কুড়িগ্রামে গো-খাদ্যের চরম সংকট, খড়ের দাম দ্বিগুণ
বন্যায় খড় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ও তৃণভূমি এখনো পানিতে নিমজ্জিত থাকায় বন্যা উপদ্রুত এলাকায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও গঙ্গাধর নদীর চরাঞ্চলের কৃষকরা গবাদি পশু পালন নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সেতু পয়েন্টে ধরলাপাড়ে বসছে খড়ের হাট। প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি করা হচ্ছে খড়। সেখান থেকে নৌকায় খড় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ব্রহ্মপুত্রের চর এলাকায়। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে করে খড় আনা হচ্ছে।
খড় বিক্রেতা আব্দুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধরলাপাড়ে অস্থায়ী খড়ের হাটে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন ৬০-৭০ ট্রাক খড় আনা হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা তাদের কাছ খড় কিনে নৌকায় নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন চর এলাকায়।'
তিনি জানান, প্রায় ৪০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি খড়ের আঁটি ৭ টাকা দরে কিনে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ৮ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি ট্রাকে ১৮-২০ হাজার আঁটি আনা হচ্ছে।
'যেহেতু বেশি দামে খড় কিনছি সেহেতু বেশি দামে বিক্রি করছি,' যোগ করেন তিনি।
খড়ের খুচরা বিক্রেতা সান্টু মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিটি নৌকায় ১০-১২ হাজার খড়ের আঁটি পরিবহন করা যায়। চরাঞ্চলে কৃষকদের কাছে প্রতি আঁটি খড় ১০-১১ টাকা দরে বিক্রি করছি। বেশি দামে খড় কিনছি। নৌকা ভাড়াও বেড়ে গেছে। তাই বেশি দামে খড় বিক্রি করছি।'
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের যাদুরচর এলাকার বন্যাদুর্গত কৃষক মোখলেছুর রহমান (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, '৩টি খড়ের গাদা বন্যার পানিতে প্রায় ১২ দিন ডুবেছিল। অধিকাংশ খড় নষ্ট হয়ে গেছে। বাড়ির আশপাশের তৃণভূমি এখনো বন্যার পানিতে ডুবে আছে। গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।'
তিনি ৫টি গরু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন উল্লেখ করে আরও বলেন, 'বন্যার আগে প্রতিটি খড়ের আঁটি ৪-৫ দরে কিনেছিলাম। এখন তা ১০-১১ টাকা। খড়ের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় হতাশ।'
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের চর পার্বতীপুর এলাকার বন্যাদুর্গত কৃষক সোলেমান আলী (৫৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিটি গরুর জন্য প্রতিদিন গড়ে ৫-৭ কেজি খড় লাগে। ঘাসের সরবরাহ থাকলে ২ কেজি খড় দিয়ে চালিয়ে নেওয়া যায়। এত বেশি দামে খড় কিনে গরু পালন সম্ভব হচ্ছে না।'
তিনি ৬ গরুর মধ্যে ৩টি বিক্রি করে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে ১৭ লাখ গরু-মহিষ ও ১৫ লাখ ছাগল-ভেড়া রয়েছে। চরাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে একাধিক গরু-ছাগল আছে। গবাদি পশু তাদের আয়ের প্রধান উৎস। ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় ২ জেলার বন্যাদুর্গত কৃষকদের গো-খাদ্য কেনার জন্য ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে এবং এর বিতরণ চলমান আছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যাদুর্গত কৃষকরা গবাদি পশু পালন নিয়ে মহাসংকটে আছেন। অধিকাংশ এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও নতুনভাবে ঘাস জন্মাতে প্রায় ২ মাস সময় লাগবে।'
Comments