৫৪৩ দিন পর আজ খুলছে স্কুল, আর নয় বন্দি জীবন

school_open_11sep21.jpg

করোনা মহামারির কারণে ৫৪৩ দিন বন্ধ থাকার পরে আজ খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর মতে, বাংলাদেশের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী মহামারির এ সময় শ্রেণীকক্ষের বাইরে ছিল।

শ্রেণীকক্ষে গাদাগাদি করে ক্লাস করায় শিশুরা করোনায় আক্রান্ত হতে পারে— এমন আশঙ্কার জায়গা থেকে দীর্ঘ বিরতির পরে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

শিক্ষার্থীদের জন্য এটি খুবই আনন্দের সংবাদ। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দূরশিক্ষণে অনেক শিক্ষার্থীকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। অনেকের ডিজিটাল যন্ত্র এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাও নেই।

মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সারতাজ হাবিব আয়ান বলে, 'আমি খুব খুশি, স্কুলে যেতে পারবো। বাসায় থাকতে আর ভালো লাগে না।'

তবে এই উচ্ছ্বাস কমে আসে যখন আয়ান জানতে পারে প্রথম থেকে চতুর্থ ও ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে এক দিন সশরীরে ক্লাস হবে। বাকি দিন তাদের অনলাইন ক্লাস নেওয়া হবে।

আয়ান বলেন, 'এক দিন খুবই কম সময়। স্কুল আমাদের আনন্দের জায়গা। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়। স্কুলে আমরা বেশি ভালো শিখতে পারি।'

মিরপুর ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী চৈতী বলেন, 'কোনো বিষয় বুঝতে না পারলে সে বিষয়ে অনলাইনে আমি পরিষ্কার ধারণা পাই না। নেটওয়ার্কের সমস্যা তো আছেই। আমি চাই শিগগির সশরীরে ক্লাস চালু করা হোক।'

তবে স্কুল-কলেজগুলো শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবে কি না অভিভাবকদের ভেতরে সেই উদ্বেগ থেকেই গেছে। তেমনই একজন শাহীনুর হোসেন। এখনই তিনি তার সন্তানকে শ্রেণীকক্ষে পাঠাতে রাজি নন। আরও এক-দুই সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করার পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকাল বলেছেন, বিদ্যালয় খোলার পর সংক্রমণ বাড়লে আবারও বন্ধ করে দেওয়া হবে।

করোনা সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসায় গত ৫ সেপ্টেম্বর সরকার পর্যায়ক্রমে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস চালু ঘোষণা দেয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্কুল ও কলেজ খোলার পর উচ্চ মাধ্যমিক ২০২১ ও ২০২২ সালের মাধ্যমিক এবং এ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার (পিইসিই) শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাস করবে। প্রথম থেকে চতুর্থ ও ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে এক দিন করে সশরীরে ক্লাস করবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কাছে স্বাস্থ্য নির্দেশনার সাধারণ পরিচালন পদ্ধতি (এসওপি) পাঠিয়েছে। স্কুলে ক্লাস শুরু হওয়ার পর নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে।

এই নির্দেশনায় প্রধান শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, সব শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মীদের সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকা এবং শ্রেণীকক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া, কোনো শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা অথবা কর্মীর করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

এ ছাড়া, শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে বা আইসোলেশনে থাকতে পারবে এবং তাদেরকে অনুপস্থিত হিসেবে গণ্য করা হবে না।

নির্দেশনায় শিক্ষকদের অনুরোধ করা হয়েছে, প্রতিটি ক্লাসের শুরুতে একটি অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেওয়ার জন্য। কোনো ছাত্র যেন ক্লাসের মাঝখানে বের হয়ে না যায়, সেটা নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে নির্দেশনায়।

এসওপি অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছে— তারা যেন যে কোনো ধরনের অসুস্থতার কথা শিগগির অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জানায়। কোনো জরুরি কারণ ছাড়া শ্রেণীকক্ষের বাইরে না যাওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

এসওপি অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, পরিবারের কোনো সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে যেন তারা শিগগির এই তথ্যটি প্রধান শিক্ষককে জানান। একইসঙ্গে, শিশুদের বাইরের খাবার খেতে নিরুৎসাহিত করার ওপরেও জোর দেওয়া হয়েছে এসওপিতে।

৫ সেপ্টেম্বর পুনরায় স্কুল খোলার সরকারি পরিকল্পনা ঘোষণা করার সময় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, সরকার স্কুল খোলার পর সার্বিক করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে কিনা সেটার ওপর ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য গত বছরের ১৭ মার্চ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বাতিল হয়ে যায় এবং প্রায় দেড় লাখ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৪ কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

এ বছরের মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতে সংক্রমণের হার বাড়তে থাকে এবং ২৪ জুলাই আগের সব রেকর্ড ভেঙে সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশে পৌঁছায়।

Comments

The Daily Star  | English

Commercial banks’ lending to govt jumps 60%

With the central bank halting direct financing by printing new notes, the government also has no option but to turn to commercial banks to meet its fiscal needs.

10h ago