চিজ কেকের কেচ্ছা

তখন আমি নিউইয়র্কে নতুন। দামী কোনো খাবার কিনে খাওয়ার সামর্থ্য ছিল না। অবশ্য, এখনো নেই। ম্যানহাটনের রাস্তায় হাঁটতাম আর ঝলমল করা নিউইয়র্ক শহর আর এই শহরের ঝলমলে মানুষ দেখতাম।
রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় কাঁচে ঘেরা দামী রেস্টুরেন্টে সুযোগ বুঝে উঁকি মারতাম আর অপূর্ব সব খাবার দুচোখ ভরে দেখতাম।
বিধাতা করুণাময়। তিনি আমার দুঃখ দেখে চুপ করে বসে রইলেন না। আমার এক শ্রদ্ধেয় রুমমেট ম্যানহাটনের একটি দামী রেস্টুরেন্টে চাকরি করতেন। বিধাতা তার হাত দিয়ে আমাদের সব রুমমেটের জন্য পাঠিয়ে দিলেন বিশাল সাইজের এক 'চিজ কেক'।
যিনি আমাদের জন্য কেকটি এনেছেন তিনি আমাকে ও আরেক রুমমেট সংগ্রাম দা'কে বললেন, 'দেরি করো না। চিজ কেক এনেছি, খেয়ে ফেলো। দেরি করলে নষ্ট হয়ে যাবে।'
আমি দেরি করতে যাব কোন দুঃখে? গোগ্রাসে চিজ কেক খাওয়া শুরু করলাম। আমার খাওয়ার গতি দেখে সংগ্রাম দা'ও খাওয়ার গতি বাড়িয়ে দিলেন।

পুরোটা সাবাড় করে কোনো রকম একটু শুয়েছি। একটু পরেই আমার টয়লেটে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে গেল। এতবার যাওয়া করলাম যে, শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম, টয়লেট থেকে আর বের হবো না।
আমি তো লজ্জায় শেষ। মনে মনে ভাবলাম, কুকুরের পেটে তো আর ঘি সয় না। এত দামি চিজ কেক আসলে আমার মতো গরীবের জন্য না।
একটু পর সংগ্রাম দা রীতিমতো সংগ্রাম করে আমাকে টয়লেট থেকে বের করলেন। এরপর দেখলাম তিনিও টয়লেটে বসে সংগ্রাম করছেন। বের হওয়ার পর জিজ্ঞেস করলাম, 'ভাই, আপনার কি পেট খারাপ?' তিনি কোনো উত্তর দিলেন না।
একটু পর দেখি তার অবস্থা আমার চেয়েও খারাপ। শেষ পর্যন্ত লজ্জিত ভঙ্গিতে স্বীকার করলেন যে তার পেট খারাপ।
পরিস্থিতি অনুধাবন করে আমরা ঐক্যমত্যে পৌঁছালাম যে, আসলেই আমাদের পেটে ঘি হজম হচ্ছে না এবং ব্যাপারটি অন্য রুমমেটদের কাছে চেপে যাব।

একটু পর আমাদের আরেক রুমমেট বাসায় ঢুকলেন। আমরা ফ্রিজ খুলে সম্মিলিতভাবে তাকে চিজ কেক খাওয়ার প্রস্তাব দিলাম। তিনি চিজ কেকটা একটু ভালো করে দেখেই বললেন, 'এই পচা কেক কে এনেছে? নিশ্চয়ই বল্টু দা (ছদ্ম নাম)।'
আমরা সমস্বরে বললাম, 'ইয়েস।'
তিনি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বল্টু দা'কে বললেন, 'দাদা, আপনাকে না বলেছি রেস্টুরেন্ট থেকে এক্সপায়ার্ড খাবার আনবেন না। এগুলো খেলে আপনি নিজেও মরবেন, অন্যদেরও মারবেন।'
এ কথা শোনার পর আমার আর সংগ্রাম দা'র মনে স্বস্তি ফিরলো। আর যাই হোক, পেটে ঘি না সওয়া প্রাণীটা আমরা নই।
Comments