নারী এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সাপ্লাইয়ারস প্ল্যাটফর্ম

নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য করপোরেট প্রতিষ্ঠানে বিক্রিতে সহায়তা করতে বিশ্বব্যাংক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে এসএমইএফ সাপ্লাইয়ারস প্ল্যাটফর্ম ফর উইমেন এন্টারপ্রিনিউরস।
এসএমই
ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী। প্রতিকী ছবি: স্টার

নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য করপোরেট প্রতিষ্ঠানে বিক্রিতে সহায়তা করতে বিশ্বব্যাংক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে এসএমইএফ সাপ্লাইয়ারস প্ল্যাটফর্ম ফর উইমেন এন্টারপ্রিনিউরস।

এসএমই ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এই প্লাটফর্ম নারী উদ্যোক্তাদের পণ্যের বাজার খুঁজে পেতে, বিশেষ করে, করপোরেট হাউসে পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।

এ ছাড়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণবিষয়ক তথ্য এই প্ল্যাটফর্মে তুলে ধরতে পারবে। এটি পরিচালনা করবে এসএমই ফাউন্ডেশন।

এসএমই ফাউন্ডেশন বলছে, এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নারী উদ্যোক্তা, করপোরেট হাউস ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান—সব পক্ষ উপকৃত হবে।

এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান বলেন, সম্ভাবনা আছে অথচ সাপ্লাইচেইনের সঙ্গে যুক্ত নন এমন উদ্যোক্তাদের এর আওতায় আনা হবে। বিশ্বব্যাংক তাদের আঞ্চলিক সহযোগীদের সহায়তায় সারা দেশ ঘুরে তাদের খুঁজে বের করবে।

তিনি আরও বলেন, নারীর জন্য সহায়ক কর্মপরিবেশ তৈরি ও নানাবিধ প্রণোদনার কারণে দেশে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে, বাংলাদেশে করপোরেট সাপ্লাইচেইনে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ খুবই কম। তাই এই প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করতে না পারা, প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাব, উপযুক্ত বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত হতে না পারা, করপোরেট হাউসের চাহিদা সম্পর্কে তথ্যের অভাবসহ নানা কারণে নারী উদ্যোক্তারা করপোরেট হাউসের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছেন না।'

'প্রয়োজনীয় প্ল্যাটফরম না থাকা, নারী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কাজ করতে সক্ষমতার ঘাটতি, পণ্য সম্পর্কে তথ্য না থাকায় করপোরেট হাউসগুলো পণ্য ক্রয়ে আগ্রহ দেখায় না,' যোগ করেন তিনি।

তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী এসএমই উদ্যোগের এক তৃতীয়াংশ নারী উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন।

এসএমই ফাউন্ডেশনের গবেষণায় দেখা গেছে, পণ্যের বাজার সংযোগ বা বাজারজাতকরণ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অন্যতম বাধা। ব্যবসা শুরুর প্রথম পর্যায়ে এই সমস্যা আরও প্রকট।

গবেষণায় দেখা যায়, ব্যবসার ক্ষেত্রে ৩৭ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা পুঁজি সংকটের কথা উল্লেখ করলেও, ২০ শতাংশ তাদের প্রধান সমস্যা হিসেবে পণ্যের বাজারজাতকরণকে চিহ্নিত করেছেন।

দেশে প্রায় ১০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং ৬৮ লাখ কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। যার ৭ দশমিক ২১ শতাংশ নারী উদ্যোক্তারা পরিচালনা করেন।

ফরচুন-৫০০ পরিচালিত ৮০টি বহুজাতিক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিচালিত গবেষণায় আরও দেখা যায় যে, প্রতি বছর গড়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হয়ে থাকে।

আজ বৃহস্পতিবার এই প্ল্যাটফর্মটির আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের কথা আছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেব উপস্থিত থাকবেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। বিশেষ অতিথি থাকার কথা আছে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়াঙ টেম্বনের।

জানা গেছে, এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রচেষ্টায় দেশের সরকারি ক্রয়ের অন্তত ২৫ শতাংশ এসএমই খাত থেকে সংগ্রহ করার বাধ্যবাধকতা রেখে শিল্প মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে সাব-কন্ট্রাকটিং আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে।

আইনটি কার্যকর হলে এসএমই খাতের পণ্যের বাজারের পরিধি বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। এই সুযোগ কাজে লাগাতে এসএমই উদ্যোক্তা, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন।

Comments