‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ লাকী ভাইয়ের সুরে আমার প্রথম গান: কুমার বিশ্বজিৎ

লাকী আখন্দ। ছবি: সংগৃহীত

প্রখ্যাত সুরকার, সংগীত পরিচালক ও গায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা লাকী আখন্দের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার। ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল না ফেরার দেশে পাড়ি জমান নন্দিত এই শিল্পী।

লাকী আখন্দের প্রয়াণ দিনে সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ তার স্মৃতিচারণ করে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার প্রথম বন্ধুত্ব হয়েছিল তার ছোট ভাই হ্যাপীর সঙ্গে। এটা ১৯৮০ সালের দিকের কথা। সে সময় সৈয়দ সালাহ উদ্দিন জাকী পরিচালিত বিখ্যাত "ঘুড্ডি" সিনেমার শুটিং করতে তারা গিয়েছিলেন কক্সবাজারে। আমারও একটা শো ছিল সেখানকার একটা হোটেলে।'

'হ্যাপীর বিখ্যাত গান "আবার এলো যে সন্ধ্যা" গানের শুটিং ছিল সেদিন। হ্যাপী অভিনয়ও করেছিল সেই সিনেমায়। শুটিং দেখতে গিয়ে এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয় হয়েছিল আমাদের। রাতে আমার শো দেখতে গিয়েছিল হ্যাপী। আমাদের মধ্যে তখন থেকেই বন্ধুত্ব হয়ে গেল,' বলেন তিনি।

কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, 'বন্ধুত্বের সূত্র ধরেই ১৯৮১ সালে আমার প্রথম ক্যাসেটের ৪টা গানের রেকর্ডিং করতে করতেই লাকী ভাইদের আজিমপুর কলোনির বাসায় উঠেছিলাম। ৪টা গানই ছিল আমার সুর করা। লাকী ভাই সেই গানগুলোর সংগীত পরিচালনা করেছিলেন। হ্যাপী আমার ২টি গানে গিটার বাজিয়েছিল। চোখ বন্ধ করলেই আজও তার গিটারের সুর শুনতে পাই। ধীরে ধীরে তাদের পুরো পরিবারের সঙ্গে আমার একটা গভীর সম্পর্ক হয়েছিল।'

'আমি আর হ্যাপী একসঙ্গে ফ্লোরে ঘুমাতাম তাদের বাসায়। লাকী ভাই একা থাকতেন বিছানায়। আমার মনে আছে, রাতের বেলা লাকী ভাইয়ের কাছে গিটারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম, ঝগড়া হতো আমাদের। ভোর পর্যন্ত কথা বলতাম গান নিয়ে। কেননা রাত ছাড়া তাকে সহজে পাওয়া যেত না।'

তিনি আরও বলেন, 'তাদের বাসায় ২০ দিন থেকে আমার প্রথম ক্যাসেটে "বেস্ট অব কুমার বিশ্বজিৎ" এর গান রেকর্ড করেছিলাম। এই গানগুলো রেকর্ড হয়েছিল রামপুরার অন্তরা নামের রেকর্ডিং স্টুডিওতে। এটা ছিল বিটিভির তখনকার নামকরা প্রযোজক সাকিনা সারোয়ারের রেকর্ডিং স্টুডিও।'

'লাকী ভাইয়ের সুরে আমার প্রথম গান ছিল "যেখানে সীমান্ত তোমার"। এর কথা কাওসার আহমেদ চৌধুরী ভাইয়ের লেখা। এছাড়া "সব কথা কী" শিরোনামে আরেকটি গান করেছিলাম একসঙ্গে। গান দুটি "মালঞ্চ" নামের একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে প্রচারিত হয়েছিল।'

'লাকী আখন্দের মতো সংগীত প্রতিভা আর আসবে কি না জানি না। এমন প্রতিভা দেখার ভাগ্য হবে না। অর্থের প্রতি কোনো লোভ ছিল না তার।'

লাকী আখন্দ তার দীর্ঘ সংগীত জীবন অসংখ্য জনপ্রিয় গানের সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন। এর মধ্যে  আছে এই নীল মনিহার, আবার এলো যে সন্ধ্যা, আমায় ডেকো না, মামনিয়া, আগে যদি জানতাম, হৃদয় আমার, যেখানে সীমান্ত তোমার, কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে, লিখতে পারি না কোনো গান, ভালোবেসে চলে যেও না ইত্যাদি।

১৯৫৬ সালের ১৮ জুন জন্ম লাকী আখন্দের। মাত্র ৫ বছর বয়সেই বাবার কাছে তার সংগীতে হাতেখড়ি। ১৯৬৩-১৯৬৭ সাল পর্যন্ত টেলিভিশন ও রেডিওতে শিশুশিল্পী হিসেবে সংগীত বিষয়ক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই তিনি এইচএমভি পাকিস্তানের সুরকার ও ১৬ বছর বয়সে এইচএমভি ভারতের সংগীত পরিচালক হিসেবে নিজের নাম যুক্ত করেন।

লাকী আখন্দের প্রথম একক অ্যালবাম 'লাকি আখন্দ' ১৯৮৪ সালে সারগামের ব্যানারে প্রকাশ পায়। ব্যান্ড দল 'হ্যাপী টাচ' এর সদস্য ছিলেন তিনি। হ্যাপী টাচ তার ছোট ভাই হ্যাপী আখন্দের স্মরণে তৈরি ব্যান্ড দল।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Bank governor Ahsan H Mansur's remarks

Bangladesh in ‘intensive discussion’ with UK to recover laundered money: BB governor

Mansur said Bangladesh had requested mutual legal assistance from several countries, including the UK

1h ago