শ্যামনগরে খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে ৪ গ্রাম প্লাবিত
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারে দেড়শ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে উপকূলের চারটি গ্রাম লোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। আরও অন্তত ৩টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে দুর্গাবাটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের পাশে উপকূল রক্ষা বাঁধের দেড়শ' ফুটেরও বেশি অংশ খোলপেটুয়া নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাবাটি গ্রামের পার্থ মণ্ডল ও বাপী মণ্ডল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এর আগে গতকাল বিকেল ৫টার দিকে পূর্ব দুর্গাবাটি এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধের অংশ সাইক্লোন শেল্টার সংলগ্ন অংশ মারাত্মকভাবে ধসে নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
এরপর রাত ৮টার দিকে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল হক ও বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে স্থানীয় গ্রামবাসী বাঁধটি যাতে ভেঙে না যায় সেজন্য মেরামতের কাজ শুরু করেন।
বুড়িগোলিনী ইউপি চেয়ারাম্যান নজরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বাঁধটি মেরামতের জন্য কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু রাত ১০টার দিকে প্রবল জোয়ারে বাঁধ ভেঙে যায়। দেড়শ মিটার বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে।'
সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যেই পূর্ব দুর্গাবাটি, পশ্চিম দুর্গাবাটি, পূর্ব পুড়াকাঠলা ও পশ্চিম পুড়াকাঠলা গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দাতিনাখালি গ্রামেও পানি ঢোকা শুরু করেছে। এছাড়া মাদিয়া ও আড়পাঙ্গাসিয়া গ্রামও পানিতে তলিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
প্লাবিত হওয়া গ্রামগুলোর কয়েকশ চিংড়ি ঘের ও কাঁকড়া খামার ইতোমধ্যেই পানিতে তলিয়ে গেছে।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য নীলকান্ত রপ্তান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাঁধের ওই ঝুঁকিপূর্ণ অংশটি দীর্ঘদিন ধরে মেরামত করার কথা বলছিল। এজন্য বরাদ্দও রাখা হয়েছিল। গতকাল বিকেলে বাঁধের একটি অংশ ধসে গেলে স্থানীয়রা সন্ধ্যার পর জেনারেটরের আলো জ্বালিয়ে বাঁধে মাটি দিতে শুরু করে। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। রাত ১০টার দিকে পুরো বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।'
ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, '২০২১ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এই এলাকায় আঘাত করে। সেই ক্ষতি এলাকার মানুষ এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এই এলাকার মানুষের প্রধান পেশা চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষ। মাত্র ৩ মাস আগে ধারদেনা করে স্থানীয়রা নতুন করে ঘের প্রস্তুত করে চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষ শুরু করে। কোনো কোনো ঘের মালিক সবে চিংড়ি বিক্রি শুরু করেছেন। এমন সময় বাঁধ ভেঙে সব একাকার হয়ে গেছে। এতে করে কয়েকটি গ্রামের মানুষের দুদর্শার শেষ থাকবে না।'
'ইতোমধ্যে আড়াই হাজার বিঘা আয়তনের হাজারখানেক চিংড়ি ঘের ও কাঁকড়া খামার পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানান সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ডালিম ঘোরামি।
বাঁধ মেরামতের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শ্যামনগর উপজেলার শাখা কর্মকর্তা মাসুদ রানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাঁধ মেরামতের সরঞ্জাম সংগ্রহ শুরু হয়েছে। আশা করছি, আগামীকাল শনিবার থেকে কাজ শুরু করতে পারবো।'
বাঁধের ওই অংশটি মেরামতের জন্য কোনো বরাদ্দ ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।
Comments