‘বিশ্ব অর্থনীতির উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি বাংলাদেশ’

'স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতির এক অন্যতম উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।'
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে স্পেনের বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত 'বাংলাদেশ@৫০: ইমারজিং বাংলাদেশ ইকোনমি: রিফ্লেকশন অন দ্য স্পেন-বাংলাদেশ রিলেশনস' শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ মন্তব্য করেন।
গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় দুপুরে স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদের সভাপতিত্বে ও দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মো. মুতাসিমুল ইসলামের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে এ সেমিনারে কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী ও প্রবাসী রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠকরা অংশ নেন।
বক্তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান, অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের অর্জন, ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ নারীর আত্মত্যাগ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
বিশেষ বক্তা স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক বলেন, 'স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের "স্বপ্নের সোনার বাংলা" বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে।'
স্পেনপ্রবাসী কলামিস্ট চাকলাদার মাহবুব উল আলম মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন এবং রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে প্রত্যাবর্তনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেন।
স্পেন-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নুরিয়া লোপেজ বলেন, 'বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক হলেও অন্যান্য শিল্প কারখানাও দ্রুতবেগে সম্প্রসারিত হচ্ছে।' তিনি বাংলাদেশের দক্ষ জনশক্তি, সরকারি প্রণোদনা, ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশের ভূয়সী প্রশংসা করে বিদেশিদের বাংলাদেশে অধিকতর বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
স্পেনের সান্তিয়াগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর সান্তিয়াগো ফেরনান্দেজ মসকেরা বলেন, 'বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে বাংলা ভাষার গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের মধ্যে দিয়ে। স্প্যানিশ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা, যার গুরুত্ব বৈশ্বিক সংস্কৃতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।' তিনি অধিক সংখ্যক বাংলাদেশিকে স্প্যানিশ ভাষা শেখার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশে নিযুক্ত স্পেনের প্রথম রাষ্ট্রদূত আরতুরো পেরেজ মার্টিনেজ তার দীর্ঘ কূটনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, 'বাংলাদেশ ও স্পেনের বিদ্যমান সম্পর্ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও উচ্চতায় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।' তিনি দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, ভাষা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরও উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ বাংলাদেশ সরকার করোনা মহামারি সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করে অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছেন উল্লেখ করে বলেন, 'মহামারী মোকাবিলায় জীবন ও জীবিকার সমন্বয় সাধনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সরকার ১৫ দশমিক পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি "প্রণোদনা কর্মসূচি" ঘোষণা করেছে, যা জিডিপির চার দশমিক পাঁচ শতাংশ।'
বাংলাদেশ-স্পেনের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, 'দুই দেশের সম্পর্ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।' দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত ফরেন অফিস কনসাল্টেশন, দ্বৈতকর পরিহার, বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক আরও সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বিদ্যমান সম্পর্ক আরও উচ্চতর পর্যায়ে নিতে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের রাষ্ট্রীয় সফরের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
লেখক: স্পেনপ্রবাসী সাংবাদিক
Comments