স্টার্টআপের জন্যে সঠিক কো-ফাউন্ডার খুঁজবেন যেভাবে

একা একটি স্টার্টআপ শুরু করা ও চালিয়ে যাওয়া বেশ ঝামেলার হতে পারে। কারো সহায়তা পেলে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার কাজটি সহজ হয়ে যায়। এ ছাড়া, কো-ফাউন্ডার বা সহ-প্রতিষ্ঠাতারা তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে আপনার স্টার্টআপটি ঠিকভাবে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।
ইলাসট্রেশন: জারিফ ফায়াজ

একা একটি স্টার্টআপ শুরু করা ও চালিয়ে যাওয়া বেশ ঝামেলার হতে পারে। কারো সহায়তা পেলে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার কাজটি সহজ হয়ে যায়। এ ছাড়া, কো-ফাউন্ডার বা সহ-প্রতিষ্ঠাতারা তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে আপনার স্টার্টআপটি ঠিকভাবে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।

তবে, শুধু কো-ফাউন্ডার পাওয়াই যথেষ্ট নয়। টিমের কাছ থেকে সন্তোষজনক কাজ পেতে হলে এবং ভবিষ্যতে ব্যবসার সাফল্য ধরে রাখতে হলে সঠিক কো-ফাউন্ডার পাওয়া জরুরি। যদিও একইসঙ্গে ব্যবসার জন্যে ও নিজের জন্যে সঠিক কো-ফাউন্ডার খুঁজে পাওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং।

আপনার কো-ফাউন্ডার ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত কেউ হতে পারে। অথবা আগের কোনো কাজ সংক্রান্ত যোগাযোগ থেকে তাকে খুঁজে পেতে পারেন। কো-ফাউন্ডার খুঁজে পেতে প্রয়োজনে নেটওয়ার্কিংও করতে পারেন। উদ্যোক্তাদের সম্মেলন বা ইভেন্টগুলোতে অংশ নিন। একই ধরনের লক্ষ্য আছে, এমন পেশাদারদের খুঁজতে লিংকডইন ও ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মে থাকা উদ্যোক্তাদের গ্রুপগুলোতেও যোগ দিতে পারেন।

কোনো সম্ভাব্য কো-ফাউন্ডারের কাছে যাওয়ার আগে প্রথমে ভাবুন, স্টার্টআপটির জন্যে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার কতটুকু আপনার নিজের আছে। তারপর নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, ব্যবসাটির জন্য আসলে কী ধরনের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। এরপর দুটির তুলনা করুন। ব্যবসাটির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও আপনার নিজের দক্ষতার মধ্যে যে ব্যবধানটা আছে, কো-ফাউন্ডারকে তার দক্ষতা দিয়ে সেটিই পূরণ করতে হবে। কাজেই সেসব বিষয়ে দক্ষতা আছে, এমন কো-ফাউন্ডার খুঁজতে হবে আপনাকে।

কো-ফাউন্ডারদের সঙ্গে সমতা বা দায়িত্বের ভাগাভাগিটা কেমন হবে—তাও ভেবে নিতে হবে।

কো-ফাউন্ডারদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা পরিপূরক হওয়া উচিত বলে মনে করেন থ্রাইভ এডটেকের কো-ফাউন্ডার ও সিইও রাফিদ ইমরান।

তিনি বলেন, ‘উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কো-ফাউন্ডারদের একজন যদি প্রেজেন্টেশন ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে ভালো হয়, তবে, অন্যদের ফিন্যান্স বা অপারেশনের মতো ব্যবসার অন্যান্য দিক সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখতে হবে।’

স্কেচবোর্ড ইন্টারঅ্যাক্টিভের কো-ফাউন্ডার ও অপারেশন ডিরেক্টর খান মো. জিয়াউস শামসও এ বিষয়ে একমত।

তিনি বলেন, ‘একই ধরনের কাজ জানা একজনের সঙ্গে হয়তো আপনার ভালো মিলতে পারে। কিন্তু, অন্য কিছু জানে এমন কারো সঙ্গে কাজ করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তীতে আপনি চাইলেই কারিগরি কাজে দক্ষ লোকজনকে নিয়োগ দিতে পারবেন। কিন্তু, শুরুর দিকে অংশীদারদের নিজেদেরই সব কাজ করতে হয়।’

কো-ফাউন্ডারদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করতে হয়। ফলে, তাদের সঙ্গে সম্পর্কের রসায়নটাও জরুরি। তাদের সঙ্গে সময় কাটান ও সুসম্পর্ক রাখুন।

রাফিদ ইমরানের মতে, ‘ভালো সম্পর্কটা জরুরি। আপনাকে তার সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়ার কাজটি পারতে হবে। কোন কাজটিতে তারা রেগে যান ও নিজেদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হলে কীভাবে তা মিটিয়ে ফেলা যায়, তা জানতে হবে। তা না হলে বিরোধ মেটাতে মেটাতেই ক্লান্ত হয়ে যেতে হবে।’

এ ছাড়া, কো-ফাউন্ডারকে ঝুঁকির বিষয়েও বুঝতে হবে। স্টার্ট আপে ব্যর্থতা একটি সাধারণ বিষয়। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি প্রচেষ্টা। তাই এখানে এমন দৃঢ় মনোভাবের লোক প্রয়োজন, যারা খারাপ সময় আসার বিষয়টি মেনে নিতে পারবেন এবং ঝুঁকি নিতে পারবেন।

ইন্ডাস্ট্রিতে কতটা সংযোগ আছে— কো-ফাউন্ডার খোঁজার ক্ষেত্রে সেই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। সম্ভাব্য কো-ফাউন্ডাররা যদি আগে কোনো স্টার্টআপ করে থাকেন বা কোনো স্টার্টআপের সঙ্গে কাজ করে থাকেন, তবে, তাদের বড় নেটওয়ার্ক থাকার কথা। বিশ্বস্ত ক্লায়েন্টও থাকার কথা। আপনার স্টার্টআপে ক্লায়েন্টের আস্থা নিয়ে আসতে এ বিষয়টি কাজে আসতে পারে।

কো-ফাউন্ডারদের প্রতি বিশ্বাসটাও জরুরি ও আবশ্যিক। বিশ্বাস করেন না—এমন কারো সঙ্গে কাজ করলে ফলাফল ভালো না হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

অভিন্ন মূল্যবোধ ও একই লক্ষ্যমাত্রা থাকাও গুরুত্বপূর্ণ। মতবিরোধ এড়িয়ে ঝামেলা ছাড়া কাজ করতে এটি অপরিহার্য। আগামী পাঁচ বছরে ব্যবসাকে কোথায় নিয়ে যেতে চান, সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করুন। সবাই কীভাবে কাজ করতে চান এবং কর্মী ব্যবস্থাপনা কেমন চান—তা নিয়ে কথা বলুন।

এ বিষয়ে খান মো. জিয়াউস শামস বলেন, ‘কারিগরি দক্ষতার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনাদের ব্যবসার মূলনীতি সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না।’

লাইটক্যাসেল পার্টনার্স লিমিটেডের কো-ফাউন্ডার ও সিইও বিজন ইসলামের মতে, ‘সঠিক কো-ফাউন্ডার খুঁজে পাওয়া অনেকটা একটি সম্পর্কে যাওয়ার মতো। আপনাকে প্রতিদিনই তাদের সঙ্গে অনেক সময় কাটাতে হবে। লক্ষ্যের মিল আছে কি না এবং কো-ফাউন্ডাররাও ব্যবসার জন্য একই জিনিস চান কি না— সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন।’

কো-ফাউন্ডিং টিমের বিষয়ে মোটামুটি একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর, স্টার্টআপটির প্রতি প্রত্যেক কো-ফাউন্ডার কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা নিয়ে আলোচনা করুন।

কো-ফাউন্ডারদের মধ্যে কেউ একজন হয়তো স্বপ্ন পূরণের জন্য নিয়ে চাকরি ছেড়ে এ কাজে এসেছেন। কিন্তু, তার হয়তো উপযোগী অবস্থা বা আর্থিক ব্যাকআপ নেই। আবার, কেউ হয়তো এ ব্যবসার পাশাপাশি আয়ের দ্বিতীয় উৎস হিসেবে নিজের আলাদা ব্যবসা চালানোর কথা ভাবছেন। আরেকজন হয়তো আছেন, যিনি নিজের সবটুকু দিয়ে শুধু এ ব্যবসার জন্যেই কাজ করে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে তৃতীয় ক্যাটাগরিতে পড়া মানুষটিকে ভবিষ্যতে হতাশ হতে হবে। তাই আগেই এ বিষয়ে আলোচনা করে নিতে হবে।

আলোচনা করে নিতে হবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও বেতন নিয়েও। এগুলো থাকলে প্রথম বছরে কোন কো-ফাউন্ডার কত পাবেন—সে বিষয়েও কথা বলে নিতে হবে।

যদি আপনি বন্ধুদের সঙ্গে স্টার্টআপ শুরু করেন, তবে, জটিল পরিস্থিতিতে পেশাদার আচরণ করার কথা মনে রাখতে হবে। কোনো কাজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আগে ব্যবসার কল্যাণের কথা ভাবুন, বন্ধুত্বের ভবিষ্যতের কথা নয়।

সঠিক কো-ফাউন্ডার খুঁজে পাওয়া নতুন উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে কঠিন ও জটিল কাজগুলোর একটি। যদি আপনি একজন উপযুক্ত অংশীদার পেয়ে যান, তাহলে পরের স্টার্টআপগুলোতেও হয়তো তার সঙ্গেই কাজ করতে পারবেন।

Comments

The Daily Star  | English

Pollution claims 2.72 lakh lives in one year

Alarming levels of air pollution, unsafe water, poor sanitation, and exposure to lead caused over 2.72 lakh premature deaths in Bangladesh in 2019.

6h ago