এরশাদকে আর ঠেকায় কে?

এরশাদের একটি স্বপ্ন আছে। তিনি আরেকবার সরকার প্রধান হতে চান। স্বৈরাচার নাম, যা কি না তাঁর কাছে অপবাদ, ঘুচাতে চান। বন্দুকের নলের জোরে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। স্বৈরাচারী শাসক হিসাবে দেশ শাসন করেছেন। আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। দুই ডজনের মতো মামলা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। জেল খেটেছেন, জরিমানা দিয়েছেন। কিন্তু গত দুই দশকের বেশি সময় স্বৈরাচারী খেতাব নিয়েও তিনি প্রমাণ করেছেন যে এরশাদ ফুরিয়ে যাননি...
ছবি: প্রথম আলোর সৌজন্যে

এরশাদের একটি স্বপ্ন আছে। তিনি আরেকবার সরকার প্রধান হতে চান। স্বৈরাচার নাম, যা কি না তাঁর কাছে অপবাদ, ঘুচাতে চান। বন্দুকের নলের জোরে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। স্বৈরাচারী শাসক হিসাবে দেশ শাসন করেছেন। আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। দুই ডজনের মতো মামলা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। জেল খেটেছেন, জরিমানা দিয়েছেন। কিন্তু গত দুই দশকের বেশি সময় স্বৈরাচারী খেতাব নিয়েও তিনি প্রমাণ করেছেন যে এরশাদ ফুরিয়ে যাননি। তিন বার তাঁর দল ক্ষমতার অংশীদার হয়েছে। বড় দুই দলের রাজনৈতিক দীনতার সুযোগ নিয়েছেন এরশাদ। তাই তিনি নিজেই ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে চান।

এরশাদের প্রধানমন্ত্রী হবার পথে আজকের দিন একটা মাইলফলক। আজ তিনি একটা নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। যত দূর জানা যায় তাঁর জোটে ৫৮টি রাজনৈতিক দল থাকছে। নাম জানা, নাম না জানা অনেক রাজনৈতিক দলের সমাহার। শুধু তাই নয় তাঁর মহাজোটে দুইটা জোট আছে। একটা ২২ দলীয় এবং অন্যটা ৩৪ দলীয়। এ যেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের মিলনমেলা! বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বিপুল সংখ্যক রাজনৈতিক দল নিয়ে আগে কেউ কোনও জোট করতে পারেনি। সেই দিক থেকে এরশাদ আজ একটা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করলেন।

এরশাদ নিজে যতই খুশি হন না কেন তাঁর রেকর্ডে কেউ কেউ খুশি নাও হতে পারেন। গত দুই বছর ধরে দেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত জোটের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন বিনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদা। তিনি ২০১৫ সালের শুরুতে ২৫টি দল নিয়ে একটা জোট গঠন করেন। নাজমুল হুদা প্রায় দুই বছর রেকর্ড ধরে রাখার পর এ বছর এপ্রিলে ৩৪টি ইসলামপন্থি দল জোটবদ্ধ হয়। রেকর্ড হারান হুদা। এই রেকর্ডের মালিক এখন এরশাদ।

শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া যারা ১৯৯১ সাল থেকে বার বার দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তাঁরা কিন্তু এরশাদের মতো এমন রেকর্ড সৃষ্টি করতে পারেননি। নাজমুল হুদা ২৫ দলীয় জোট গঠনের আগে খালেদা জিয়া একটা রেকর্ডের মালিক ছিলেন। তিনি ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন কয়েক বছর যাবৎ। তাঁর দলের সাবেক নেতা নাজমুল হুদা, যাকে খালেদা দুই দুই বার মন্ত্রী বানিয়েছিলেন, তাঁর রেকর্ড ভেঙে দিলেন, গড়লেন ২৫ দলীয় জোট।

আজ খালেদাও জিয়া খুশি হতে পারেন এরশাদের সাফল্যে। কারণ এরশাদ ভেঙে দিলেন নাজমুল হুদার রেকর্ড। আবার শেখ হাসিনা নিজেও খুশি হতে পারেন, কারণ এরশাদ দূরের কেউ নন। এরশাদ হলেন মন্ত্রীর মর্যাদায় তাঁর বিশেষ দূত। আরও একটা কারণ থাকতে পারে হাসিনার খুশি হবার। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া ২০ দলের জোট করে রেকর্ড গড়েছিলেন যখন হাসিনা নিজে ১৪ দলীয় জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। যাই হোক আমাদের দেশের রাজনীতিতে এসব ভাঙা গড়ার খেলা। নদীর যেমন এক কুল ভেঙে আরেক কুল গড়ে, তেমনি আমাদের দেশের রাজনীতিতে দল ভেঙে দল গড়ার ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ। আমরা সবাই নেতা হতে চাই। কেউ কর্মী থাকতে চাই না। নেতা হতে চাইলে দল দরকার। যত বেশি দল তত বেশি নেতার পদ। জনগণ চায় কি চায় না সেসবের দিকে কারও নজর নেই। জনগণের খেদমত বাদ দিয়ে তারা নেমে পড়েছেন রাজনীতির ময়দানে। জনগণ নিজেদের জন্য একটা জোটে গঠন করতে পারলো না আজ পর্যন্ত। যদি জনগণ একটা জোটে গঠন করতে পারতো তাহলে এই সব রাজনীতিবিদরা জনগণের জোটের কর্মী হতে চাইতো কি?

যাই হোক এরশাদের নতুন জোটের আবির্ভাবে বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক দলের সংখ্যা কত দাঁড়ালো? হিসাবটা এখন এমন--- ৫৮ + ২৫ + ২০ + ১৪ + আরও নাম না জানা অনেক দল। বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্রের জোয়ার বইছে মনে হয়। এত রাজনৈতিক দল সেরকম কিছুই ইঙ্গিত করে।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পাওয়া দলের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। ৪২টার মতো দলের নিবন্ধন আছে। নির্বাচন কমিশন এখন কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়ে বাকি সবগুলো দলকে নিবন্ধন দিতে পারে। তাহলে বড় বড় মহাজোটে থাকা মহান নেতাদের দলগুলো নিবন্ধন পাবে, জনগণের খেদমত করার জন্য নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। সকল দল অংশ নিতে পারলে এরশাদের ক্ষমতায় যাওয়ার রাস্তা সুপ্রশস্ত হবে। কেননা ৫৮টি দলের প্রত্যেকটি যদি ৩টি করেও আসন পায় তাহলে এরশাদের জোট পাবে ১৭৪টি আসন। তাঁর জোটে হবে মেজরিটি পার্টি। সরকার গঠন করতে হলে দরকার মাত্র ১৫১ আসন। তখন এরশাদের প্রধানমন্ত্রী হাওয়া আর ঠেকায় কে? জোটের শরিকরাই পারবে এরশাদের স্বপ্ন পূরণ করতে। তবে যদি অন্যথা হয়, এরশাদের জোটের সব দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া না হয়, তাদের নিবন্ধন নাই বলে, তাহলে এরশাদ কি করবেন? ৫৮ দল নিয়ে জোট করে এরশাদ প্রমাণ করেছেন তিনি স্বৈরাচার নন, কেননা তিনি সবাইকে নিয়ে চলতে চান। তিনি একাকী কিছু করতে চান না। যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে— এরশাদ এই নীতির লোক নয়।

তবে এরশাদের অনেক বয়স হয়েছে। ৮৭ পার হয়ে ৮৮ ছুঁইছুঁই। এই বয়সে এতগুলো দলের নাম মনে রাখতে পারবেন? সবার প্রতি সমান আচরণ করতে পারবেন? ৫৮টি নাম মনে রাখাই আপাতত এরশাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আর যেদিন এরশাদ তাঁর মহাজোটের নেতাদের নিয়ে কোন বৈঠক করবেন সেদিন সাংবাদিকদের জন্য মহা চ্যালেঞ্জ হবে অতো বিশাল একটা জোটের মিটিং এর খবর সংগ্রহ করা।

সব কথার শেষ কথা হলো নির্বাচন, ক্ষ্মতা। আগামী নির্বাচনের ঢোল বেজে উঠলো। জোট-মহাজোট রেডি হচ্ছে। জনগণ তৈরি তো?

Comments

The Daily Star  | English

Is Raushan's political career coming to an end?

With Raushan Ershad not participating in the January 7 parliamentary election, questions have arisen whether the 27-year political career of the Jatiya Party chief patron and opposition leader is coming to an end

2h ago