চলনবিলে শুঁটকি উৎপাদনে ধস, মিলছে না কাঙ্ক্ষিত দাম
বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর চলনবিলে ধরা পড়ে বিপুল পরিমাণ দেশীয় মাছ। বর্ষার পর সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় চলনবিলের জেলেরা মাছ শুঁটকি করে সংরক্ষণ করে।
চলনবিলের শুঁটকি মাছের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জের তাড়াস উপজেলার মহিষলুটিতে গড়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় শুঁটকির আড়ত। এসব শুঁটকি গত কয়েক বছর ধরে ভারতে রপ্তানি হয়।
প্রতিবছরের মতো এ বছরও ব্যবসায়ীরা শুঁটকি মাছ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে, এ বছর পর্যাপ্ত মাছের সরবরাহ না থাকায় শুঁটকির উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। সে সঙ্গে ভারতীয় বাজারে মাছের আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় শুঁটকি ব্যবসায়ীরা উৎপাদিত শুঁটকি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবছর শীতের শুরুতে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ মাসেই মহিষলুটির শুঁটকি আড়ত থেকে প্রায় ১০০ টনের বেশি শুঁটকি ভারতে রপ্তানি হয়। তবে, এ বছর ২ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা উৎপাদিত শুঁটকি রপ্তানিকারকদের কাছে পাঠাতে পারেননি।
মহিষলুটির শুঁটকির পাইকারি আড়তদার মো. শুকুর আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিবছর এ মৌসুমে ১০ থেকে ১২ টন শুঁটকি প্রস্তুত করি। যার পুরোটাই ভারতে রপ্তানি করা হয়। তবে, এ বছর প্রায় ২ মাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ১ টনের মতো শুঁটকি প্রস্তুত করতে পেরেছি। উৎপাদিত শুঁটকি বিক্রি করতে পারিনি। শুঁটকির উৎপাদন খরচ বাড়ায় কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় হতাশ আমি।'
তিনি বলেন, 'এ বছর চলনবিলে মাছের উৎপাদন আশানুরূপ না হওয়ার কারণে মৌসুমের শুরু থেকেই শুঁটকির আড়তে পর্যাপ্ত মাছের সরবরাহ পাওয়া যায়নি। মাছের সরবরাহ কম থাকায় অতিরিক্ত দাম দিয়ে মাছ কিনে শুঁটকি করতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। তবে, আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় উৎপাদিত শুঁটকি বিক্রি করতে পারছি না।'
তিনি জানান, গত বছর এক ট্রাক (১০ টন) শুঁটকি পাইকারদের কাছে বিক্রি হয়েছে ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকায়। কিন্তু এ বছর এক ট্রাক শুঁটকি তৈরি করতে খরচ পড়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। কিন্তু পাইকাররা বেশি দাম দিতে চাইছেন না।
শুঁটকি ব্যবসায়ী আলম আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চলনবিলের বিভিন্ন বিল থেকে পুঁটি, দারকে, শৈল, টাকি, কাকলেসহ হরেক রকম মাছ ধরা হয়। পুঁটি মাছের শুঁটকির বড় বাজার রয়েছে ভারতে। আর সেই বাজারকে কেন্দ্র করেই এ অঞ্চলে শুঁটকির ব্যবসা জমে উঠে।'
তিনি বলেন, 'ব্যবসায়ীরা সরাসরি ভারতে শুঁটকি রপ্তানি করতে পারে না। সৈয়দপুরের রপ্তানিকারকদের মাধ্যমে তা ভারতে পাঠানো হয়। এ বছর উৎপাদন খরচ বাড়লেও পাইকাররা দাম দিতে চাইছেন না।'
চলনবিলের ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মহিষলুটি মাছের আড়তে ১০টি বড় বড় শুঁটকির পাইকারি ঘর রয়েছে। এখান থেকে প্রতিবছর কমপক্ষে ১০০ মেট্রিক টন রপ্তানি হয়। তবে, এ বছর ১০ থেকে ২০ টনের বেশি শুঁটকি উৎপাদিত হবে না বলে মনে হয়।'
পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চলনবিলে মাছের উৎপাদন কমেনি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে চলনবিলের বেশিরভাগ মাছ এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে স্থানীয় বাজারে অনেক সময় চাহিদামতো মাছ পাওয়া যায় না। এ ছাড়া চলনবিলের আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় অনেকেই এখন শুঁটকির আড়ত গড়ে তুলেছে। ফলে মহিষলুটির আড়তে মাছের সরবরাহ কম হয়ে থাকতে পারে।'
তবে, এটি সাময়িক সমস্যা বলে মনে করেন তিনি। ভারতে শুঁটকি রপ্তানি পুরোদমে শুরু হলে সংকট কেটে যাবে বলে মনে করেন এই মৎস্য কর্মকর্তা।
Comments