উফ্‌ গরম! অভিযোগ জানাতে থানায় যেতে চান?

গরমে মেজাজ গরম হলে মানুষ কিনা করে! এক ব্রিটিশ নাগরিকের কথাই বলি তবে। ৪৪ বছর বয়সী ভদ্রলোক অবকাশ যাপন করতে ২০১৫ সালে আলজেরিয়ায় গিয়েছিলেন। এপ্রিল মাসে ফেরত আসলেন তার বাসস্থান ম্যানচেস্টারের সেডারটনে। কিন্তু অবকাশ যাপন সুখের না হওয়াতে মহাক্ষুব্ধ তিনি। গরম আবহাওয়া তার ছুটির দিনগুলো নষ্ট করে দিয়েছে, তার মাথা গরম করে দিয়েছে। ভদ্রলোক ছুটলেন স্থানীয় থানায়। পুলিশের কাছে তিনি গরম আবহাওয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চান।
সংগৃহীত

গরমে মেজাজ গরম হলে মানুষ কিনা করে! এক ব্রিটিশ নাগরিকের কথাই বলি তবে। ৪৪ বছর বয়সী ভদ্রলোক অবকাশ যাপন করতে ২০১৫ সালে আলজেরিয়ায় গিয়েছিলেন। এপ্রিল মাসে ফেরত আসলেন তার বাসস্থান ম্যানচেস্টারের সেডারটনে। কিন্তু অবকাশ যাপন সুখের না হওয়াতে মহাক্ষুব্ধ তিনি। গরম আবহাওয়া তার ছুটির দিনগুলো নষ্ট করে দিয়েছে, তার মাথা গরম করে দিয়েছে। ভদ্রলোক ছুটলেন স্থানীয় থানায়। পুলিশের কাছে তিনি গরম আবহাওয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চান।

তার কথা শুনে পুলিশেরই মাথা গরম। পুলিশ ভেবেছিল ভদ্রলোক কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অভিযোগ করতে চান। ছুটি নষ্ট হবার অভিযোগ পুলিশের কাছে গুরুত্বহীন। পুলিশ কোনোভাবেই অভিযোগ দায়ের করতে দিবে না। আবার অভিযোগ না করে ওই লোক থানা থেকেও যাবেন না।

উপায়ন্তর না দেখে পুলিশ ক্ষমতার গরম দেখিয়েছে। হুমকি দিয়েছে যে, সে যদি এখনি থানা থেকে চলে না যায় তাহলে পুলিশের কাজের ব্যাঘাত ঘটানোর দায়ে তার ছয় মাসের কারাদণ্ড হবে; আর্থিক জরিমানা হবে। অগত্যা, কি আর করার, পুলিশের গরমে বেচারা ঠান্ডা হয়ে থানা থেকে বিদায় হন।

পুলিশ তাদের ওয়েবসাইটে এই খবর প্রকাশ করে ভবিষ্যতে এমন অভিযোগের ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়। এতে অনেকেই বিনোদন পেয়েছেন নিশ্চয়। ব্রিটেনের অনেক খবরের কাগজেও ঘটনাটি প্রকাশ পেয়েছিল তখন। কিন্তু গরমের ভুক্তভোগী বেচারা বিচার পেলেন না!

গরম মানুষকে পাগল করে দেয়; যেমন পাগল করে ভালোবাসা। গরমে মাথা গরম হলে শরম চলে যায়! মানুষ গরম গরম কিছু করেই ফেলতে পারে। এক বন্ধু বললো, গরমে নাকি তার মাথার সার্কিট কাজ করছে না; জ্বলে পুড়ে গেছে হয়তো। তার নাকি পাগল পাগল লাগছে!

কত রকম গরম যে মানুষের মাথা গরম করে তার ইয়ত্তা নাই। গরমের দুনিয়া বড় বিচিত্র! টাকার গরমে বনানীতে ধনীর দুলালরা জঘন্য অপরাধ ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল। এখনো যে চেষ্টা করছে না, তা বলা যায় না।

কিছু লোক বিত্ত বৈভবের গরম দেখিয়ে শান্তি পায়; তাদের বুকের ছাতি চওড়া হয়। অন্য আরো অনেকে যারা আমাদের সেবক হবার কথা তারাও আমাদের সাথে গরম দেখায়! রাজনীতিবিদরা দেখায় ক্ষমতার গরম। গরম দেখায় পুলিশ আমলা-কামলা সবাই। আসলে গরম দেখানো কথা জনগণের যারা সব ক্ষমতার মালিক। কিন্তু সবাই গরম দেখিয়ে ঠান্ডা রাখে সেই জনগণকেই।

তবে এখন দেখুন উল্টো চিত্র। তীব্র দাবদাহে আমাদের ক্ষমতায়ন হয়েছে; আমরা জনগণ এখন গরম। অনেক গরম। যারা ক্ষমতা আর টাকার গরম দেখায় তারা ঠান্ডা। প্রকৃতির ন্যায় বিচার। ভারসাম্য রক্ষা হয়েছে তাহলে।

আমাদের গরম হওয়ার নানা খবর, ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমজুড়ে রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আমরা আরো কয়েক দিন গরম থাকার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারি!

গরম মাথায় আমরা কি গরম দেখাবো তাদেরকে ঠান্ডা যারা, শীতার্ত যারা? নাকি অন্য কিছু করব? থানায় যাবো অভিযোগ নিয়ে? পুলিশ কি অভিযোগ নিবে? অভিযোগ নিলেও বিপদ হতে পারে! পুলিশ নিরীহ কাউকে হয়রানি করতে পারে! পুলিশকে ক্ষমতার গরম দেখানোর সুযোগ করে দেওয়া কি ঠিক হবে?

তার চেয়ে বরং চলুন সয়ে যাই। কথায় বলে যে সহে সেই রহে! সয়ে গেলেই আমরা রয়ে যাব! আমরা সবই সয়ে যাচ্ছি। ঢাকা শহরের যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছি, ধৈর্য ধরছি, কোটি কোটি কর্মঘণ্টা অপচয় করছি, তাও আমরা সয়ে যাচ্ছি। বাস মালিকরা ইচ্ছামত ভাড়া আদায় করছে। সেটাও সয়ে যাচ্ছি। ওয়াসার পানিতে গন্ধ, তাও পান করে যাচ্ছি। লোডশেডিংয়ে মাঝে মাঝে গরম অন্ধকারে থাকা সয়ে গেছি। খাবারের বিষ হজম করে বেঁচে আছি। প্রমাণ করেছি আমরাই সর্বংসহা।

আরাম পেতে হলে একটু গরম তেল সহ্য করতেই হয়! শরীরের ব্যথা-বেদনা দূর করতে গ্রাম-গঞ্জে গরম তেলের মালিশের প্রচলন আছে। গরম তেল শরীরে লাগালে চামড়া জ্বলে। কিন্তু পরে আরাম পাওয়া যায়। এখন গরমে আমাদের চামড়া জ্বলছে; মাথা গরম হয়েছে। এই যন্ত্রণার পর আমরা কি আরাম পাব?

আমাদের জন্য সুখবর আছে। এসেছে মধু মাস। এই মধু মাসে, মিষ্টি জামের মধুর রসেই আমরা রঙিন করবো মুখ।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago