অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ছে গৃহহীনের সংখ্যা

প্রতীকি ছবি

শুনলে অনেকেই অবাক হবেন এবং অনেকে হয়তো বিশ্বাসও করতে চাইবেন না যে, পৃথিবীর অন্যতম উন্নত দেশ অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে বিপুল সংখ্যক গৃহহীন মানুষ।

দেশটির সর্বশেষ আদমশুমারির (২০১৬) পরিসংখ্যান অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ায় গৃহহীন মানুষ রয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার। তারা ঘুমান ফুটপাতে, ফ্লাইওভারের নিচে, শপিংমলের সিঁড়িতে, পার্কে এবং 'ঝুঁকিপূর্ণ' বাসভবনে। প্রতি রাতে অন্তত ২০০ জন অস্ট্রেলিয়ান ঘুমানোর জন্য নিরাপদ জায়গা খোঁজেন।

অস্ট্রেলিয়ার ২ কোটি ৫০ হাজার জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজার গৃহহীন মানুষের জীবনের নিদারুণ গল্পগাঁথা এতদিন প্রায় অন্তরালেই ছিল। দেশটিতে করোনার আঘাত এবং তা নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকারগুলো যখন হিমশিম খাচ্ছিল তখনই আলোচনায় আসে গৃহহীন মানুষ ও তাদের যাপিত জীবন।

দেশের সব নাগরিককে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনার সঙ্গেই উঠে আসে রাস্তায় ঘুমানো মানুষের নামের তালিকা।

তারা যেন করোনা টিকা নিতে পারেন সেজন্য যৌথ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ওয়েসাইড চ্যাপেল ও কারকিটন রোড সেন্টার।

তারা বলছে, গৃহহীনদের মাধ্যমে কমিউনিটিগুলোতে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার বড় ঝুঁকি রয়েছে।

কারকিটন রোড সেন্টারের পরিচালক ড. ফিলিপ রিড বলেন, 'গৃহহীনদের জন্য টিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অসহায় জনগোষ্ঠীগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এটা জরুরি।'

তিনি আরও বলেন, 'সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য এই মানুষগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ তাদের সুনির্দিষ্ট কোথাও ঘুমানোর জায়গা নেই। পুরো নগরী জুড়েই তারা বাস করছেন।'

অস্ট্রেলিয়ান পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেব অনুযায়ী ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় সাড়ে ৭ মিলিয়নেরও বেশি অভিবাসী বাস করছে। যা অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ। তাদের জন্ম অস্ট্রেলিয়ার বাইরে। অস্ট্রেলিয়া বিশাল এই অভিবাসীদের বিভিন্ন ধরণের সুযোগ সুবিধা দিয়ে বসতি স্থাপন নিশ্চিত করেছে। তাদের কারো নাম নেই গৃহহীনদের তালিকায়।

'অস্ট্রেলিয়ান হোমলেস মনিটর' ২০২০ সালে একটি স্বাধীন ও তথ্যমূলক জরিপ করে। তাদের বিশ্লেষণে উঠে আসে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের গৃহহীন হওয়ার কারণ। পারিবারিক ভাঙ্গন, মানসিক অসুস্থতা, যৌন নিপীড়ন, মাদকাসক্তি, আর্থিক সমস্যা, অসুস্থতা, জুয়া ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এর মূল কারণ। অনেক সময় কেউ নতুন এলাকায় চলে গিয়ে চাকরি হারানোর কারণে অথবা কোনো সহায়তা না পাওয়ার কারণে গৃহহীন হয়েছেন অনেকে।

অস্ট্রেলিয়ান হোমলেস মনিটর বলছে, পারিবারিক সহিংসতা অস্ট্রেলিয়ায় গৃহহীন হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ। এর বেশির ভাগ শিকার নারীরা।

কয়েক সপ্তাহ আগে অনুষ্ঠিত জাতীয় নারী সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন স্বীকার করেছেন, 'পারিবারিক সহিংসতা কোনো নতুন সমস্যা নয়। কিন্তু অনেক কিছু পরিবর্তিত হওয়া সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়ায় বছরের পর বছর এই সমস্যা একই রকম রয়ে গেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'অস্ট্রেলিয়া পারিবারিক সহিংসতা থেকে নারীদের রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ কাজ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ দেশে এখনও এমন সংস্কৃতি রয়েছে যা লিঙ্গ বৈষম্যের অজুহাতকে সমর্থন করে এবং বৈধতা দেয়।'

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নারীদের সঙ্গে তাদের ছোট সন্তান থাকে এবং তারা কর্মসংস্থান ও বাসা ভাড়া নিয়ে বিপাকে পড়েন। এ ছাড়াও সামাজিক সহায়তার অভাব নারীদের গৃহহীন হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে ফেলে।

অস্ট্রেলিয়ায় গৃহহীনদের এক-তৃতীয়াংশের বয়স ১৮ বছরের কম। তারা অভিভাবকদের সঙ্গে বাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। নিজেদের ঘর ভাড়া দিয়ে থাকার সামর্থ্য নেই বলেই রাস্তায় ঘুমানো ছাড়া তাদের আর কোনো বিকল্প থাকে না।

এ ছাড়াও সুবিধা বঞ্চিত আদিবাসীদের একটি বড় অংশ তাদের পূর্ব পুরুষদের বাসস্থান অস্ট্রেলিয়ায় এখন গৃহহীন।

গৃহহীন মানুষ নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো বলছে, গৃহহীন হওয়ার কারণ যাই হোক না কেন, আমরা অস্ট্রেলিয়ায় কাউকে রাস্তায় ঘুমাতে দিতে পারি না। অবিলম্বে ফেডারেল সরকারের উচিত তাদের আশ্রয় খুঁজে দেওয়া।

অস্ট্রেলিয়া জুড়ে বিভিন্ন বেসরকারি এজেন্সি গৃহহীনদের আবাসন, কর্মসংস্থান ও খাদ্য সরবরাহের জন্য কাজ করছে। তারা সরকারের কাছ থেকে তহবিল নিয়ে থাকে। তাদের আশংকা, চলমান করোনা মহামারি অস্ট্রেলিয়ায় গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বাড়িয়ে দেবে।

অস্ট্রেলিয়ান হোমলেস মনিটরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেনি স্মিথ এসবিএস নিউজকে বলেছেন, এরই মধ্যে গৃহহীনের সংখ্যা ১৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। আমাদের পরিষেবা নিতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ আসছেন।

তিনি আরও বলেছেন, আমরা এমন মানুষ দেখছি যারা মহামারির কারণে চাকরি হারিয়েছেন।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Police, Bida launch special security measures for foreign investors

Held meeting with officials of foreign companies, introduced dedicated emergency contact line

1h ago