করোনা চিকিৎসার ওষুধ রপ্তানি করে এগিয়ে যাচ্ছে ফার্মাসিউটিক্যাল খাত

রপ্তানি পণ্যের তালিকায় করোনাভাইরাস চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের অন্তর্ভুক্তি, গুণগতমানের ক্রম-উন্নয়ন ও নীতিমালা সহায়তার কারণে বাংলাদেশ থেকে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের রপ্তানি গত অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেড়ে ১৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
প্রতীকী ছবি

রপ্তানি পণ্যের তালিকায় করোনাভাইরাস চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের অন্তর্ভুক্তি, গুণগতমানের ক্রম-উন্নয়ন ও নীতিমালা সহায়তার কারণে বাংলাদেশ থেকে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের রপ্তানি গত অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেড়ে ১৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ওষুধ রপ্তানি হয়েছে।

বাংলাদেশ মূলত ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, ক্যান্সার, কুষ্ঠ রোগ, অ্যান্টি-হেপাটিক, পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন, কিডনি’র ডায়ালাইসিস, হোমিওপ্যাথিক, বায়োকেমিক্যাল, আয়ুর্বেদ ও হাইড্রোসিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওষুধ রপ্তানি করে থাকে।

গত অর্থবছরে এ তালিকায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধক ওষুধ যুক্ত হয়, যার ফলশ্রুতিতে এ শিল্পে রপ্তানির পরিমাণ ও ব্যাপ্তি অনেকাংশে বেড়ে যায়।

বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের গ্লোবাল বিজনেসের পরিচালক মনজুরুল আলম বলেন, ‘আমাদের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প অল্প সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাস নিরোধক ওষুধের জেনেরিক সংস্করণ উৎপাদন করে তাদের সক্ষমতার পরিচয়ে দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে।’

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ রেমডেসিভির ও ফ্যাভিপিরাভির ২০২১ অর্থবছরে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছে। মনজুরুলের মতে, গত অর্থবছরে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার করোনাভাইরাস নিরোধক ওষুধ রপ্তানি হয়েছে।

মহামারির সময়ে উৎপাদনকারী বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে ও বিদেশে রোগীদের চিকিৎসার জন্য ওষুধ সরবরাহ করেছে। একাধিক প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানান, সরকারের এই ওষুধগুলোকে অনুমোদন দেওয়ার সাহসী সিদ্ধান্তটি ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক উপকারে এসেছে।

মনজুরুল বলেন, ‘বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ পর্যায়ের নিয়ন্ত্রিত বাজারে তিন মাসের মধ্যে প্রবেশ করতে পেরেছে, যেখানে প্রবেশ করতে স্বাভাবিক অবস্থায় অন্তত দুই বছর সময় লাগতো।’

মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে রেমডেসিভির ও ফ্যাভিপিরাভিরের জেনেরিক সংস্করণটি আমদানি করেছেন।

ভারতে রেকর্ড পরিমাণ করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর এপ্রিলে দেশটি রেমডেসিভির ও সেটি প্রস্তুত করার উপাদানের রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বৈশ্বিক চাহিদা অনেক বেড়ে যায়, যার সুবিধা নিতে পেরেছে বাংলাদেশ।

এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের বিপণন ও বিক্রয় পরিচালক মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প কিছু গুরুত্বপূর্ণ ওষুধসহ সকল ধরণের পণ্যের সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছে যাতে বাংলাদেশের মানুষ এই ভয়াবহ মহামারির বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারে।

নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মুখেও ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানি অব্যাহত রাখতে পেরেছে, জানান মুজাহিদুল।

‘আমার ধারণা, এ বিষয়টি ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের মোট রপ্তানির ওপর প্রতিফলিত হয়েছে। এসকেএফের পক্ষ থেকে আমরা রেমডিসিভির ইনজেকশন রেমিভিরের মাধ্যমে ৪৩টি দেশের হাজারো কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিয়েছি।’

তিনি উল্লেখ করেন, এসব উদ্যোগ আমাদের দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে এবং বিশ্ববাসীকে আমাদের স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে।

একমি ল্যাবরেটরিজের বিপণনের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জিয়াউদ্দিন জানান, উল্লিখিত স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সকল সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করে উৎপাদন চালু রেখেছে।

‘এই খাত থেকে রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে উদ্যোগগুলো সহায়তা করেছে’, জানান তিনি।

শুরুতে মহামারির কারণে উৎপাদনকারীরা সাপ্লাই চেইন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল। পরে তারা সরকারী সহায়তায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে ওষুধ উৎপাদন ও রপ্তানি করতে পারেন, জানান জিয়াউদ্দিন।

দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের দখল মূলত স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে রয়েছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএপিআই) তথ্য অনুযায়ী মোট বাজারের ১৮ দশমিক আট শতাংশ নিয়ে শীর্ষে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল। এছাড়াও ইনসেপটা, বেক্সিমকো, অপসোনিন, রেনাটা ও এসকেএফের দখলে রয়েছে যথাক্রমে ১০ দশমিক দুই, আট দশমিক পাঁচ, পাঁচ দশমিক ছয়, পাঁচ দশমিক এক ও চার দশমিক পাঁচ শতাংশ বাজার।

স্থানীয় উৎপাদনকারীরা ১৪৪টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করেন এবং স্থানীয় চাহিদার ৯৭ শতাংশ মেটান।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

 

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in Dec

One of the two units of the Rooppur Nuclear Power Plant will be commissioned this December if transmission lines are ready although the deadline for the project’s completion has been extended to 2027.

7h ago