পদ্মার কোল জুড়ে সারি-সারি ইটের ভাটা, বিপন্ন নদী- পরিবেশ

ইট ভাটার জন্য কাটা হচ্ছে চরের মাটি, পরিবহনের জন্য নদীতে বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ
ইটভাটগুলো নদী ও পরিবেশকে দূষিত করছে। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নে পদ্মার কোলের পাড়ে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে গড়ে উঠেছে সারি সারি ইটের ভাটা। অভিযোগ উঠেছে, নদী পাড়ের চর থেকে ইট বানানোর জন্য মাটি কেটে সাবাড় করছে ইটভাটা সংশ্লিষ্টরা। শুধু তাই নয়, মাটি পরিবহনের জন্য পদ্মার কোল জুড়ে নদীতে বাঁধ দিয়ে গড়ে তুলেছে একাধিক অবৈধ রাস্তা।  

স্থানীয়দের অভিযোগ, ইট ভাটার কারণে এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি বিপন্ন হচ্ছে মূল নদীর শাখা পদ্মার কোল। স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় এভাবে প্রকৃতি ও পরিবেশের ধ্বংস করা হলেও দেখার কেউ নেই। ইটভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাচ্ছেন না তারা।

ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/ স্টার

সরেজমিনে দেখা যায়, লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের নবীনগর থেকে চর কুরুলিয়া পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাড় দিয়ে পদ্মার কোলের পাশেই কয়েক বছরেই গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক ইটের ভাটা।

লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম জিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১৪ সাল থেকে লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নে পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ইট ভাটা স্থাপনের কাজ শুরু হয়। চরের মাটি দিয়ে ইট বানানো লাভজনক হওয়ায় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই প্রভাবশালীরা ৫১টি ইট ভাটা গড়ে তুলেছে। এসব ভাটার অধিকাংশেরই নেই বৈধ অনুমোদন।'

ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/ স্টার

তিনি বলেন, 'কয়েকটি ভাটা বন্ধ হয়ে গেলেও এ বছর ৩৯টি ভাটা চালু আছে, এসব ভাটায় ইট বানানোর জন্য মাটির যোগান দিতে পদ্মার চর থেকে দিন রাত এক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে চলছে চরের ফসলি জমি নষ্ট করে মাটি করার মহোৎসব।'

মাটি পরিবহনের জন্য পদ্মার কোলের বিভিন্ন পয়েন্টে মাটির বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করে ট্রাক, ট্রাক্টর দিয়ে মাটি পরিবহন করা হচ্ছে।

লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের দাদপুর, লক্ষ্মীকুণ্ডা, নবীনগর ও চর কুরুলিয়ায় নদী বন্ধ করে নির্মাণ করা হয়েছে ইট ভাটার মাটি পরিবহনের রাস্তা।

ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/ স্টার

জিয়া বলেন, 'এসব রাস্তা দিয়ে নদীর চরের মাটি ভাটায় পরিবহন করা হচ্ছে।'

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রবহমান নদীতে এভাবে বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা যায়না। এতে করে নদীতে বাধার সৃষ্টি হয় এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়। ফলে নদীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পরে।'

বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের পাবনা জেলার সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদীতে বাঁধ দিয়ে ইট ভাটার মাটি পরিবহনের জন্য রাস্তা নির্মাণ করে প্রকৃতপক্ষে একটি অপরাধ কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে প্রভাবশালীরা।'

শুধুমাত্র নদীতে বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করে নদীর ক্ষতি করা হচ্ছে তা নয় বরং ক্রমাগত নদীর চর থেকে মাটি কেটে সাবাড় করে ফেলায় নদী তীরের ফসল আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। অবিলম্বে এসব অপরাধযজ্ঞ বন্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসনকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। 

লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নে নিয়মবহির্ভূত গড়ে উঠা এসব ইট ভাটার কারণে এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে তাই পরিবেশ রক্ষায় নিয়মতান্ত্রিক ভাবে ইট ভাটা গড়ে তোলার দাবি স্থানীয়দের।

ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/ স্টার

লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জিয়া বলেন, 'এসব ইট ভাটাগুলোর অধিকাংশেরই নেই বৈধ কাগজপত্র। সরকার যদি কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে ইটভাটার অনুমোদন দেয় তাহলে এসব ভাটার সংখ্যা আপনাআপনি কমে যাবে।'

পাবনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লা আল মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইটভাটাগুলোর বৈধতা যাচাই বাছাইয়ের জন্য কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন।'

পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিএসটিআই এর যথাযথ অনুমোদন দিয়ে ইট ভাটা চালানো হচ্ছে কি না তা যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া অভিযোগ পেলেই অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে, কয়েকজনকে সাজাও দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Riyad-led gang forcibly took cheques of Tk 5cr from another ex-AL MP

The cheques police recovered from the house of Riyad worth around Tk 2.25 crore belonged to former AL lawmaker Abul Kalam Azad

1h ago