চলতি অর্থবছরে রেকর্ড ১৮.৩০ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন

স্টার ফাইল ফটো

চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলায় ৬১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ লবণ উৎপাদিত হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই জেলায় ১৮ দশমিক ৩০ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদিত হয়েছে।

এর আগে, গত এক দশকের মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ২৪ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছিল। কক্সবাজারে বাণিজ্যিকভাবে লবণ উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬০ সালে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সংস্থার (বিসিক) বলছে, গত ৫ বছরে লবণ চাষের জমি ও চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। এ বছর উৎপাদন আরও বাড়বে, কারণ মৌসুম এখনো শেষ হয়নি।

বিসিক জানায়, বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন হয় কক্সবাজার জেলায়। মোট উৎপাদনের প্রায় ৯০ শতাংশ লবণ আসে এই জেলা থেকে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বাকি লবণ উৎপাদিত হয়।

মাঠের চাষিরাও লবণ উৎপাদন নিয়ে সন্তুষ্ট। চলতি অর্থবছরে প্রতি মণ লবণ ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত অর্থবছরে যা ছিল ২০০-২২০ টাকা।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা বিসিক বলছে, দেশে ২০২১-২২ অর্থবছরে লবণের চাহিদা ২৩ দশমিক ৩৫ লাখ মেট্রিক টন।

বিসিকের মাঠ জরিপের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে লবণ চাষের জমি বৃদ্ধি পেয়েছে ৮ হাজার ৬৩৭ একর। সেই সঙ্গে লবণ চাষির সংখ্যা বেড়েছে ৯ হাজার ৫৩৪ জন।

কক্সবাজারের সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের লবণ চাষি শাহজাহান মুনির বলেন, এবার যেমন দাম পাচ্ছি তাতে আমি খুশি। গত বছরের তুলনায় প্রতি মণে ৮০-১০০ টাকা বেশি পাচ্ছি। এই বছর এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে এতে আর আমদানি প্রয়োজন হবে বলে মনে হয় না। তবে এরপরও যদি আমদানি করা হয় তাহলে বাজারে আমাদের লবণের চাহিদা কমে যাবে।

তিনি জানান, তিনি এবার ৪ একর জমিতে লবণ চাষ করেছেন। গতবারের চেয়ে উৎপাদন প্রায় দেড় গুণ বেশি হয়েছে।

কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের লবণ চাষি আওরঙ্গজেব মাতবর বলেন, গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত হলেও আমরা খুশি। কারণ, আগের চেয়ে বেশি দামে লবণ বিক্রি করতে পারছি। আমি ৬ একর জমিতে লবণ চাষ করেছি। গত বছর যে পরিমাণ লবণ পেয়েছিলাম, এবার একই জমিতে দেড় গুণ বেশি লবণ উৎপাদন হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের ব্যবসায়ীরা যদি লবণ আমদানি না করেন, সেটা আমাদের শিল্পের জন্য ভালো হবে। আমদানি করলে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হব।

বাংলাদেশ সল্ট ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এইচএম শহীদ উল্লাহ বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয় যতটা বেড়েছে সে তুলনায় আমরা দাম পাচ্ছি না। এখন আমরা প্রতি মণ লবণ ৩০০ টাকায় বিক্রি করছি। গত বছর দর ২০০ টাকা ছিল।

তিনি বলেন, বিদেশ থেকে লবণ আমদানি না হওয়ায় আমরা চাষিরা লবণ বিক্রির সুযোগ পাচ্ছি। এটা আমাদের জন্য একটা ভালো দিক।

বিসিক চেয়ারম্যান মাহবুবর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, দেশে এখন লবণের বার্ষিক চাহিদা ২৩ লাখ মেট্রিক টন। এবার রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হওয়ায় আগামী অর্থবছরে লবণ আমদানির প্রয়োজন পড়বে না।

তিনি বলেন,  এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার চেষ্টা করব। যেহেতু আমরা উৎপাদনে রেকর্ড করেছি, আমাদের আরও ভালোভাবে কাজ করতে হবে।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার জেলায় লবণ উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে প্রায় ৫ লাখ মানুষ জড়িত রয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Fuel prices cut

Fuel prices cut by Tk 1 per litre

Tk 104 for diesel and kerosene, Tk 121 for petrol, and Tk 125 for octane

21m ago