জাবিতে সচল অ্যাম্বুলেন্স ৫টি, শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন ২টি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পরিবহন অফিস বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট সচল অ্যাম্বুলেন্স আছে ৫টি। এদিকে, অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে যোগাযোগ করলে তারা বলছে, তাদের দায়িত্বে মাত্র ২টি পুরোনো অ্যাম্বুলেন্স আছে।
পরিবহন অফিসে পড়ে থাকা নতুন কেনা ২টি অ্যাম্বুলেন্স। ছবি: শেখ তাজুল ইসলাম তাজ/স্টার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পরিবহন অফিস বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট সচল অ্যাম্বুলেন্স আছে ৫টি। এদিকে, অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে যোগাযোগ করলে তারা বলছে, তাদের দায়িত্বে মাত্র ২টি পুরোনো অ্যাম্বুলেন্স আছে।

অপরদিকে প্রায় এক মাস ধরে জাবির পরিবহন অফিসে অব্যবহৃত পড়ে আছে নতুন কেনা ২টি অ্যাম্বুলেন্স। প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা নতুন ২টি অ্যাম্বুলেন্সের কথা জানেনই না।

ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের শিক্ষার্থী মেহেদী খান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তার এক সহপাঠী অসুস্থ হলে তাকে নিয়ে সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়া প্রয়োজন ছিল।

তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজনের কথা জানালে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, তাদের কাছে মাত্র ২টি অ্যাম্বুলেন্স আছে। 

চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শ্যামল কুমার শীল তখন তাকে বলেছিলেন, 'একটি অ্যাম্বুলেন্স একজন শিক্ষকের রিকুইজিশনে বাইরে গেছে। অন্যটি এনাম মেডিকেলে আছে।'

আজ বুধবার দুপুরেও প্রায় একই পরিস্থিতি ও উত্তরের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয় গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম তুহিন।

তুহিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ দুপুরে আমি বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন করি। তখন আমাকে বলা হয় মাত্র ২টি অ্যাম্বুলেন্স আছে। ২টিই কাজে আছে বলেছিল।'

সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসে গিয়ে দেখা যায়, ২টি নতুন অ্যাম্বুলেন্স সেখানে আছে। ধুলো জমেছে কাঁচের ওপর। 

জানতে চাইলে পরিবহন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক আলী আজম তালুকদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নতুন অ্যাম্বুলেন্স ২টি কেনা হয়েছে এ বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি। দুটিই সচল আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন মোট ৫টি অ্যাম্বুলেন্স সচল আছে।'

তবে এগুলোর মধ্যে ১টি অ্যাম্বুলেন্সের প্রায়ই মেরামতের প্রয়োজন হয় বলে জানান তিনি।

কেন নতুন ২টি অ্যাম্বুলেন্স ফেলে রাখা হয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিস ও মেডিকেল সেন্টার প্রধান একে অপরের অপরের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। 

প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. শামসুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা অনেকবার অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছি, মিটিং করেছি। কিন্তু তারা অ্যাম্বুলেন্স না দিলে আমি কি করতে পারি।'

অন্যদিকে অধ্যাপক আলী আজম তালুকদার বলেন, 'তারা কখনো আমার কাছে অ্যাম্বুলেন্স চাননি। আমাকে বলা মাত্র আমি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে দেবো।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিবহন অফিস চালক সংকট দেখানোর জন্য অ্যাম্বুলেন্স ফেলে রেখেছে। কিন্তু বর্তমানে ৮ জন চালক আছেন অ্যাম্বুলেন্সের জন্য। অন্যদিকে অ্যাম্বুলেন্স সচল আছে মাত্র ২টা।'

'চালক সংকট না থাকলেও, তারা ইতোমধ্যে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে,' বলেন তিনি।

প্রশাসনের এমন আচরণে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। পরিবহন অফিস কেন মেডিকেল সেন্টারকে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করতে দিচ্ছে না সে বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি রাকিবুল রনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিবহন অফিসের এ ধরনের আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অন্যান্য অংশীজনদের জীবনকে হুমকিতে ফেলার জন্য যথেষ্ট। কোন যুক্তিতে নতুন অ্যাম্বুলেন্স ২টি এতদিন ধরে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হচ্ছে না? কেনই বা অন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করতে ১ মাসেরও বেশি সময় লাগবে?'

'এসব অনিয়ম অবহেলা প্রমাণ করে শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্য নেই তাদের কাছে। এভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না,' বলেন তিনি। 

যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মঞ্জুরুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এই ধোঁয়াশার কারণ আমি এখনো জানি না। মেডিকেল প্রশাসন ও পরিবহন অফিসের একে অপরকে দোষারোপ ও এমন আচরণের বিষয়টি আমি মাত্রই জানলাম। আমি বিষয়টা দেখছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Cuet students suspend protests

Say authorities assured them of meeting their major demands

5h ago