নারায়ণগঞ্জে দাম বেড়েছে আটা-ময়দার

নারায়ণগঞ্জে চাহিদা কম থাকলেও দাম বেড়েছে আটা ও ময়দার। গত এক মাসে প্রতি ৫০ কেজি আটার বস্তায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা।
ব্যবসায়ীদের দাবি, গমের দাম বাড়তে থাকায় আটা ও ময়দার দামও বেড়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে শহরের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার নিতাইগঞ্জে ঘুরে দেখা গেছে, ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা ভালো মানের আটা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮৪০ টাকায়। যা গত মামে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। সে হিসাবে একই ধরনের ময়দার বস্তার দাম ২ হাজার ৪০০ টাকা। যা এক মাস আগেও ২ হাজার ১৫০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া কিছুটা নিম্নমানের আটা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৬০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়, কিছুদিন আগেও যা ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

মহিমুনা এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা মো. জাবেদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ময়দার চাহিদা নেই। কিন্তু দাম বাড়তি। গত এক দুই সপ্তাহে কোনো দাম বাড়েনি। কিন্তু এক মাস আগেই আটা ও ময়দার দাম বস্তা প্রতি বেড়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।'
তিনি বলেন, 'গমের দাম বেড়েছে। সে জন্যই আটার দাম বেড়েছে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধে গাম আসতে পারছে না। যারা আমদানি করেন তাদের গম আসছে না। সেজন্যই দাম বাড়তির দিকে।'
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার মিলসকে নিজেদের ময়দার মিল দাবি করেন তিনি বলেন, 'বাজারে অনেক দেশের গম আছে। কিন্তু বাজারে লাল গমের চাহিদা বেশি থাকায় মিলাররা রাশিয়া, ইউক্রেন ও কানাডার গম বেশি কিনে। যার জন্যই দাম বেশি।'
মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডিংয়ের বিক্রেতা সবুজ মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আসছে রোজার ঈদ। এ সময় আটা ও ময়দা কম বিক্রি হয়। চাহিদা থাকে না বললেই চলে। যার জন্য এখনই কোনো বেচাকেনা নেই।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা আটা বিক্রি করছি ১ হাজার ৫৬০ টাকা বস্তা আর ময়দা ২ হাজার ২৫০ টাকা বস্তা। গত এক সপ্তাহে ৫০ টাকার মতো দাম বেড়েছে। মিলাররা জানিয়েছে গমের দাম বেশি তাই দাম বেড়েছে।'
মেসার্স জন্টি ট্রেডার্সের বিক্রেতা সুজন বর্মণ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত এক দুই সপ্তাহে কোনো দাম বাড়েনি। এখন দাম কম থাকার কথা। কারণ এখন আটা ময়দার মৌসুম না। আসা করছি কিছুদিন পর দাম কমবে।'
খুচরা বিক্রেতা মেসার্স নব জয় দূর্গা ভাণ্ডারের উত্তম বণিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত এক মাসে আটা-ময়দার কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা দাম বেড়েছে। ৩০ টাকার আটা বিক্রি হচ্ছে ৩৪ টাকা আর ময়দা ৪৫ টাকা থেকে ৪৮ টাকা।'
তিনি বলেন, 'মিলাররা বেশি দামে বিক্রি করলে আমাদেরও বাড়িয়ে বিক্রি করতে হয়। তারা জানিয়েছে গমের দাম বেড়েছে তাই আটা ময়দার দাম বেড়েছে।
নিতাইগঞ্জ খুচরা ও পাইকারী বহুমূখী সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদির বলেন, 'পাইকারী ও খুচরা উভয়ে আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে। তবে এটা এক দুই সপ্তাহে বাড়েনি। এক থেকে দেড় মাস আগে থেকে একটু একটু করে বাড়তে বাড়তে এ পর্যন্ত এসেছে। বস্তা প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়েছে।'
তিনি বলেন, 'বড় বড় মিলগুলো এখন গম আমদানি করে। তাদের থেকে গম কিনে এখানকার ছোট মিল মালিকেরা। ফলে কিনতেই হয় বেশি দামে। এসব কারণে দাম বাড়ছে।'
নিতাইগঞ্জের আটা, ময়দা ও গম ব্যবসায়ী সমিতির আহবায়ক জসিম উদ্দিন মৃধা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে এটা সত্য। কারণ বাংলাদেশে যে গম উৎপাদন হয় তা দিয়ে এক সপ্তাহও চলবে না। যার জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের গমের উপর নির্ভরশীল আমরা। এখন রাশিয়া, ইউক্রেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা থেকে গম আমদানি বন্ধ রয়েছে। ফলে আমদানি কমে যাওয়ায় গমের দাম বেড়েছে। গত এক মাসে মণ প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দাম বেড়েছে।'
তিনি বলেন, 'নিতাইগঞ্জে কেউ গম বিদেশ থেকে আমদানি করে না। ফলে বসুন্ধরা, সিটি গ্রুপসহ বড় বড় কোম্পানির কাছ থেকে গম কিনে এখানে বিক্রি করা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমলেও তারা কমে বিক্রি করে না। যার জন্য বাজারে গমের সংকট থাকে। এসব কারণেও গমের দাম বেড়েছে।'
Comments