শিল্পের বিচার কখনো পুরস্কার দিয়ে হয় না: গাজী রাকায়েত

১১টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে রেকর্ড তৈরি করেছে নির্মাতা গাজী রাকায়েতের 'গোর'। এর আগে ২০১৩ সালে ১৭টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে ইতিহাস গড়েছিল তার পরিচালিত 'মৃত্তিকা মায়া'। দেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিভাগে পুরস্কার পাওয়া সিনেমা সেটি।
নতুন রেকর্ড তৈরি করা 'গোর' নিয়ে অনুভূতি, চলচ্চিত্র নিয়ে ইচ্ছা ও ভবিষ্যত প্রত্যাশা বিষয়ে গাজী রাকায়েত কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। কেমন লাগছে?
কাজের স্বীকৃতি পেলে ভালো লাগে। আমারও ভালো লাগছে। স্বীকৃতি একজন মানুষকে অনুপ্রেরণা দেয়। আমার ক্ষেত্রেও তাই । আবার এটাও ঠিক যে, শিল্পের বিচার কখনো পুরস্কার দিয়ে হয় না। আমার কাছে জীবনের চেয়ে শিল্প বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। আগামীতেও তাই পাবে। আমি পড়ালেখা করেছি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই পেশায় থাকলে এক জীবনে অনেক টাকা কামাতে পারতাম। কিন্ত আমাকে তা টানেনি। আমাকে টেনেছে শিল্প। আমার কাছে সবচেয়ে বড় পুরস্কার সিনেমা। সেজন্য সিনেমা বানাই। এখন পুরস্কার পাওয়ার পর আরও বেশি দর্শক সিনেমাটি দেখবেন। তারা বেশি বেশি নামটি জানবেন। এটা অবশ্যই বড় আনন্দের। এই দৃষ্টিকোণ থেকে পুরস্কার পেয়ে আমি খুশি।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার দিক থেকে আপনার পরিচালিত সিনেমাগুলো রেকর্ড গড়েছে। বিষয়টি কিভাবে দেখেন?
আমার পরিচালিত 'মৃত্তিকা মায়া' ১৭টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার জিতে নিয়েছিল। এটা রেকর্ড। এবার 'গোর-দ্য গ্রেভ' পেল ১১ টি শাখায়। আমার নিজের জন্যও ঘরে এসেছে অনেকগুলো জাতীয় পুরস্কার। ধন্যবাদ দিতে চাই সম্মানিত জুরি বোর্ডকে। শিল্পের পথে হাঁটতে গিয়ে যাদের সহযোগিতা ও ভালোবাসা পেয়ে আসছি, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। খুব ইতিবাচকভাবে দেখছি বিষয়টি।
অনেকেই বলে থাকেন, জনপ্রিয় ধারার সিনেমা কম পুরস্কার পায়। আপনি কী মনে করেন?
এখানে আমাদের ভুল ধারণা আছে। জনপ্রিয় সিনেমা কম পুরস্কার পায়, এই ধারণা ঠিক না। 'গোর' সিনেমা যদি ব্যবসা করে, তাহলে কি এটাকে বাণিজ্যিক সিনমা বলব না? প্রতিটি সিনেমাতেই তো টাকা লগ্নি করা হয়। তাহলে শুধু এই কথা বলা হবে কেন? বাণিজ্য শব্দটি আপেক্ষিক। ভারতে কোন ধরনের সিনেমা জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছে? ধরুন, গোর যদি ১০ কোটি টাকা ব্যবসা করত, তাহলে কিন্ত এই ধারার সিনেমা বানানোর হিড়িক পড়ে যেত। সিনেমার ভাষা এক। আমরা নিজেরা বিভাজন তৈরি করি।

কোন ধরনের গল্প নিয়ে সিনেমা করতে আগ্রহী আপনি?
গোর বলি বা মৃত্তিকা মায়া বলি—গ্রামবাংলার জীবনের কথা থাকে আমার সিনেমায়। আমাদের জীবনের কথা থাকে। যে জীবন আমরা যাপন করি, যে জীবনের সঙ্গে শেকড়ের গল্প আছে, যে জীবনের সঙ্গে এই মাটি ও মানুষের জীবনের মিল আছে—সেই জীবন আমার সিনেমায় তুলে ধরতে আগ্রহী আমি।
আপনার কাছে ভালো সিনেমার সংজ্ঞা?
বেশি দর্শক দেখলেই ভালো সিনেমা হয়ে গেল, এটা ঠিক নয়। সিনেমাকে বিচার করতে হবে শিল্পমান দিয়ে। দর্শক দিয়ে মান বিচার করা যায় না। ভালো গল্প, ভালো অভিনয়, ভালো পরিচালনা হচ্ছে একটি ভালো সিনেমার বৈশিষ্ট্য। সবকিছু ভালো হতে হবে।
Comments