আমাদের ডিম প্রেম

সস্তায় ডিম কিনতে শুক্রবার সকালে খামারবাড়িতে জনতার উপচে পড়া ভিড়। ছবি: পলাশ খান

কয়েক বছর আগে ফিদেল কাস্ত্রোর কিউবায় ১৮ জন ডিম চোরকে ধরা হয়। একটি দুটি নয়, তারা ৮০ লাখ ডিম চুরি করার দায়ে অভিযুক্ত হন। ডিম চোরেরা সাধারণ কেউ ছিল না, খোদ সরকারি কর্তাব্যক্তি। তারা কিউবার সরকার পরিচালিত কয়েকটি ফার্ম থেকে ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডিমগুলো চুরি করেছিলেন। যার জন্য সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে সাড়ে তিন লাখ ডলার। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা হিসাব, জাল রশিদ এবং কালোবাজারির অভিযোগ আনা হয়। আদালত তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়।

ডিম চুরি করে যেমন ধনী হবার ঘটনা আছে, তেমনি ডিমের ব্যবসা করেও ধনী হবার ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে। ডিম নিয়ে কৌতুকেরও কমতি নেই। আবার প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে হরদম ডিম ব্যবহারের ঘটনা ঘটছে বিভিন্ন দেশে। প্রতিবাদকারীরা রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী এবং নানা প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের উপর ডিম ছুঁড়ে প্রতিবাদ জানান। তাহলে ডিম শুধু আমিষের জোগান দেয় না, ডিমের বহুমুখী ব্যবহার কম বেশি সবার জানা।

ডিম আগে নাকি মুরগি আগে-সে বিতর্ক অনেক পুরনো। বিজ্ঞানীরা দাবী করেছেন, মুরগি আগে। তবে শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় হাজারো লোকের সমাবেশ থেকে উচ্চস্বরে জানান দেয়া হল ভিন্ন কথা। তারা কেউ মুরগি চেয়ে রাস্তায় নামেননি। সবার কাছেই ডিম আগে। তারা প্রমাণ করলেন; তাদের দাবি এত বেশি জোরালো ছিল যে বিজ্ঞানীদের দাবি ভুল প্রমাণ হবার উপক্রম হয়। ডিম চাই, ডিম চাই শ্লোগানে গোটা এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে। আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয়-এক দফা, এক দাবি--ডিম চাই, ডিম চাই। পুলিশ সময়মত হস্তক্ষেপ না করলে নতুন ইতিহাস তৈরি হতে পারত!

বাংলাদেশ অ্যানিমেল এগ্রিকালচার সোসাইটির সভাপতি কৃষিবিদ মোরশেদ আলম গতকাল প্রথম আলোয় লিখেছেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত প্রভৃতি দেশসহ সারা বিশ্বের ৪০টি দেশে ডিম দিবস পালিত হয়। তার মতে ডিম সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা দূর করে সবাইকে বেশি বেশি ডিম খেতে উদ্বুদ্ধ করতেই ডিম দিবস পালন করা হয়। তিনি জানান, ২০১৩ সালে বাংলাদেশে প্রত্যেক মানুষের বছরে গড় ডিম গ্রহণ ছিল মাত্র ৩৫-৩৭টি। মাত্র কয়েক বছরে তা বেড়ে ৭৫টিতে দাঁড়িয়েছে (সূত্র: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর)। ভোক্তাসচেতনতা বৃদ্ধি পেলে ডিম গ্রহণের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী বছরে প্রত্যেক মানুষের গড় ডিম গ্রহণ ন্যূনতম ১০৪টি হওয়া উচিত।

শুক্রবারের ঘটনা প্রমাণ করে ডিমের প্রতি আমাদের অগাধ প্রেম। যে প্রেমের টানে ঘড় ছেড়ে আমরা রাস্তায় নেমেছিলাম। ডিমের জন্য আমরা যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত আছি। বিশ্ব ডিম দিবসে ডিম নিয়ে এমন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ দুনিয়ার আর কোথাও কখনও হয়েছে বলে জানা যায় না। ডিম না পেয়ে অনেকে কম দামে ডিম বিক্রির আয়োজকদের বিরুদ্ধে ডিম চুরির অভিযোগও করেছেন। অভিযোগের তদন্তে একটা কমিশন গঠন করা যেতেই পারে। কোনো কমিশন করা না হলে কর্তাদের ডিমের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। ডিম হল গরিবের বন্ধু। গরিবকে সে সহজে এবং উন্নতমানের আমিষ জোগান দেয়। গরিবের আমিষ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলবে না। সরকারের নীতিওয়ালাদের উচিত কড়া নজর রাখা, গরিবের আমিষ যেন ধনীরা খেয়ে না ফেলেন!

বড়ই কষ্টের কথা হল, ডিম নিয়ে এত লঙ্কাকাণ্ড ঘটালাম আমরা, আর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ডিম খায় নাকি পর্তুগাল, চেক প্রজাতন্ত্র, এন্টিগুয়া, ফ্রান্স, মোনাকো, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীন,গুয়েতেমালা, মেক্সিকো ও প্যারাগুয়ের মানুষেরা। ওই তালিকায় আমাদের দেশের নাম নেই। এটা বড়ই পীড়াদায়ক। ওই ১১ দেশের তালিকায় সবার আগে আমাদের দেশকে নিয়ে যেতে হবে।

কয়েক দিন ধরে কাঁচা লঙ্কা নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড চলছে। প্রতি কেজি ২০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ডিম নিয়ে কুরুক্ষেত্র লঙ্কাকাণ্ডকে হার মানিয়েছে। আগামী দিনগুলোতে ডিম নিয়ে টেলিভিশনে টকশো হতে পারে, সংবাদপত্রে বিদগ্ধজনেরা নানা ডিম আন্দোলনের বর্তমান, ভবিষ্যৎ নিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত লেখা লিখতে পারেন। স্পন্সরশিপের জন্য মুরগির খামারীদের কাছে যাওয়া যেতে পারে। ডিম দেওয়া মুরগিদের উৎসাহ দিতে শুক্রবারের আন্দোলনের ভিডিও দেখানো যেতে পারে। তারা যাতে টেলিভিশনে টকশো দেখতে পারে সে পদক্ষেপও নিতে হবে। উৎসাহ পেলে প্রত্যেকের ডিম পাড়ার সংখ্যা বেড়ে যাবে। মুরগির কাছে বেশি বেশি ডিম চাইলে তাদেরকে উৎসাহ উদ্দিপনা দিতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Govt publishes gazette of 1,558 injured July fighters

Of them, 210 have been enlisted in the critically injured "B" category, while the rest fall under the "C" category of injured fighters

6h ago