ইউক্রেন সংকট: ‘বিদ্রুপ’ যখন রাশিয়ার অস্ত্র

জাতিসংঘে রাষ্ট্রপতি জেলেনস্কির ভাষণ
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ছবি: এপি

১৬ ফেব্রুয়ারি, বুধবার ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে রাশিয়া—এ ধরনের একটি সংবাদ পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যাপারটি এতটাই গুরুতর হয়ে ওঠে যে, ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি দিনটিকে 'ইউক্রেন সংহতি দিবস' হিসেবেও ঘোষণা করেন।

কিন্তু আক্রমণের পরিবর্তে এ প্রসঙ্গে বৈশ্বিক উদ্বেগ ও জল্পনা-কল্পনা নিয়ে 'বিদ্রুপ' করছেন রুশরা।

বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, এক শীর্ষ রুশ কূটনীতিক গত ১৬ তারিখে হামলার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, 'ইউরোপে বুধবারে কোনো যুদ্ধ শুরুর ঘটনা খুবই বিরল।'

যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর নেতারা ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ভয় দেখিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর, আর রাশিয়া তার জবাব দিচ্ছে বোমা কিংবা শান্তির ঝাণ্ডা উড়িয়ে নয়, বরং বিদ্রুপের মাধ্যমে।

মস্কোর কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের প্রতিপক্ষদের ঘায়েল করা ও নিজেদের ওপর থেকে নজর সরানোর জন্য বিদ্রুপকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। পশ্চিমের অনিশ্চয়তা ও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে থাকা 'গণতান্ত্রিক' নেতাদের তুলনায় রাশিয়ার রাষ্ট্রপতিকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, বুদ্ধিমান ও ঠান্ডা মাথার নেতা হিসেবে দেখানোর অভ্যন্তরীণ কৌশলের অংশ হিসেবে বিদ্রুপের ব্যবহার বহুল প্রচলিত।

একদিকে সারা বিশ্বে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছিল, বুধবার সেই বহুল আলোচিত আক্রমণ আসতে যাচ্ছে, আর অন্যদিকে রুশ কর্মকর্তারা এ আক্রমণ নিয়ে সারাদিন হাসি-ঠাট্টা ও বিদ্রুপ করে কাটিয়েছেন।

ফেসবুকে এক পোস্টে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বিদ্রুপের সুরে পশ্চিমের 'ভুল তথ্যদাতা গণমাধ্যমের' কাছে আগামী বছরে তাদের (রুশদের) সব 'অভিযান পরিচালনার' দিন তারিখ আগে থেকে প্রকাশ করার আহ্বান জানান, যাতে নির্বিঘ্নে ছুটির পরিকল্পনা করা যায়।

মারিয়া আরও জানান, পশ্চিমের অনেক গণমাধ্যমকে হতাশ করে আবারও যুদ্ধ শুরু হতে ব্যর্থ হয়েছে। 'তবে তাদের (খবরের কাগজের) পাতায় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে, যার সঙ্গে বাস্তবের কোনো সম্পর্ক নেই'- যোগ করেন তিনি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাশিয়ার দূত ভ্লাদিমির চিঝভ অভিযোগ করেন, তারা হামলা করতে যাচ্ছেন, এ কথা বলে পশ্চিমারা রুশদের 'মানহানি' করেছে। জার্মান দৈনিক ওয়েল্টের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, এই বুধবারে কোনো আক্রমণ হচ্ছে না। তারপর তিনি ইউরোপে বুধবারে যুদ্ধ শুরু না হওয়া সংক্রান্ত বিদ্রুপাত্মক মন্তব্যটি করেন।

একই সুরে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ পশ্চিমা গণমাধ্যমের ছড়ানো আতঙ্ক হালকা করার চেষ্টা করেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, বুধবার রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি প্রশাসনের দৈনন্দিন কার্যক্রমে কোনো ভিন্নতা ছিল কি না? জবাবে তিনি জানান, সবাই রাতে শান্তিতে ঘুমিয়েছে আর সকালে প্রতিদিনের মতোই কাজ শুরু করেছে।

পেসকোভ জানান, পশ্চিমা হিস্টিরিয়ার চূড়ান্ত পরিণতি এখনও আসেনি। আমাদেরকে এ থেকে মুক্তি পেতে আরও দীর্ঘ সময় ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করতে হবে।

তবে এ ধরনের বিদ্রুপাত্মক কূটনীতির ক্ষেত্রে ওস্তাদ হচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তিনি প্রায় ১৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্রেমলিনের অন্যতম সেরা কূটনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। রুশ ও ইংরেজি, উভয় ভাষাতেই বিদ্রুপের ব্যবহারে তিনি বিশেষজ্ঞ।

গতকাল বুধবার লাভরভ পশ্চিমা শক্তিদের প্রতি উপহাস করে বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তাদেরকে শিশুকালে ঠিকভাবে লালন পালন করা হয়নি। এজন্য তারা রাশিয়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করে দিতে চায় বা আগে থেকে এ বিষয়ে পূর্বাভাষ দেওয়ার চেষ্টা করে।

পুতিন আবারও এ সপ্তাহে আলোচনায় বসতে চেয়েছেন, কিন্তু এখনো ইউক্রেন প্রসঙ্গে তার উদ্দেশ্য পরিষ্কার নয়। পশ্চিমের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখনো বলে যাচ্ছে যে, অদূর ভবিষ্যতে কোনো এক ধরনের যুদ্ধ লাগতে পারে, বা আক্রমণ হতে পারে।

তবে রুশদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে হয়, সেই আক্রমণ হয়তো ভবিষ্যতের কোন এক বুধবারে বা সপ্তাহের অন্য যেকোনো দিনে আসতে পারে। অথবা নাও আসতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Govt yet to receive any letter from Tulip: Shafiqul

Tulip has written to Yunus as she wants to meet him in London to clear up a "misunderstanding" after corruption allegations made by the interim govt led her to resign from the UK government

1h ago