একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসকে যে কারণে অস্কার বলা হয়

একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস। ছবি: সংগৃহীত

উইল স্মিথের হাতে সপাটে চড় খাবার পর থেকে ক্রিস রক এবং অস্কার—আলোচনা ও সমালোচনার টেবিল থেকে নামগুলোর নট নড়নচড়ন অবস্থা। তাতে ক্রিস রকের কমেডি অনুষ্ঠানের টিকিট বিক্রি যতই আকাশ ছুঁয়ে আসুক না কেন, প্রায় ১০০ বছর ধরে সিনেমা আভিজাত্যের পর্দা গায়ে চড়িয়ে আসা একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের কি একটুও মান স্খলন হয়নি? 

হয়তো হয়েছে, হয়তো হয়নি। সে আলোচনা আরেকদিন। আজ বরং জগৎ-বিখ্যাত এই সিনে-স্বীকৃতির শুরু, একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস থেকে অস্কারে পরিণত হওয়া এবং সাড়ে ১৩ ইঞ্চির বিখ্যাত স্বর্ণের মানব মূর্তিটি নিয়ে খানিকক্ষণ মজে থাকা যাক।    

যেভাবে যাত্রা শুরু

লস অ্যাঞ্জেলেসের বিখ্যাত বাল্টিমোর হোটেলের ক্রিস্টাল বলরুমে নৈশভোজ বসেছে। সদ্য গঠিত এক সংগঠনের উদ্দেশ্যগুলো নিয়ে কর্তারা বসেছেন আলোচনায়। সময়টা ১৯২৭ সাল; সংগঠনটির নাম একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস।  

ছবি: সংগৃহীত

সেই উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল চলচ্চিত্র তৈরির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য মুন্সীয়ানার স্বীকৃতি প্রদান এবং একইসঙ্গে সামনের কাজগুলোকে উৎসাহিত করা। 

১৯২৯ সালের ১৬ মে একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। সেদিন ক্যালিফোর্নিয়ার রুজভেল্ট হোটেলে ২৫০ জনের জমকালো এক নৈশভোজ আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিল্পীদের হাতে অস্কার পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। 

যদিও তখনো পুরস্কারটির নাম 'অস্কার' বলে স্বীকৃত নয়।  

আংকেল অস্কারের গল্প

একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের নাম যে ঠিক কবে থেকে অথবা কী কারণে অস্কার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে, তা সঠিক জানা নেই কারও। তবে এ বিষয়ে বেশ কিছু গল্প প্রচলিত রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিশ্বাসযোগ্য গল্পটি এরূপ—

মার্গারেট হ্যারিক ছিলেন একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের গ্রন্থাগারিক। ১৯৩১ সালে প্রথমবারের মতো সোনারঙা মূর্তিটির চোখমুখ শূন্য এবং কঠোর-কঠিন ভ্রু-জোড়া দেখে তিনি সেটিকে তার আংকেল অস্কারের সঙ্গে তুলনা করেন। 

ইমানুয়েল লেভি তার 'অল অ্যাবাউট অস্কার: দ্য হিস্ট্রি অ্যান্ড পলিটিকস অব দ্য একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস' বইয়ে উল্লেখ করেন, মার্গারেটের ঠাট্টার পর থেকে একাডেমির কর্মচারীরা মূর্তিটিকে খানিকটা আদর করেই অস্কার বলে ডাকা শুরু করেন। তবে, মজার বিষয় হলো, মার্গারেট কিন্তু পরবর্তীতে একাডেমির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হয়েছিলেন।

মার্গারেট হ্যরিক। ছবি: অস্কারডটওআরজি

ছাপার অক্ষরে প্রথম 'অস্কার' শব্দটি ব্যবহার করেন কলামিস্ট সিডনি স্কোলস্কি। ১৯৩৪ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার ক্যাথরিন হেপবার্নের ঝুলিতে যুক্ত হলে স্কোলস্কি অস্কার শব্দটির প্রয়োগ ঘটান। 

'দ্য একাডেমি স্ট্যাচুয়েট', 'দ্য গোল্ডেন ট্রফি', 'দ্য স্ট্যাচুয়েট অব মেরিট'-সহ বহুবিধ নাম জুটে যাওয়া একাডেমির মূর্তিটি ইতিহাসের এ পর্যায়ে এসে মোটামুটি অস্কার নামে পরিচিত হতে থাকে। 

অস্কারের রূপান্তর

অস্কারের নকশা প্রণয়ন এবং তৈরির পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন বিখ্যাত হলিউড স্টুডিও এমজিএমের আর্ট ডিরেক্টর সেড্রিক গিবন্স ও ভাস্কর জর্জ স্ট্যানলি। 

গিবন্সের করা অস্কার মূর্তিটির একদম মূল নকশায় তলোয়ার হাতে এক নাইটকে ফিল্মের রিলের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সেই রিলের ৫টি স্পোক চলচ্চিত্রের ৫টি ভিন্ন অনুষঙ্গের প্রতিনিধিত্ব করে। সেগুলো হচ্ছে- অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক, যন্ত্রকর্মী এবং চিত্রনাট্যকার। তলোয়ার দিয়ে এই শিল্পের অগ্রগতি রক্ষার বিষয়টিকে প্রতীকায়িত করা হয়েছে। 

জর্জ স্ট্যানলি গিবন্সের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মূল নকশায় বেশ কিছুটা পরিবর্তন এনে একে বর্তমান ত্রিমাত্রিক রূপ দেন। অনেকের ধারণা মেক্সিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং অভিনেতা এমিলিও ফার্নান্দেজের দেহাবয়বের আদলে মূর্তিটি বানানো। তবে অনেকেই আবার তা অস্বীকার করেন।

ছবি: সংগৃহীত

বানাবার ক্ষেত্রে সাধারণত সাড়ে ৮ পাউন্ড ওজনের এই মূর্তিটিকে শক্ত ব্রোঞ্জে রূপান্তর করে তার ওপর ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া হয়। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সে ধারায়ও এসেছে পরিবর্তন। বর্তমানে ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারের সাহায্যে একটি ডিজিটাল অস্কারের ছাঁচ বের করা হয়। পরে সেটিকে মোমে রূপান্তর করে, সিরামিক শেলে রেখে, ১৬০০ ডিগ্রি ফারেনফাইটে পুড়িয়ে, ব্রোঞ্জে রূপান্তর করে তারপর ইলেকট্রোপ্লেটিংয়ের সাহায্যে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া হয়।  

বর্তমানে অস্কার নামটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত। একাডেমি অ্যাওয়ার্ড অব মেরিট থেকে অস্কার হবার অদ্ভুত এই পরিবর্তন একইসঙ্গে যেমন বাহ্যিক, তেমনই অভ্যন্তরীণও।

 

সূত্র: 
এএস, মার্কা, দ্য হলিউড রিপোর্টার, অস্কারস

 

Comments

The Daily Star  | English

US cuts tariffs on Bangladesh to 20% after talks

The deal for Dhaka was secured just hours before a midnight deadline set by President Donald Trump

2h ago