শীতলক্ষ্যায় জাল ফেললেই ‘সাকার ফিশ’

ছবি: সনদ সাহা/ স্টার

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর পারে তিন কাটার (সাকার ফিশ) মাছ দেখতে শিশুসহ সাধারণ মানুষ ভিড় করছেন।

আজ বুধবার বিকেলে নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরছিলেন জামাল জুট বেলিং এন্ড কোং এর শ্রমিক ফিরোজ মিয়া।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'নদীতে মাছ ধরতে আইছি কিন্তু মাছ নাই। শুধু আছে এ তিন কাটার (সাকার ফিশ) মাছ। কোথায় থেকে যে এই মাছ আইলো! যেদিকে জাল মারি সেই দিকেই এ মাছ! জাল ফেললে শুধু এ তিন কাটার মাছ আসে।'

তিনি আরও বলেন 'এই তিন কাটার মাছগুলো নদী নষ্ট করে দিছে। এগুলো মানুষ খায় না। আবার মরেও না। মাছগুলো ৬ ঘণ্টা শুকনায় (নদী থেকে উপরে তীরে) ফালাই রাখলেও মরে না। প্রতিবার জাল ফেললেই শুধু এই মাছ। একেক বারে ৩ থেকে ৪ কেজি মাছও আসে। এগুলো এর থেকে বড়ও আছে।'

ছবি: সনদ সাহা/ স্টার

এসময় আঙ্গুল দিয়ে নদীর বিভিন্ন দিকে দেখিয়ে ফিরোজ মিয়া বলেন, 'ওইসব দিকে জাল ফেললে ২ থেকে ৩ কেজি করে এ তিন কাটা (সাকার ফিশ) পাওয়া যায়। তাই এদিকে চলে আসছি।'

'৪ বছর ধরে নদীতে এ মাছ অসংখ্য পরিমাণে বেড়ে গেছে। দুপুর ১টায় মাছ ধরতে আসছি কিন্তু এখনও পর্যন্ত ১০০ টাকার মাছও পাইনি। কিন্তু ৪ বছর আগেও অনেক মাছ পাওয়া যেত। তখন শিং, টাকি, চিংড়ি, বাইলা এগুলো পাওয়া যেত। এখন এই তিন কাটা (সাকার ফিশ) মাছ ছাড়া আর কিছু পাই না। জাল উঠলে এগুলো আবার নদীতে ফেলে দেই,' বলেন তিনি।

এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই আবারও নদীতে জাল ফেলেন ফিরোজ মিয়া। কিছুক্ষণ পর নদী থেকে জাল তুলে এনে দেখান অনেক গুলো সাকার ফিশ জালে আটকে আছে। জাল থেকে ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করতে করতে তিনি বলেন, 'এমন একটা মাছ সহজে জাল থেকে ছাড়া যায় না। তিন কাটার জন্য আটকে থাকে। এগুলো জাল ছিড়ে বেশি।'

ফিরোজ মিয়ার ফেলে দেওয়া সাকার ফিশগুলো নিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে হাজীগঞ্জ খেয়াঘাটে রেখে বিক্রি করার চেষ্টা করছিল সৌরভ ও শোয়েব।

তারা জানায়, ১ ঘণ্টা ধরে বসে থাকলেও কেউ এই মাছের দামও জিজ্ঞাসা করে না। জেলেরা প্রতিদিন এ মাছ ধরে। কিন্তু সেগুলো তারা সেখানে ফেলে রেখেই চলে যায়।

এসময় নদী পার হওয়া যাত্রী ইব্রাহিম মিয়া প্রতিবেদককে বলেন, 'কেউ এ মাছ খায় না। এগুলো অ্যাকুরিয়ামে সাকার ফিশ। এগুলো থাকলে নদীতে আর কোনো মাছ থাকবে না।'

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আয়নাল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাকার ফিশটা আমাদের দেশের মাছ না। এই মাছ খাবার উপযোগী না। এটা আমাদের দেশের নদীগুলোতে চলে এসেছে। বুড়িগঙ্গা নদীর কেরানীগঞ্জসহ কিছু কিছু এলাকায় এটা বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এটা অ্যাকুরিয়ামে ছিল। কিন্তু কোনোভাবে নদীতে চলে গেছে। এ ব্যাপারে আমাদের অনেক পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। মৎস অধিদপ্তর থেকেও আমাদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিচ্ছে। কেউ যেন এটার চাষ না করে। অ্যাকুরিয়ামে যারা করে তারা যেন অ্যাকুরিয়ামেই করে। নদীতে যেন না ছাড়ে।'

তিনি বলেন, 'এর ফলে নদীর জীব বৈচিত্রের উপর একটা প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে অন্য মাছের খাবার খেয়ে নেয়, ছোট মাছের ডিম খেয়ে নেয়, এছাড়াও নদীর অন্যান্য উপাদনও খেয়ে ফেলে। তাই সবাইকে বলবো যাতে কেউ অ্যাকুরিয়াম থেকে নদীতে না ফেলে। আর জেলেদের জালে সাকার ফিশ ধরা পড়লেও যেন মেরে ফেলে।'

এদিকে নদীতে মাছ না পাওয়ায় অর্থকষ্টে ভুগছেন জেলেরা। ফিরোজ মিয়া জানান, 'আমার মেয়ের কলেজে ভর্তির জন্য টাকা প্রয়োজন। যার জন্য প্রতিদিনই নদীতে জাল ফেলছি। কিন্তু মাছ পাই না। মূলত সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পাটের কাজ করি। তারপর জেল ফেলে মাছ ধরি। এ মাছের জন্য এখন এমনও দিন যায় মাছ ছাড়াই বাসায় যাই।'

Comments

The Daily Star  | English

Rising tea prices bring new life to northern growers

Better rates, higher yields, and improved quality are revitalising tea cultivation

11h ago