ঘোড়ার আগে গাড়ি: ‘সম্মান রক্ষা’র ৪ কোটি টাকার ঢাকা-টরন্টো ফ্লাইট

ফাইল ফটো

প্রায় ৪ কোটি টাকা খরচ করে পরীক্ষামূলকভাবে টরন্টোতে 'সম্মান রক্ষা'র সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করার পর বিমান এখন তৃতীয় কোনো দেশে বিরতি দিয়ে (স্টপওভার) ফ্লাইট পরিচালনার সম্ভাব্যতা যাচাই করছে।

সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের দীর্ঘ ফ্লাইট পরিচালনা করার সুবিধা-অসুবিধা চিহ্নিত করতে তারা একটি কমিটি গঠন করেছেন।

সরাসরি ফ্লাইটের পরিকল্পনা বাতিলের আগে কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, এই ফ্লাইট বাণিজ্যিকভাবে সফল হবে, এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত। যদিও এই খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা ভিন্নমত দিয়েছিলেন।

গত ২৬ মার্চ ২৯৮ আসন বিশিষ্ট বোয়িং ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজটি টরন্টোর উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যায়। মাত্র ৭০ জন যাত্রী ছিলেন উড়োজাহাজে। ফিরে আসার সময় যাত্রীর সংখ্যা আরও কমে যায়। ৩১ মার্চ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাম্মেল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছিলেন, সরাসরি ফ্লাইটের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে।

সবাই বারবার বলছিলেন, 'লোড ফ্যাক্টরের' কারণে টরন্টোতে সরাসরি ফ্লাইট বাণিজ্যিকভাবে সফল হবে না। কিন্তু এ বিষয়টি বুঝতে বিমানকে ৪ কোটি টাকা খরচ করে একটি পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের আয়োজন করতে হয়। উড়োজাহাজে জ্বালানি নিতে ইউরোপ বা এশিয়ার কোনো একটি দেশে বিরতির প্রয়োজন এবং যথেষ্ট যাত্রী না পাওয়া গেলে এই রুটে বেশি দিন ফ্লাইট চালানো সম্ভব হবে না।

একাধিক সূত্রের তথ্য, বিমান গত সপ্তাহে ফ্লাইট অপারেশন্স পরিচালক ক্যাপ্টেন এবিএম ইসমাইলের নেতৃত্বে একটি ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে, যাদের কাজ হবে ঢাকা-টরন্টো রুটের সম্ভাব্যতা যাচাই করা।

বিমান তাদের একটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ ব্যবহার করে টরন্টোতে সপ্তাহে ৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করার পরিকল্পনা করছে।

কমিটিকে বলা হয়েছে, যাত্রাপথের মাঝখানে জ্বালানি নেওয়ার জন্য একটি আদর্শ গন্তব্যবিরতি খুঁজে বের করতে, যাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক যাত্রী ও মালামাল বহন করা যায়। কমিটি একই সঙ্গে উড়োজাহাজ ভাড়াও নির্ধারণ করবে।

সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করায় এই খাতের বিশেষজ্ঞরা সমালোচনা করছেন।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম জানান, বিমানের এ বিষয়টি যাচাই করা প্রয়োজন যে, ঢাকা-টরন্টো রুটে যথেষ্ট যাত্রী আছে কিনা। কানাডায় প্রায় ১ লাখ বাংলাদেশি থাকেন কিন্তু এশিয়ার অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের মতো তারা ঘন ঘন দেশে যাতায়াত করেন না।

নজরুল ইসলাম আরও বলেন, 'বিমান এর আগে ফ্র্যাঙ্কফুর্ট, নিউ ইয়র্ক, ইয়াঙ্গুন ও অন্যান্য গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করত। কিন্তু সেই রুটগুলো বাতিল করা হয়েছে, কারণ বিমান সম্ভাব্যতা যাচাই ও সঠিক পরিকল্পনা করেনি।'

সরাসরি ফ্লাইট চলবে না

নজরুল জানান, সরাসরি ফ্লাইটের জন্য বাড়তি ২০০ থেকে ৩০০ ডলার খরচ করবেন এমন যাত্রী খুব বেশি পাওয়া যাবে না। গত ২৬ মার্চের ফ্লাইটে যারা গিয়েছিলেন তাদের অর্ধেকেরও বেশি ছিলেন বিমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা।

বিমানের পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক মাহবুব জাহান খান ডেইলি স্টারকে জানান, এই ফ্লাইটের পরিচালনায় রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ সংস্থার খরচ হয়েছে ৪ কোটি টাকা। ২৬ মার্চ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার অল্প কয়েক ঘণ্টা আগে বিমান জানায়, তাদের পর্যালোচনায় দেখা গেছে টরন্টোতে সরাসরি ফ্লাইট বাণিজ্যিক ভাবে সফল হবে।

বিমান কর্মকর্তারা জানান, একটি সমীক্ষায় সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাঝ পথে জ্বালানি না নিয়ে চলতে হলে উড়োজাহাজে ১৩০ জনের বেশি যাত্রী বহন করা সম্ভব হবে না।

তবে উড়োজাহাজ সংস্থার সূত্র জানিয়েছে, বিমান সরাসরি ফ্লাইটের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে 'পরোক্ষ উৎসের' সহায়তা নিয়েছে।

বর্তমানে বিমানের ৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর, ৪টি ৭৮৭-৮, ২টি ৭৮৭-৯, ৬টি ৭৩৭-৮০০ এবং ৫টি ডে হ্যাভিল্যান্ড কানাডা ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ উড়োজাহাজ আছে। ৭৭৭ এবং ৭৮৭ উড়োজাহাজগুলো দূর পাল্লার এবং ৭৩৭ গুলো মাঝারি থেকে স্বল্প দূরত্বের ফ্লাইট পরিচালনায় সক্ষম। ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজগুলো শুধু স্বল্প দূরত্বের ফ্লাইটে ব্যবহার করা যায়।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Why Dhaka has become unliveable

To survive Dhaka, you need a strategy. Start by embracing the absurd: treat every crisis as a plot twist.

12h ago