কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাটে বন্যায় ১৩৪ কোটি টাকার ফসলহানি

বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান হচ্ছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষিতে। ২ জেলায় ২৪ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রায় ১৬ হাজার ৩৮৩ হেক্টর জমিতে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৪ কোটি টাকা।
কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাটে বন্যায় ২৪ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ছবি: স্টার

বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান হচ্ছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষিতে। ২ জেলায় ২৪ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রায় ১৬ হাজার ৩৮৩ হেক্টর জমিতে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৪ কোটি টাকা।

এসব তথ্য জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগ আরও জানায়, বন্যায় আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, বাদাম ও বিভিন্ন সবজির ক্ষতি বেশি হয়েছে।

কুড়িগ্রামের রৌমারীর ব্রহ্মপুত্রপাড়ের কৃষক সহিদার রহমান। তিনি ৫ বিঘা জমিতে আউশ ধান ও এক বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছিলেন। বন্যায় তার সব ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে তিনি প্রায় ৭৫ হাজার টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার কোনো অবস্থা তার নেই।

সহিদার রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি ঋণ নিয়ে ফসল আবাদ করেছিলেন। ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন আর কীভাবে সংসার চালাবেন, এসব নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

আগাম বন্যা হওয়ায় তার কোনো প্রস্তুতিও ছিল না বলে জানান তিনি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তাপাড়ের কৃষক আফজাল হোসেন। তার ৩ বিঘা জমির আউশ ধান, ৪ বিঘা জমির সবজি, বাদাম ও ভুট্টা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে তিনি দেড় লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। কীভাবে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন, তা ভেবেই দুশ্চিন্তায় কাটছে তার দিন।

ছবি: স্টার

আফজাল হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, বন্যা তাকে অসহায় করে তুলেছে। আউশ ধান ঘরে তোলার আগেই বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। ফসল চাষের জন্য তিনি এনজিও থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। আগামীতে কীভাবে সংসার চালাবেন আর কীভাবে ফসল চাষাবাদ করবেন, তা ভেবে হতাশ হয়ে পড়েছেন তিনি।  

কৃষি বিভাগ জানায়, কুড়িগ্রামে বন্যায় ১৫ হাজার ৫০০ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল। সবমিলিয়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১২৮ কোটি টাকা। লালমনিরহাটে ২০১ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৮২ হেক্টর জমির ফসল। এ জেলায় সবমিলিয়ে ক্ষতি হয়েছে ৬ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৮ হাজার ৫০০ জন।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুর রশিদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যায় কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সেটা এখনো জানায়নি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে প্রণোদনা হিসেবে সার, বীজ বিতরণ চলমান রয়েছে।'

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা পুনর্বাসন সহায়তা না পেলে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন না বলেও জানান তিনি।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অধিকাংশই ঋণ নিয়ে ফসল চাষ করেছিলেন।'

এসব কৃষকদের পুনর্বাসনে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তিনি।  

Comments