‘বহুদিন হেমন্ত ছিল আমার মনের ভেতরে’

খ্যাতিমান নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকের তার প্রিয় গান নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পাক্ষিক আনন্দধারা'কে বলেছিলেন, 'কলকাতার আকাশবাণীর রবিবারের অনুরোধের আসরের পোকা ছিলাম খুব, নিয়মিত শুনতাম এবং চিঠিও লিখতাম। সেখানে নিজের নাম পড়ে শোনানো হলে ভীষণ মর্যাদার মনে হতো। সেখানে আমার প্রথম পছন্দ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। বহুদিন হেমন্ত ছিল আমার মনের ভেতরে।'
আজ উপমহাদেশের সেই কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী, সুরস্রষ্টা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ৩১তম প্রয়াণ দিন। ১৯৮৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন বরেণ্য এই কণ্ঠশিল্পী।
সুরের জাদুকর হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অসংখ্য কালজয়ী গান শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন। তার কণ্ঠের আধুনিক বাংলা গান আজও গেঁথে আছে বাঙালির হৃদয়ে। আধুনিক বাংলা গানের প্রবাদ পুরুষ হয়ে বেঁচে আছেন তিনি।
তার কণ্ঠে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে— 'তুমি এলে অনেক দিনের পরে যেন বৃষ্টি এলো', 'কেন দূরে থাকো শুধু আড়াল রাখো', 'পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহ ভরা কোলে তব মাগো', 'ও নদীরে', 'আয় খুকু আয়', 'মুছে যাওয়া দিনগুলি আমায় যে পিছু ডাকে' ও 'ও আকাশ প্রদীপ জ্বেলো না'।
এই তালিকায় আরও আছে— 'আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি', 'এই রাত তোমার আমার', 'মেঘ কালো আঁধার কালো', 'রানার', 'এক গোছা রজনীগন্ধা হাতে দিয়ে বললাম', 'শোনো বন্ধু শোনো', 'আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে' এবং 'আমিও পথের মতো হারিয়ে যাবো'।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ভারতের বেনারসে ১৯২০ সালের ১৬ জুন মামাবাড়িতে জন্মেছিলেন। তার আদি নিবাস দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগরে। কখনও ওস্তাদের কাছে গান শিখেননি হেমন্ত। অন্যের মুখে কিংবা রেডিওতে গান শুনে গান তুলে নিতেন গলায়।
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের তাকে রেডিওতে নিয়ে গিয়েছিলেন। শৈলেশ দাসগুপ্তর সহায়তায় ১৯৩৫ সালে ১৪ বছর বয়সে রেডিওতে প্রথম গান গেয়েছিলেন তিনি।
নরেশ ভট্টাচার্যের লেখা ও শৈলেশ দাসগুপ্তর সুরে 'জানিতে যদি গো তুমি' ও 'বলো গো বলো মোরে' গান করেন। এই দুটি গান প্রথম জীবনে তাকে পরিচিতি দিয়েছিল। মাঝে কিছুদিন তার সাহিত্যিক হওয়ার ইচ্ছে হয়েছিল। কিছুদিন তিনি দেশ পত্রিকায়' লেখেন।
১৯৪০ সালে সংগীত পরিচালক কমল দাসগুপ্ত তাকে দিয়ে 'কিতনা দুখ ভুলায়া তুমনে' ও 'ও প্রীত নিভানেভালি' শিরোনামের হিন্দি গান করান। তিনি প্রথম সিনেমার গান গেয়েছেন 'নিমাই সন্ন্যাস'-এ।
১৯৪৭ সালে 'অভিযাত্রী' চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে হেমন্তের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর 'শাপমোচন', 'নীল আকাশের নিচে', 'হারানো সুর'সহ অনেক বিখ্যাত ছবির সংগীত পরিচালনা করেন তিনি।
তথ্যসূত্র: আনন্দধারা (আত্মজীবনী), লেখক: হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও পাক্ষিক আনন্দধারা
Comments