‘বঙ্গবন্ধুর আগামী জন্মদিনের আগেই ঢাকার নদীগুলো দূষণমুক্ত হবে’

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আগামী জন্মদিনের আগেই ঢাকার আশেপাশের নদীগুলো দূষণমুক্ত করা হবে। এই কাজে সিটি করপোরেশনসহ কেউ বাধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'ঢাকার আশেপাশের প্রায় ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে সব নদী দূষিত। খালগুলো হয়ে গেছে নর্দমা। এই নদীগুলোর দূষিত পানির কারণে রাজধানীর লোকজন নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং আরও অনেকে আক্রান্ত হবেন। এখান থেকে মুক্তির যে পদ সেই পদে কেউ আগাচ্ছে না। দূষণের জন্য তেমন কোনো মামলা হচ্ছে না।'
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন শুধু সুপারিশ করতে পারে কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষমতা তো কমিশনের নেই। এমন চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে আপনি কীভাবে এক বছরে নদীগুলো দূষণ মুক্ত করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে এটা আমি স্বীকার করছি। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কাজ করা যায়। যেমন, চাঁদপুরে মেঘনাতে যেখানে ইলিশের অভয়ারণ্য সেখানে প্রায় ৩০০ এর মতো ড্রেজার, বাল্কহেড ও নৌযান নিয়ে বালু উত্তোলন করা হতো। জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলেছিলাম তাদের উৎখাত করতে হবে। তাদের ২ দিন লেগেছে উৎখাত করতে। অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। আবার অনেকেই পালিয়ে গেছেন।'

নদী রক্ষায় কেউ বাধা দিতে পারবে না জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের কাজে একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী (নারী) বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এখনো তিনি বাধা দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি এবং বড় ধরনের সফলতা পেয়েছি। আমরা যে কাজ করেছি গত ১৯ বছরে এমন কাজ কেউ করতে পারেননি।'
তিনি বলেন, 'মেঘনায় সামাজিক, আর্থিক ও পরিবেশগত কী ক্ষতি হয়েছে তা নির্ধারণ করতে আমরা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসনসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে। ১৪ কর্ম দিবসের মধ্যে তাদেরকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আমরা এসব তথ্য দুদককে জানাবো। কারা এসবের সঙ্গে জড়িত, কারা ডিও লেটার দিয়ে মদদ দিয়েছেন তাদের সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
দূষণ প্রতিরোধে ১০ বছর আগে হাইকোর্টের নির্দেশনার পরেও তেমন কোনো কাজ দৃশ্যমান হয়নি এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'আমরা বিভিন্ন নদী জরিপ করছি। দূষণ নিয়ে তেমন কোনো কাজ না হওয়ায় দূষণকারীরা পার পেয়ে যাচ্ছেন। ওয়াসা ও সিটি করপোরেশন এই দূষণের পেছনে অন্যতম দায়ী। আমাদের এই শহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আমাদের একজন মন্ত্রী দেখলাম দূষণ বন্ধে কিছু উদ্ভট কথা বলছেন যা কার্যকর নয়। তারা সেফটিক ট্যাঙ্কের কথা বলেন যা আসলে সম্ভব নয়।'
বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য নদী দূষণ করছে, তা প্রতিরোধে আপনারা কী উদ্যোগ নেবেনে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'বিভিন্ন কারখানা যারা বর্জ্য পরিশোধন করার জন্য শোধনাগার বা ইটিপি প্লান্ট করেছেন সেইসব প্লান্টের সক্ষমতা অনেক কম। যারা এই প্লান্ট ডিজাইন করেছেন তাদের জবাবদিহিতার আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আমি আশা করি সবাই আইন মেনে চলবে। আইনের প্রয়োগ করতে হবে। এখন আর দূষণ মাপার দরকার নেই। নদী দেখলেই মনে হয় এগুলো দূষিত।'
ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, '২০২৩ সালের ১৭ মার্চের মধ্যেই নদীর পানি দূষণমুক্ত করবো বলে আশা করছি। তবে খালগুলো এই সময়ের মধ্যে দূষণমুক্ত করা সম্ভব না। এই দূষণমুক্ত করতে গিয়ে যারা বাধা দেবেন, অসহযোগিতা করবেন তাদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করবো। মেয়র, ওয়াসা, পৌরসভা, ইউনিয়ন কাউন্সিল, বিভিন্ন কোম্পানি কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার যে ব্যবস্থা তা আমি নেব। আমি জনমত গড়ে তুলবো। জনতার আদালতে তাদের আমি তুলে ধরবো।'
Comments