করোনার ‘সুপার-স্প্রেডার’ দেশে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে মিয়ানমার

ইয়াঙ্গুনে অক্সিজেনের জন্যে লাইনে দাঁড়িয়েছেন মানুষ। ছবি: এপি

করোনার 'সুপার-স্প্রেডার' দেশে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে মিয়ানমার। দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন।

আজ বুধবার গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক সাক্ষাত্কারে টম অ্যান্ড্রুজ জানিয়েছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে করোনার তীব্র সংক্রমণ চলছে। গত ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশটি মারাত্মক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে আছে। তার ওপর করোনার তীব্র সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। মিয়ানমারজুড়ে অস্থিতিশীলতার কারণে করোনার টিকাদান প্রকল্প অচল হয়ে পড়েছে, করোনা পরীক্ষা ব্যবস্থায় ধস নেমেছে এবং সরকারি হাসপাতালগুলো একরকম অকেজো হয়ে পড়েছে।

তিনি জানান, সেনা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালন বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে, সেনা সরকারের সহিংস কর্মকাণ্ড ও গ্রেপ্তারের হুমকির কারণে তারা গোপনে ব্যক্তিগতভাবে রোগীদের চিকিৎসা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

মিয়ানমারে কত জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, কত জন মারা গেছেন, এর সঠিক সংখ্যা স্পষ্ট নয় বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, 'সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনার কারণে সঠিক সংখ্যা জানাটাও কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা জানি সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এটি দ্রুত বাড়ছে, উদ্বেগজনকভাবে দ্রুত বাড়ছে।'

মিয়ানমারের সামরিক নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য ও খেলাধুলা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১ জুন থেকে দেশটিতে করোনায় চার হাজার ৬২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে, বাস্তব সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। 
মঙ্গলবার দেশটির সেনা সরকার বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে ১০টি নতুন শ্মশানঘর নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে।

টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, 'ইয়াঙ্গুনে এখন তিন ধরনের লাইন দেখা যাচ্ছে। একটি এটিএম বুথের সামনে, একটি অক্সিজেনের জন্য—যেটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ আক্ষরিক অর্থে যারা অক্সিজেনের জন্যে লাইনে দাঁড়াচ্ছে, তাদেরকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গুলি করছে। তৃতীয়টি লাইনটি হচ্ছে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্যে ও মর্গের সামনে।'

তিনি আরও জানান, মিয়ানমারজুড়ে বিভিন্ন শহরে অক্সিজেন, মেডিকেল সরঞ্জাম ও ওষুধের তীব্র সংকট চলছে। লোকেরা নিজেদের বাড়ির সামনে হলুদ ও সাদা পতাকা ঝুলিয়ে রাখছে। এর অর্থ হলো তাদের খাবার অথবা ওষুধের প্রয়োজন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমজুড়ে সাহায্যের জন্যে হাহাকার চলছে।

দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা কুক্ষিগত করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। মানুষ অক্সিজেন ট্যাংক মজুত করে রাখছে দাবি করে জনগণের কাছে অক্সিজেন বিক্রি না করার নির্দেশ দিয়েছে সেনা সরকার।

অ্যান্ড্রুজ জানান, মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশসহ আন্তর্জাতিক সরকারের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। অন্যথায় তাদের সীমান্তেও অনিয়ন্ত্রিত প্রাদুর্ভাব দেখা যেতে পারে।

তিনি বলেন, 'ভয়াবহ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে ও এই রোগের অন্যান্য রূপগুলোর সমন্বয়ে মিয়ানমারে কোভিড-১৯ সুপার স্প্রেডার হয়ে উঠছে, যা অত্যন্ত মারাত্মক, অত্যন্ত সংক্রামক... এটি সব কারণে অত্যন্ত বিপজ্জনক। এটা সত্য যে কোভিড জাতীয়তা, সীমান্ত, আদর্শ কিংবা রাজনৈতিক দল নির্বিশেষেই সংক্রমণ ঘটায়। এটি সবাইকেই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে। মিয়ানমার ভৌগোলিকভাবে এমন একটি অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে দেশটি একটি সুপার-স্প্রেডার রাষ্ট্রে পরিণত হলে গোটা অঞ্চলজুড়েই আরও বেশি দুর্ভোগ হতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

Why gold costs more in Bangladesh than in India, Dubai

Gold prices in Bangladesh continue to soar, leaving many to wonder why the precious metal costs more here than in neighbouring India or the global trading hub Dubai.

1h ago