খাল ভরাট করে বেপজার অর্থনৈতিক অঞ্চল

ছবি: রাজীব রায়হান/ স্টার

এক সময় যে জমিতে সারা বছরই চাষাবাদ হতো, এখন সেখানে বছরের বেশিরভাগ সময় কোনো ফসলই চাষ করতে পারছেন না চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ইছাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা ৫০ বছর বয়সী কৃষক বেলায়েত হোসেন।

শুধু বেলায়েত হোসেনই নন, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য শতবর্ষী ডাবরখালী খাল ভরাট করে ফেলায় হাজার হাজার কৃষক জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) এই খালটি ভরাট করেছে।

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কাছ থেকে ১ হাজার ১৫০ একর জমি লিজ নিয়েছিল বেপজা। সেখানে মাটি ভরাট করতে গিয়ে বেপজা ঐতিহ্যবাহী ডাবরখালী খাল ভরাট করে ফেলে।

খালটি কৃষিকাজে সেচ, মাছের উৎস, বর্ষার পানি নিষ্কাশনসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হয়। খরা মৌসুমে আশপাশের জমির চাষাবাদের জন্যও এই খালের পানির ওপর নির্ভরশীল কৃষকরা। খালটি ভরাটের ফলে স্থানীয় কৃষিকাজের বিরূপ প্রভাব পড়ৃছে। ক্ষতির মুখে পড়ছেন ইছাখালী ইউনিয়নের কৃষকরা।

এ ছাড়া, আগে এই খালের মাধ্যমে ওই এলাকার বর্ষার পানি সমুদ্রে চলে যেত। এখন খালের পানি প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ থাকায় বর্ষাকালে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ডাবরখালী খালের ২ কিলোমিটার অংশ ভরাট করে ফেলেছে বেপজা। সেখানে খালের কোনো অস্তিত্বই নেই। অর্থনৈতিক অঞ্চলের পূর্ব সীমানায় খালটিতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ফলে খালের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

ছবি: রাজীব রায়হান/ স্টার

স্থানীয় কৃষক শরীফ মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানকার জমিগুলো ৩ ফসলি ছিল। কিন্তু খালের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন এগুলো এক ফসলিতে পরিণত  হয়েছে। আমাদের জীবিকার প্রধান উৎস ছিল কৃষিকাজ। কিন্তু এখন আমরা বছরের বেশিরভাগ সময় বেকার। দিনমজুর হিসেবে কাজ করছি কখনো কখনো।'

ছালামত উল্লাহ নামের আরেক কৃষক বলেন, 'খালের পাশে আমাদের প্রায় ২ বিঘা জমি আছে। এক সময় এসব জমিতে মটর, খেসারি, গম, ধানসহ বিভিন্ন প্রকার ফসল চাষ করতাম। বছরে ৩ বার বিভিন্ন ফসলের চাষ হতো। কিন্তু এখন একবারও চাষ করতে পারি না। খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির অভাবে জমিগুলো অনাবাদি।'

খালটি পুনরায় খনন করার দাবিতে ইতোমধ্যে মানববন্ধন করেছেন ওই এলাকার কৃষকরা। দ্রুত খালটি আগের অবস্থান নিয়ে যাওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

মিরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, 'ডাবরখালী খালটি এই এলাকার মানুষের জীবন জীবিকার সাথে যুক্ত। বেপজা চাইলেই এ খাল ভরাট করতে পারে না। ডাবরখালীরে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। নয়তো জনগণকে নিয়ে আমরা আন্দোলনে নামব।'

প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী নদী, খাল, বিল, দিঘি, ঝরনা বা জলাশয়, বন্যাপ্রবাহ এলাকা এবং বৃষ্টির পানি ধারণ করে, এমন কোনো ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। অর্থাৎ সেগুলো ভরাট করা যাবে না।

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম বলেন, 'আইন অনুযায়ী খাল ভরাট করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। খাল ভরাটকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের মাস্টারপ্ল্যানে খালটি রয়েছে। খালটির জন্য ইতোমধ্যে স্লুইসগেট ও একটি সেতু করা হয়েছে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, `বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের মাস্টারপ্ল্যানে মাস্টারপ্ল্যানে খালটি রয়েছে। কিন্তু বেপজা অবৈধভাবে খালটি ভরাট করেছে। আমরা বেপজাকে খালটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে বলেছি।'

জানতে চাইলে বেপজার অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক হাফিজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অর্থনৈতিক অঞ্চলে মাটি ভরাটের জন্য খালটি ভরাট করা হয়েছে। তবে ডাবরখালী খাল আবার অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে।'

Comments