পৃথিবীটা আরও বেশি বড় হলে কেমন হতো?

পৃথিবীটাকে আপনার কাছে কখনো কী খুব ছোট মনে হয়েছে? অথবা মনে হয়েছে কী হতো যদি আরেকটু বড় হতো? বড় বলতে অনেকটা বড়। ঠিক যেন সৌর জগতের সবচেয়ে বড় বৃহস্পতি গ্রহের মতো। 
ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীটাকে আপনার কাছে কখনো কী খুব ছোট মনে হয়েছে? অথবা মনে হয়েছে, আরেকটু বড় হলে কী হতো? সেটা যদি আবার সৌর জগতের সবচেয়ে বড় বৃহস্পতি গ্রহের আকারে হতো?  

পৃথিবীটা এমন সুপার-আর্থ হলে কী ঘটতো? জীবজগৎ কী একই রকম থাকতো? মানুষের জীবনেই বা তার কী প্রভাব পড়তো?  

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি নিবন্ধ থেকে জানা যায়, পৃথিবীর আকার পুরোপুরি অপরিবর্তনীয় নয়। পৃথিবীর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ধুলার সাগর। গ্রহাণুর ধ্বংসাবশেষ, ধূমকেতুর অবশিষ্টাংশ ও সূর্য থেকে প্রবাহিত আয়নিত কণাতে ঘিরে আছে পৃথিবী। মাধ্যাকর্ষণ বলয় পেরিয়ে এসব বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করতে না পারলেও ধূলিকণাসহ কিছু বড় আকারের গ্রহাণু পৃথিবীতে প্রবেশ করে। প্রতিদিন এমন প্রায় ৪৩ টন ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীর ৫,৯৭২,২০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০০ টন ভরের সঙ্গে যোগ হয়।

ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীটা যদি বৃহস্পতির মতো বড় হতো

বৃহস্পতি একটা গ্যাসীয় নক্ষত্র, সূর্যের মতো এর অধিকাংশ হাইড্রোজেন ও বাকিটা হিলিয়াম গ্যাসে পরিপূর্ণ। যাকে গ্যাস দানবও বলা হয়ে থাকে। 

পৃথিবী বৃহস্পতি আকারে হলে এর আয়োতন বর্তমান পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ১৩০০ গুণ বড় হতো। একই সঙ্গে, বৃহস্পতির ব্যাসার্ধ পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ১১ গুণ বেশি, তাই এর ব্যাসার্ধও সমানভাবে বাড়তো। তাই সেখানে খুব সাবধানে হাঁটতে হতো। কারণ, এমন আয়তনের জন্যে মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও ১১ গুণ বৃদ্ধি পেত। 

মাধ্যাকর্ষণ শক্তির এমন বৃদ্ধির ফলে মানব দেহে পড়তো গভীর প্রভাব। পৃথিবী পৃষ্ঠে ১১ গুণ বেশি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অর্থ হচ্ছে, মানুষের ওজন বেড়ে যাওয়া। কারও বর্তমান ওজন ৬০ কেজি হলে বৃহস্পতি আকারের নতুন পৃথিবীতে তার ওজন হতো ৬৬০ কেজি।

হাফর জুলিয়াস। ছবি: ফোর্বস

বিখ্যাত টেলিভিশন ধারাবাহিক (টিভি সিরিজ) গেম অফ থ্রোনসের তারকা দ্য মাউন্টেন (হাফর জুলিয়াস)-কে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষ। ৫০১ কেজি ভারোত্তোলন করে রেকর্ড গড়েছেন এই তারকা। তাহলে ৬৬০ কেজির দেহে ভারোত্তোলনের পেশি শক্তি! এমন দেহ নিয়ে বিছানা-বন্দি জীবনের বিকল্প ভাবা বেশ কঠিন। শুধু ওজন নয়, শ্বাস নেওয়াও দুরূহ হয়ে উঠবে। 

বিজ্ঞানীদের মতে, মানুষ স্বাভাবিকের চেয়ে সর্বোচ্চ ৫ গুণ বেশি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। কিন্তু, নতুন পৃথিবীতে এই শক্তি ১১ গুণের বেশি, যা মানুষের পক্ষে খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রায় অসম্ভব। 

ছবি: সংগৃহীত

বায়ুমণ্ডল

এত বেশি অভিকর্ষের প্রভাব বায়ুমণ্ডলেও প্রভাব পড়বে, চাপ বৃদ্ধি পাবে। ফলে, বাতাস মানুষকে নিচের দিকে চেপে ধরবে। শুধু তাই নয়, পরিবেশের ওপরেও মারাত্মক কিছু প্রভাব ফেলবে। 

অন্যদিকে হিমাঙ্ক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে নিচে নেমে যাওয়াতে বরফ তৈরি কঠিন হবে। এমনকি আইসবার্গের মতো বিশালাকার হিমশৈলগুলো গলে যেতে পারে। যার ফলে পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে, ডুবে যাবে উপকূলীয় অঞ্চল। কেবল পৃথিবী না, এমন একটা বিশাল গ্রহের আবির্ভাবে সমস্ত সৌরজগতে একটা গুরুতর অস্থিরতা তৈরি করবে।

পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের ওপর চরম প্রভাব পড়বে। এমনকি, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ১১ গুণ বৃদ্ধিতে চাঁদ ছোট-ছোট টুকরো হয়ে কক্ষপথ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। পৃথিবীর চারপাশে ধ্বংসাবশেষের নতুন একটি বলয় তৈরি হবে। তবে, পৃথিবী তখনো সূর্যের চেয়ে ২৫০ গুণ ছোট থাকায় অন্য কোনো গ্রহকে তা গ্রাস করার সুযোগ কম।

ছবি: সংগৃহীত

কিন্তু, নতুন এই সুপার-আর্থ কক্ষপথে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। ঠিক যেমন শুক্র এবং বৃহস্পতি বর্তমান পৃথিবীর কক্ষপথ ও জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। এ ছাড়া, পৃথিবী গ্রহাণুর মতো অন্যান্য মহাকাশীয় বস্তুর কক্ষপথকেও প্রভাবিত করবে। 

মহাকর্ষীয় টানের ফলে গ্রহাণুগুলো তাদের কক্ষপথ থেকে বের হয়ে সংঘর্ষ ঘটাতে পারে, যা হবে মারাত্মক। ৬৬০ কেজি ওজনের একটা দেহ যেখানে বিছানা থেকে টেনে তুলতেই প্রয়োজনীয় পেশীশক্তি মিলবে না, সেখানে এমন ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে থাকাটা হবে চরম নির্মম। এতকিছু বিসর্জন দেওয়ার চেয়ে বর্তমানের পৃথিবীটা বরং ঢের ভালো। যেখানে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে চলতে চলতে সেই বিখ্যাত গান, 'নীড় ছোট ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়' শুনতে মন্দ লাগে না।

তথ্যসূত্র: 
হোয়াট ইফ, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিজনেস ইনসাইডার, নাসা, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

9h ago