণ ছিল না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বাস্তবতায় দেখেছি যারা এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে তারা সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইসলামিক শাসনতন্ত্র আন্দোলন ও হিযবুত তাহারীরের বিভিন্ন স্টাডি সার্কেলের সঙ্গে যারা জড়িত এবং ছাত্র অধিকার পরিষদ নামে সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর যে নতুন মুখপাত্র তৈরি হয়েছে- এই ৩ দলের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই প্রোগ্রামটি করেছে।'

ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের ভাষ্য, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সংস্কৃতিকে ব্যবহার করবে কিংবা সুসংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করবে এটাকে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।'

সাদ্দাম হোসেন আরও বলেন, 'কাওয়ালি গানের সঙ্গে বাঙালি জাতীয়তাবাদ বা ছাত্রলীগের কোনো সমস্যা নেই। আমাদের ছাত্র সমাজকে আমরা ইতিমধ্যে আহ্বান জানিয়েছি যেন বিভ্রান্তিতে না পড়ে। এ ধরনের কোনো গুজবে যেন কেউ পা না দেয় এবং সংস্কৃতিকে ব্যবহার করে কোনো মৌলবাদী গোষ্ঠী যেন ফায়দা লুটতে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে বলেছি। আমরা এটি স্পষ্ট করে বলতে চাই, মৌলবাদী গোষ্ঠী যে রঙই ধারণ করুক, এরা যদি সুসংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ এর প্রতিবাদ করবে।'

কাওয়ালি গানের আসরের আয়োজক ও সিলসিলা ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা লুৎফর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, বুধবার যারা হামলা চালিয়েছে তারা ক্যাম্পাসে চিহ্নিত। সুতরাং অস্বীকার করে এর দায় এড়ানো যাবে না। হামলার প্রতিবাদে আমরা আজকে  (বৃহস্পতিবার) গান করেছি। আমরা হামলাকারীদের জানিয়ে দিতে চেয়েছি যে, হামলা করে সংস্কৃতির যাত্রা, সুন্দরের যাত্রা থামানো যায় না। আমরা আছি।'

এ প্রসঙ্গে ছাত্র অধিকার পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেনের ভাষ্য, 'এই আয়োজন ছাত্র অধিকার পরিষদের ছিল না। আর যদি ছাত্র অধিকার পরিষদ আয়োজন করেও থাকে তাহলেও কি সেখানে ছাত্রলীগ হামলা চালাতে পারে? আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে এই আয়োজনের সঙ্গে ছিলাম। এটা তো কোনো অপরাধ না। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আমি এখানে কোনো আয়োজনের সঙ্গে থাকতে পারি না? এটা তো আমার অধিকার। ছাত্রলীগ কি কোনো আয়োজনের সঙ্গে ছিল না কখনো?'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা মনে করি তারা এসব ঠুনকো অজুহাত দিয়ে এই হামলাকে বৈধতা দিতে চাচ্ছেন। ছাত্র অধিকার পরিষদ সবসময় মুক্ত সংস্কৃতি, মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাস করে। আমরা মনে করি, সংস্কৃতির যেমন কোনো ধরা-বাঁধা নিয়ম নেই, তেমনভাবে কে আয়োজন করবে, কে করবে না এটারও কোনো নিয়ম নেই। যারা হামলা করেছে তারা বর্তমানে বাংলাদেশে যে মুক্তচিন্তা ও সংস্কৃতির যে প্রচলন সেটিকে উঠতে দিতে চায় না। তারা মূলত এই বার্তা দিচ্ছেন যে, কাওয়ালির সঙ্গে মৌলবাদের সম্পর্ক রয়েছে। যারা সংস্কৃতির বিকাশের জায়গাটি উন্মুক্ত রাখতে চায় না তারাই মূলত মৌলবাদকে এই দেশের মধ্যে উসকে দেয়। যারা হামলা করেছে তারা সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী। ছবি, ভিডিওতে আমরা সেটার প্রমাণ পেয়েছি।'

হামলা প্রসঙ্গে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা রাগীব নাঈম বলেন, 'ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা যেকোনো ধরনেরই অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারে। তাই কাওয়ালি গানের আয়োজনের পেছনে মৌলবাদী গোষ্ঠী আছে, এমনটা দাবি করলে তো হবে না। ছাত্রলীগের কাছে কি গোয়েন্দা প্রতিবেদন আছে? তারা কীভাবে দাবি করছেন যে এর পেছনে মৌলবাদী গোষ্ঠী ছিল?'

নাঈমের বক্তব্য, 'প্রশাসনের অনুমতি নেয়া হয়েছে কিনা সেটা তো প্রশাসনের দেখার বিষয়, ছাত্রলীগের দেখার বিষয় না। কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন যদি অনুষ্ঠান করতে চায় সেটি দেখার জন্যও প্রশাসন আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীরই অনুষ্ঠানের আয়োজন করার অধিকার রয়েছে। এখানেই কেউই বাধা দিতে পারে না।'

এদিকে, হামলার প্রতিবাদে টিএসসির সামনে গতকাল বৃহস্পতিবার কাওয়ালি ও প্রতিবাদী গানের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সিলসিলা ব্যান্ডের ব্যানারে ওই আয়োজন শুরু হয়।

সিলসিলা ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা লুৎফর রহমান বলেন, 'কাওয়ালি ঐতিহ্যবাহী গান। গতকালের (বুধবার) অনুষ্ঠানের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে পরিশ্রম করেছি। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছিলাম। কিন্তু হামলার কারণে আমাদের অনুষ্ঠান পণ্ড হয়েছে। দর্শক ও আয়োজকদের অনেকে আহত হয়েছেন। আজকে (বৃহস্পতিবার) আমরা শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আমাদের কোনো সাউন্ড সিস্টেম ছিল না, কোনো ইনস্ট্রুমেন্ট ছিল না। খালি গলায় আমরা গান করেছি। আমাদের সঙ্গে দর্শকরা সবাই গলা মিলিয়েছে। আমরা এ ধরনের অনুষ্ঠান আরও করব।'

Comments

The Daily Star  | English

Sada Pathor Looting: Admin officials, law enforcers involved

Some government officials  including members of law enforcement agencies were involved in the rampant looting of stones from Bholaganj’s Sada Pathor area, found a probe committee of the Sylhet district administration.

7h ago