যুক্তরাজ্যে স্কলারশিপ পেতে প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

ছবি: আইইইই.ওআরজি

অনেক শিক্ষার্থীর জন্য যুক্তরাজ্য স্বপ্নের দেশ হলেও, সবাই সে স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন না। যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য বেশ কিছু স্কলারশিপ থাকলেও অধিকাংশ মানুষ মনে করেন সেগুলো খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ এবং ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। স্কলারশিপের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় জড়িত, যা অনেকে জানেন না। এ বিষয়ে কিছু নির্দেশিকা আবেদন প্রক্রিয়ার জন্য সহায়ক হতে পারে।

দ্য ডেইলি স্টার ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের চতুর্থবারের মতো আয়োজিত ওয়েবিনারে অতিথি বক্তারা যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দেন এবং আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করেন। এ ছাড়া ওয়েবিনারে বক্তারা শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপের বিষয়ে বিভিন্ন ভুল ধারণাগুলো দূর করে তরুণদের সঠিক তথ্য জানান।

অধিবেশনের সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের বিড ম্যানেজার এবং ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন সার্ভিসের প্রধান সৈয়দ তীর্থ মাহমুদ। তার সঙ্গে আলোচনায় ছিলেন শেভেনিং স্কলার শুভাশীষ রায়, গ্রেট স্কলার মো. ঈশান আরেফিন হোসেন ও ব্রিটিশ কাউন্সিল উইমেন ইন স্টেম স্কলার উদ্ভাসিতা চক্রবর্তী।

তারা মর্যাদাপূর্ণ শেভেনিং, উইমেন ইন স্টেম ও গ্রেট স্কলারশিপের বিষয়ে আলোচনা করেন এবং যুক্তরাজ্যে আবেদন প্রক্রিয়া, জীবন-যাপন ও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের বিষয়ে কথা বলেন।

ওয়েবিনারে স্কলারশিপের আবেদন প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হয়, যেমন- একটি আবেদন সফল হওয়ার কারণগুলো কী। 

মো. ইশান বলেন, 'ভালো স্টেটমেন্ট অব পার্পাস (এসওপি), ভালো একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড এবং আইইএলটিএস স্কোর একটি আবেদনকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তোলে।'

শুভাশীষ বলেছেন, 'এসওপি লেখার ক্ষেত্রে সব সময় সাধারণ কথাবার্তার পরিবর্তে নিজের ধারণা থেকে লিখতে হবে। কোনো সমস্যার সমাধান কীভাবে করেন, সে বিষয়ে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোর উদাহরণ দিন। আপনার লক্ষ্য কী এবং কীভাবে সেটা অর্জন করতে চাচ্ছেন সে বিষয়ে ‍লিখুন।'

শুভাশিস আরও বলেন, 'নেটওয়ার্কিং একজন মানুষের ক্যারিয়ারের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ কারণে বিদেশে পড়ালেখা করতে গেলে আপনার নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের চমৎকার সুযোগ পাবেন।'

'যুক্তরাষ্ট্র একটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ এবং আপনি সেখানে আজীবনের জন্য বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারবেন। আপনি সেখানে খণ্ডকালীন চাকরি অথবা নতুন কোনো সুযোগ নিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমি সেখানে স্টার্টআপে মাস্টার্স করার সময় হেড অব মার্কেটিং হিসেবে কাজ করেছি। সেখানে এক হ্যালোউইন পার্টিতে একজন প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে আমার দেখা হয়। কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন এবং নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে সেটি খুব ভালো একটি সুযোগ ছিল', বলেন শুভাশিস।

'যুক্তরাজ্যে খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ রয়েছে। আমি একাডেমিয়ায় খণ্ডকালীন কাজ করেছি। বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি আবেদন করতে পারেন', যোগ করেন আরেফিন।

'নতুন দেশে যাওয়ার পর কালচারাল শক হয়, বিষয়টি মনে রাখা উচিত। সেখানে আবহাওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য একটি পরিবর্তন চোখে পড়ে।'

উদ্ভাসিতার জন্য, হোম সিকনেস ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তার মতে, এই ধরনের পরিস্থিতিতে আপনার সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন তা হলো সহায়তা। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েলবিয়িং সেন্টার আছে এবং বিদেশে জীবন-যাপনে কোনো অসুবিধা হলে তারা সেখানে যেতে পারেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের থাকার জায়গা আছে। আপনি চাইলে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিতে পারেন, অথবা যদি আরেফিনের মতো ভাগ্যবান হন, তাহলে আপনি আপনার ইচ্ছামতো সব সুযোগ-সুবিধাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে একটি আসন পেতে পারেন।

তারা অধিবেশন শেষে, যারা আবেদন করেছেন অথবা আবেদন করার চিন্তাভাবনা করছেন এমন শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু পরামর্শ দেন।

আরেফিন বলেন, 'নিশ্চিত করুন যে আপনার আবেদনে আপনার ব্যক্তিত্ব এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটেছে। একবার চেষ্টা করে দেখুন এবং প্রয়োগ করুন। আবেদন প্রক্রিয়ার সময়ই আপনি অনেক কিছু খুঁজে পেতে পারেন।'

তিনি আরও বলেন, 'যদি আপনার আগের কোনো রিসার্চ পাবলিকেশন থাকে, তবে আপনার এসওপির সঙ্গে সেগুলোর লিঙ্ক যোগ করুন। আপনার আবেদনটি পার্সোনালাইজড এবং ইতিবাচক হওয়া উচিত।'

আরেফিন ও উদ্ভাসিতা তাদের মাস্টার্স করছেন। শুভাশীষ জানান যুক্তরাজ্যে তার জীবন কেমন কেটেছে। 'আমি সেখানে নতুন এবং উদ্ভাবনী কিছু জিনিস শিখেছি এবং বাংলাদেশে ফিরে এসে সেগুলোর বাস্তবায়ন করেছি। এটি আমার বর্তমান চাকরিতে সাহায্য করে৷'
 

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

11h ago