বুস্টার ডোজ কি মহামারি ঠেকাতে পারবে?

ইতালিসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ এখন করোনা ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ শুরু করার কথা ভাবছে। অন্যদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আপাতত বুস্টার ডোজ বন্ধ রাখার জন্য দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছে।
সংস্থাটি বলেছে, বুস্টার ডোজ শুরুর আগে যেসব দেশে এখনো পর্যাপ্ত টিকা পৌঁছায়নি সেসব দেশে আগে টিকা পাঠানো দরকার।
এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যা বলছে প্রায় এক বছর আগেই তা আমাদের নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস বলছেন।
তিনি বলেছেন, করোনা হলো বিশ্বব্যাধি। গোটা দুনিয়ার মানুষকে এই মরণব্যাধি থেকে বাঁচাতে হলে ভ্যাকসিনের ফরমুলা উন্মুক্ত করতে হবে। যে বা যারাই টিকা আবিষ্কার করুক এর ওপর পৃথিবীর সব মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শুধু ধনী দেশের মানুষকে টিকা দিয়ে করোনার মহামারি ঠেকানো যাবে না।
মোহাম্মদ ইউনুসের আহবানে সাড়া দিয়েছে পৃথিবীর বহু সচেতন ও মানবিক মানুষ। তারা উচ্চকণ্ঠে এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। কিন্তু, অতি-মুনাফা লোভী ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকদের সমর্থন পাননি ড. ইউনুস। যার খেসারত সবাইকে দিতে হচ্ছে।
ইউরোপের প্রায় ৮৬ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় এনেও কাঙ্ক্ষিত সংক্রমণ রোধ করা যায়নি। এখনো প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। ইতালির প্রায় ৬৪ শতাংশ মানুষকে পূর্ণ ডোজ টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু, এখনো দেশটিতে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে আট হাজার মানুষ নতুন সংক্রমিত হচ্ছেন।
গত তিন মাসে ইতালির নতুন সংক্রমিতদের প্রায় ৯০ শতাংশ ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত।
এই পরিসংখ্যান থেকে সহজেই বোঝা যায় পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষদের এক যোগে টিকার আওতায় আনতে না পারলে সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না।
করোনার টিকা বাজারের আসার আগে থেকেই অধ্যাপক ইউনুস এ কথা বার বার বলেছেন।
ইউরোপের অন্য কয়েকটি দেশের মতো ইতালিও গ্রিন পাসের বাধ্যবাধকতা জারি করেছে। ইউরোপের যেকোনো দেশ থেকে ইতালিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে 'গ্রিন পাস' অথবা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করোনা পরীক্ষার সনদ থাকতে হবে।
একইভাবে ইতালীয়দের জন্য দেশের ভেতরে জাদুঘর, সিনেমা, সেমিনার, ব্যায়ামাগার, ইত্যাদি স্থানে যেতে 'গ্রিন পাস' বা টিকার পূর্ণ ডোজ নেওয়ার সনদ দেখাতে হবে।
আগামী মাস থেকে ইতালির সরকার 'গ্রিন পাস'র বাধ্যবাধকতা আরও বিস্তৃত করার কথা ভাবছে।
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ইতালির এক শহর থেকে অন্য শহরে যেতে, চাকরি করতে ও ট্রেনসহ অন্যান্য গণপরিবহন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও গ্রিন পাসের বাধ্যবাধকতা জারি করা হবে।
করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ঠেকাতে ইতালীয় সরকার ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সাধারণ যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। ওই সব দেশ থেকে শুধুমাত্র ইতালীয় নাগরিকরা ইতালিতে প্রবেশ করতে পারবে। তবে তাদেরকে বাধ্যতামূলক ১০ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
এত বিধিনিষেধ দিয়েও করোনার নতুন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এর প্রধান কারণ অনুন্নত বা স্বল্পোন্নত দেশে পর্যাপ্ত টিকা না পৌঁছানো। পৃথিবীর সব মানুষকে এক সঙ্গে টিকার আওতায় আনতে না পারা।
বিশ্ব নেতা ও ওষুধ ব্যবসায়ীরা অতি-মুনাফার লোভ সামলাতে না পারায় এখনই বুস্টার ডোজের কথা ভাবছে। কিন্তু, এতে সত্যিকারের রেহাই মিলবে বলে মনে হয় না। সুতরাং কার্পেটের নিচে ময়লা না রেখে বৈশ্বিক মহামারি বৈশ্বিকভাবেই মোকাবিলা করা উচিৎ।
এছাড়াও, টিকার ওপর পৃথিবীর সব মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা উচিৎ। টিকার উৎপাদন ব্যবস্থা বৈশ্বিক করা উচিৎ।
ইতালীয়দের একটা ছোট অংশ করোনার টিকা নিতে আগ্রহী নন। তারা মনে করছেন 'গ্রিন পাস'র আইন করে সরকার মানুষকে টিকা নিতে বাধ্য করছে। মানুষের নাগরিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে।
ধারণা করি, বাংলাদেশেও কিছু মানুষ এখনো করোনার টিকায় আস্থা রাখতে পারছেন না। নানা জনের নানা কথায় তারা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তাদের উচিৎ ইতালিসহ ইউরোপের দেশগুলোর দিকে নজর দেওয়া। কী বিভীষিকাময় সময় পার করেছে ইউরোপ! প্রতিদিন এত এত মানুষ মারা গেছেন যে সৎকার করতেও হিমশিম খেতে হয়েছে। অথচ সেই দেশগুলোয় এখন মৃত্যুর হার প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। কারণ, একদিকে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনেছে, অন্যদিকে সরকারগুলো চেষ্টা করেছে জনগণকে অল্প সময়ের মধ্যে টিকার আওতায় আনাতে।
Comments