ইন্দোনেশিয়ার পাম তেল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞায় দেশের ভোজ্যতেলের বাজারে সংকট

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পাম তেল উৎপাদনকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া এই উদ্ভিজ্জ তেল রপ্তানি নিষিদ্ধ করায় বাংলাদেশের বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমেছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পরিবেশকদের কাছ থেকে চাহিদা অনুযায়ী ভোজ্যতেল পাচ্ছেন না তারা।
ফাইল ছবি/সংগৃহীত

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পাম তেল উৎপাদনকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া এই উদ্ভিজ্জ তেল রপ্তানি নিষিদ্ধ করায় বাংলাদেশের বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমেছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পরিবেশকদের কাছ থেকে চাহিদা অনুযায়ী ভোজ্যতেল পাচ্ছেন না তারা।

রোজা শেষে সামনে ঈদ আসছে। এ সময় ভোজ্যতেলের চাহিদাও বেশি থাকে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য, বাংলাদেশে রান্নায় ব্যবহৃত তেলের প্রায় অর্ধেকই পাম তেল, যার ৮০ শতাংশই আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে।

বিশ্লেষক ও বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ভোজ্য তেলের চাহিদা বাড়লেও ঈদের পর চাহিদা কমে যাবে। তখন পরিস্থিতি এখনকার চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে।

এর পাশাপাশি তারা অভিযোগ করে বলছেন, বাংলাদেশের রিফাইনারিগুলোতে (শোধনাগার) পর্যাপ্ত তেল মজুদ থাকা সত্ত্বেও তারা বাজারে তা সরবরাহ করছে না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশে ৪ লাখ টন ভোজ্যতেলের মজুত আছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, 'এখনো কোম্পানিগুলোর কাছে যে পরিমান তেল আছে, তা দিয়ে অন্তত দেড় মাসের চাহিদা মেটানো সম্ভব।'

এদিকে এনবিআর বলছে, চলতি বছরের প্রথম সাড়ে ৩ মাসে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টন পাম অয়েল ও ৪ লাখ টন সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে সফিকুজ্জামান বলেন, 'এটি একটি কৃত্রিম সংকট।'

দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদকরা ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারি এবং খুচরা বাজার ঘুরে ভোজ্য তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংকট দেখতে পেয়েছেন।

রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে বড় কিচেন মার্কেট কারওয়ান বাজারের জাবের স্টোরের সেলসম্যান মনির হোসেন বলেন, 'দশ দিন আগে ডিলার আমাকে ৪০ লিটার তেল দিয়েছে। কিন্তু আমি দৈনিক ৬০০ লিটার তেল বিক্রি করি। তাও বোতলের গায়ে লেখা দামে। কিন্তু গত ৫ দিন হলো আমার দোকানে কোনো তেল নেই। এভাবে কি ব্যবসা করা যায়?'

মনির হোসেন আরও বলেন, 'কাস্টমাররা তেল কিনতে এসে ফেরত যাচ্ছেন। ডিলারদের জিজ্ঞেস করলে বলে, কোম্পানি থেকে তারা তেল পাচ্ছেন না। তাই আমাদের দিতে পারছেন না। গত ৬ দিনে আমার দোকানে কোনো ডিলার আসেনি।'

ব্যবসায়ীদের মতে, এটি কেবল ঢাকা বা চট্টগ্রামের চিত্র নয়। সারাদেশের চিত্রও একই রকম।

কারওয়ানবাজার কিচেন মার্কেটের তেলের পাইকারি বিক্রেতা সততা জেনারেল স্টোরের ব্যবস্থাপক শিপন মিয়া বলেন, 'তেলের এই সংকট কবে দূর হবে, তা বুঝতে পারছি না। সমাধানের কোনো পথ দেখতে পাচ্ছি না। এ বিষয়ে কোম্পানির কাছ থেকেও কোনো সদুত্তর পাচ্ছি না।'

রাজধানী মিরপুরের বর্ধিত পল্লবী এলাকার মামুন জেনারেল স্টোরের ব্যবস্থাপক পনির হোসেন বলেন, 'সর্বশেষ গত শনিবার ডিলার এসে আমাদের তেল দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু যে পরিমান তেল আমাদের দরকার, তার ৩ ভাগের এক ভাগ দিয়েছিল। কারণ হিসেবে বলেছে, বাজারে তেলের সংকট।'

ডেইলি স্টারের পাবনা সংবাদদাতা আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু জানান, তেলের সংকট দেখা দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা পাবনার বিভিন্ন বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। আর ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে তেলের সংকট ততই বাড়ছে।

তপু জানান, কোথাও কোথাও ক্রেতারা হন্যে হয়ে খুঁজেও তেলের দেখা পাচ্ছেন না। পেলেও চাহিদা অনুযায়ী কিনতে পারছেন না। 

ক্রেতারা অভিযোগ করে প্রতিবেদক তপুকে বলেন, 'খোলা তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে প্যাকেটজাত তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আর এই সুযোগে কিছু কিছু ব্যবসায়ী তেলের দামও বেশি নিচ্ছেন।' 

বর্তমানে চট্টগ্রামের কিছু কিছু এলাকায় প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল কিনতে ভোক্তাদের ৮-১০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে।

এদিকে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে চাহিদা অনুযায়ী তেল না পাওয়ার কারণে সুপারশপগুলোও ক্রেতাদের কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণে ভোজ্য তেল বিক্রি করা ‍শুরু করছেন। 

যেমন, সুপারশপ স্বপ্ন একজন ক্রেতার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ লিটার তেল কেনার বাধ্যবাধকতা জারি করেছে।

স্বপ্ন'র ঢাকার পান্থপথ শাখার সিনিয়র অপারেশনাল ম্যানেজার আল মামুনের ধারণা, ভোজ্য তেলের এই সংকট ঈদের পর আর থাকবে না।

তিনি বলেন, 'আমাদের এই আউটলেটে দৈনিক প্রায় ২০০ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হয়। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে প্রায় অর্ধেক তেল পাচ্ছি। কোম্পানিগুলো বলছে, তাদের কাছে পর্যাপ্ত তেল নেই।'

অবশ্য দেশের তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তারা স্বাভাবিক সময়ের মতো এখনো একই পরিমান তেল বাজারে সরবরাহ করছে।

দেশের অন্যতম তেল পরিশোধনকারী ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, 'আমরা স্বাভাবিক সময়ের মতো করেই এখন পর্যন্ত বাজারে তেল সরবরাহ করছি।'

একই কথা বলেন বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের হেড অফ ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মো. দবিরুল ইসলাম দিদার। তার ভাষ্য, পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে ঈদের পর সরকারের সঙ্গে বসে বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সফিকুজ্জামান জানান, বিদ্যমান সংকট নিরসনের জন্য সরকার ইন্দোনেশিয়ার বিকল্প হিসাবে মালয়েশিয়া থেকে পাম তেল আমদানি বাড়ানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। সেইসঙ্গে অন্যান্য দেশ থেকেও সয়াবিন তেল আমদানি বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যে সূর্যমুখী তেল আমদানির জন্য বিকল্প বাজার হিসাবে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka denounces US 2023 human rights report

Criticising the recently released US State Department's 2023 Human Rights Report, the foreign ministry today said it is apparent that the report mostly relies on assumptions and unsubstantiated allegations

1h ago