‘রহমান ছিলেন বিনয়ী নায়ক’

রহমান ও শবনম। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সিনেমার প্রথম রোমান্টিক নায়ক রহমান। গত শতকের ৬০ এর দশকের সাড়া জাগানো নায়ক তিনি। বাংলা সিনেমার পাশাপাশি উর্দু সিনেমায় অভিনয় করেও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন সাদাকালো যুগের এই নায়ক।

রহমান জুটি হিসেবে বেশি অভিনয় করেন শবনমের বিপরীতে। এই জুটির অভিনীত রাজধানীর বুকে ও হারানো দিন সিনেমা দুটি স্বর্ণালী দিনের সফল সিনেমা।

সোমবার ১৮ জুলাই নায়ক রহমানের প্রয়াণ দিবস। নায়ক রহমানকে নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন সেই সোনালি দিনের নায়িকা শবনম।

তিনি বলেন, 'রহমানের সঙ্গে সিনেমা করতে গিয়ে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আমাকে ভীষণ সম্মান করতেন। আমিও তাকে খুব সম্মান করতাম। ভাই বোনের মতো সম্পর্ক ছিল আমাদের মধ্যে। তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই সুন্দর সম্পর্ক ছিল। আমার স্বামী রবিনও তাকে খুব পছন্দ করতেন।'

'রহমান ছিলেন বিনয়ী নায়ক। সুন্দর করে কথা বলতেন সবসময়। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে পুরোপুরি শিল্পী বনে যেতেন। ক্যামেরার ভাষাটা তিনি ভালো বুঝতেন,' বলেন শবনম।

রাজধানীর বুকে সিনেমা প্রসঙ্গে শবনম বলেন, 'এই সিনেমায় আমাদের জুটিকে দর্শকরা দারুণভাবে গ্রহণ করে। এই সিনেমার গান তোমার লেগেছে এত যে ভালো, সে সময়ে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আজও গানটির আবেদন কমেনি।'

'এরপর হারানো দিন সিনেমায় জুটি হয়ে অভিনয় করি আমরা। এই সিনেমার একটি গান মন যে দোলে সিনেমাপ্রেমীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। আমরা জুটি হিসেবে দাঁড়িয়ে যাই,' বলেন তিনি।

সহশিল্পী রহমান কেমন ছিলেন জানতে চাইলে শবনম বলেন, 'তিনি খুবই সহযোগিতা করতেন। কীভাবে একটি দৃশ্য ভালো করা যায়, কীভাবে একটি সিনেমা ভালো হবে, এ বিষয়গুলো তিনি ভাবতেন, আলোচনা করতেন। সহশিল্পীদের সঙ্গে সবসময় ছিলেন আন্তরিক।'

স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, 'একবার সিলেটে শুটিং করতে গিয়েছিলাম আমি, রহমানসহ আরো অনেকে। ভালোভাবেই শুটিং চলছিল। একদিন শুটিংয়ে  বিরতিতে রহমান গাড়ি নিয়ে বের হবেন। অনেকেই না করলেও তিনি বের হয়ে যান। হঠাৎ শুটিং স্পটে খবর আসে রহমানের গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করেছে'

'দ্রুত সবাই ছুটে যাই। ততক্ষণে রহমানের অবস্থা ভীষণ খারাপ। যতটুকু জানতে পেরেছিলাম, নিজের গাড়ির দরজা খুলে বসে ছিলেন তিনি। বিপরীত  দিক থেকে একটি ট্রাক এসে তার গাড়িকে ধাক্কা দেয়,' বলেন তিনি।

'প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয় রহমানের। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। রক্তের প্রয়োজন হয়। অভিনেতা খলিল রক্ত দেন। সৃষ্টিকর্তার দয়ায় সেবার তিনি বেঁচে যান।'

শবনম জানান, দুর্ঘটনার পর রহমান একা হয়ে পড়েন। সিনেমা থেকে অনেকদিন দূরে ছিলেন।

'তারপর একদিন দেখা হলে তিনি সিনেমা প্রযোজনার কথা বলেন। আমার কাছে সহযোগিতা চান। আমি তাকে পাকিস্তানের একজন বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে রহমান শুটিং শুরু করেন। সিনেমা মুক্তির পর টাকা পরিশোধ করেছিলেন। রহমান আমার এ সহযোগিতার কথা সারাজীবন মনে রেখেছিলেন,' বলছিলেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী শবনম।

'জীবনের এই সময়ে এসে হারিয়ে যাওয়া সহশিল্পী ও পরিচালক-প্রযোজকদের অনেককেই মনে পড়ে। রহমানকে মনে পড়ে। যেখানে আছেন শান্তিতে থাকুন তিনি।'

Comments

The Daily Star  | English

Police, Bida launch special security measures for foreign investors

Held meeting with officials of foreign companies, introduced dedicated emergency contact line

1h ago