নারায়ণগঞ্জে গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৫৫০ টাকায়

শহরের চাষাঢ়ায় জিয়া হলের সামনে চামড়া জড়ো করতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। ছবি: সনদ সাহা

নারায়ণগঞ্জে আকার ভেদে গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৫৫০ টাকায়। লবণের দাম বৃদ্ধিতে প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচ বেড়ে যাওয়ায় বেশি দামে চামড়া কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ছাগলের চামড়া কিনছেন না ব্যবসায়ীরা।

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বলছেন, 'ঢাকায় ট্যানারিগুলো চামড়ার দাম ৬০০-৬৫০ টাকার বেশি বলছে না।'

রোববার দুপুরে শহরের চাষাঢ়ায় জিয়া হলের সামনে চামড়া সংগ্রহ করতে শুরু করেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে চামড়ার স্তূপ। সেখানে দুপুর ১২টায় শহরের পাড়া-মহল্লা থেকে পিকআপ, রিকশা কিংবা ভ্যানে কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে আসেন মৌসুমি ব্যবসায়ী ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা।

মৌসুমি ব্যবসায়ী মাহবুব রহমান বাবু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাড়া মহল্লা থেকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা দামের গরুর প্রতিটি চামড়া কিনে এনেছি ৬০০-৭০০ টাকা দিয়ে। কিন্তু, এখানের ব্যবসায়ীরা ছোট-বড় আলাদা করে গড়ে ৫৫০ টাকার বেশি দাম বলছে না। এছাড়া, ২৫-৩০ হাজার টাকা দামের ছাগলের চামড়া কিনবে না বলে দিয়েছে। কিন্তু, আমি প্রতিটা চামড়া ২০০-৩০০ টাকায় কিনে এনেছি। প্রতি চামড়ায় ১৫০-২০০ টাকা লোকসান হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই যে, এসব চামড়া ঢাকা নিয়ে বিক্রি করব কিংবা মজুদ করে রাখব। এখন টাকা উঠাতে কম দামেই বিক্রি করতে হবে। কারণ এখানে সিন্ডিকেট করে চামড়া কিনছে।'

৫-৬ জন যুবক ভ্যানে করে ২০-২৫টি গরুর চামড়া নিয়েছেন। তাদের মধ্যে মেহেদী হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সকাল থেকে চামড়া সংগ্রহ করে এখানে নিয়ে এসেছি। এখানে ব্যবসায়ীরা বলে চামড়া ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়নি। ফলে ৩০০ টাকার বেশি দাম দিবে না। আমরা সারাদিন পরিশ্রম করে ভ্যানের খরচও উঠবে না।'

মৌসুমি ব্যবসায়ী মো. রনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেওভোগে আমার মহল্লায় গত বছর কোরবানি হয়েছে ৭৫টি। কিন্তু, এবার সেখানে কোরবানি হয়েছে ৪৮টি। সব চামড়া ছোট-বড় গড়ে ৪০০ টাকায় গরুর চামড়া বিক্রি করেছি। কয়েকটি ছাগলের চামড়া ছিল, এগুলো বিনামূল্যে তাদের দিয়ে দিয়েছি। তাও নিতে চাইছিল না।'

চামড়া ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদের আগেও লবণের বস্তা ছিল ১০৫০-১১০০ টাকা। আজকে সেই লবণ ১২০০ টাকার কমে বিক্রি করছে না। ফলে, চামড়ার সংরক্ষণ খরচ বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে লেবার খরচ, পরিবহন খরচ তো আছে। এসব কারণে ঢাকায় ট্যানারিগুলোতে ৬০০-৬৫০ টাকার বেশি দাম বলে না। আর ৬৫০ টাকা যেসব চামড়ার দাম বলে সেগুলো ফ্রেশ ও কোনো কাটা ছেড়া থাকলে হবে না। যার জন্য আমরাও বেশি দামে চামড়া কিনছি না।'

তিনি আরও বলেন, 'গতবছর চামড়া কিনে লোকসান হয়েছে। তাই এবার আগে থেকেই পরিষ্কার ও ফ্রেশ চামড়া কিনছি ৫০০-৫৫০ টাকায়। আর ছাগলের চামড়া কিনছি না। ছাগলের চামড়া ঢাকায় কিনে না।'

চামড়া ব্যবসায়ী ফয়সাল আহমেদ বলেন, 'সরকার প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দর বেঁধে দিয়েছে ৪৭ টাকা। কিন্তু, লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়ার দর বেঁধে দেয়নি। এজন্য সমস্যা হচ্ছে। দাম ঠিক করে দিলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। এখন একটা চামড়া কিনে লবণ, লেবার, পরিবহন খরচ দিয়ে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা ফুট দাম হয়ে যায়। কিন্তু, ঢাকায় তো ৪৭ টাকার বেশি দামে কিনবে না।'

তিনি আরও বলেন, 'তাই আমরা ভালো চামড়ার ভালো দাম দিচ্ছি, আর খারাপ চামড়া কম দামে কিনছি। এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই।'

চামড়া ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাস বলেন, 'আমি সকালে ১০০ পিস চামড়া ঢাকায় ট্যানারিতে নিয়ে বিক্রি করেছি। ৪০০-৫০০ টাকা পিস। প্রতি পিসে আমার ১০০-১৫০ টাকা লোকসান হয়েছে। কেন বেশি দামে কিনব বলেন?'

Comments

The Daily Star  | English

Child rape cases rise nearly 75% in 7 months

Child rape cases in Bangladesh have surged by nearly 75 percent in the first seven months of 2025 compared to the same period last year, according to data from Ain o Salish Kendra (ASK).

2h ago