চিকুনগুনিয়ার দিনগুলোতে ঈদ বানানে বিতর্ক

সন্ধ্যার আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার সংবাদ প্রচারিত হবার সাথে সাথেই রেডিও টেলিভিশনে, পাড়া মহল্লার অলি-গলিতে, আকাশ-বাতাসে সর্বত্রই একটা গানের সুর ভেসে বেড়াবে--‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’
প্রতীকি ছবি

সন্ধ্যার আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার সংবাদ প্রচারিত হবার সাথে সাথেই রেডিও টেলিভিশনে, পাড়া মহল্লার অলি-গলিতে, আকাশ-বাতাসে সর্বত্রই একটা গানের সুর ভেসে বেড়াবে--‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’

এই গান ছাড়া রমজানের ঈদ কি কল্পনা করা যায়! একবার ভেবে দেখুনতো, কাজী নজরুল ইসলাম যদি গানটা না লিখতেন তাহলে শাওয়াল মাসের বাঁকা চাঁদ সন্ধ্যার আকাশে দেখা যাওয়ায় পর কোন গানের মাধ্যমে এমন করে আমাদের আনন্দের প্রকাশ ঘটত। অনেকে তাই মজা করে বলেন, এটা ঈদ সংগীত। গানটির সুর কানে না আসলে যেন ঈদের আনন্দ শুরুই হয় না।

উইকিপিডিয়া বলছে, ১৯৩১ সালে কাজী নজরুল ইসলাম গানটি লেখেন। লেখার চারদিন পর শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের গলায় গানটি রেকর্ড করা হয়। রেকর্ড করার দুই মাস পর ঈদের ঠিক আগে আগে তা প্রকাশ করা হয়। গ্রামোফোন কোম্পানি এর রেকর্ড প্রকাশ করে।

সেই থেকে হাজার হাজার শিল্পী গানটি গেয়েছেন। কখনও একা, কখনও দলগতভাবে।

কিন্তু এত দিন পর বিপত্তি বাধিয়েছে আমাদের বাংলা একাডেমি। এখন বাংলা একাডেমির পণ্ডিতরা বলছেন, নতুন করে ‘ঈদ’ বানান শিখতে হবে। ঈদ বানানে ‘ঈ’ এর পরিবর্তে ‘ই’ ব্যবহার করতে হবে। তারা বলছেন, ‘ই’ বর্ণে ঈদ লেখা নাকি ‘সংগততর’। তার মানে এতো দিন ধরে আমরা ‘ঈ’ বর্ণ ব্যবহার করে অসঙ্গতর ঈদ লিখে আসছি। এতো যুগ পর কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙল!

তাদের পণ্ডিতদের যুক্তি মেনে নিলে ঈদ সংগীতের কিছু জায়গায় কাঁটা-ছেঁড়া করতে হবে। ঈদ বানানে যত জায়গায় ‘ঈ’ ব্যবহার করা হয়েছে সে সব সংশোধন করতে হবে। নইলে ঈদ সংগীতে ভুল থেকে যাবে। কাজী নজরুল ইসলামের গানটির ঈদ বানানে ‘ভুল’ সংশোধন করবে কে?

পক্ষে বিপক্ষে বিতর্ক ভালোই জমে উঠেছে। সমালোচকেরা বাংলা একাডেমিকে তুলো ধুনো করে দিচ্ছেন। বাংলা একাডেমির পণ্ডিতদের পাণ্ডিত্য নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। একাডেমি কর্তৃপক্ষ বলছেন, এটা নিয়ে নাকি এত মাতামাতির কিছু নেই।

এ বিতর্কে একাডেমি কর্তৃপক্ষ খুব সহজে জয়ী হতে পারেন। ‘ঈ’ বর্ণটাকেই স্বরবর্ণের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিতে পারেন তাহলে সব ঝামেলা চুকে যাবে! ঈদ কে আর কেউ ‘ঈ’ দিয়ে লিখতে পারবে না। তখন ‘ই’ বর্ণ দিয়েই লিখতে হবে। তখন একাডেমি কর্তৃপক্ষ বেশি বেশি ঈদ আনন্দ পাবেন!

যাই হোক, আমরা এই বিতর্ক এখন এড়িয়ে চলি। আমাদের ঈদের আনন্দ মাটি না করি। জ্ঞানী গুণীরা করুন বিতর্ক। তাদের বিতর্ক আমাদের ঈদ আনন্দে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলেই আমরা গেয়ে উঠবো, ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’

তবে দুশ্চিন্তা অন্যখানে। শহরে নতুন আতঙ্কের নাম—চিকুনগুনিয়া। নামে চিকন হলেও তার গুণ অনেক বেশি মোটা! রোগটি শহরে নতুন। তবে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে দিন দিন। ডাক্তাররা বলছেন ভাইরাস জনিত এই রোগের বিস্তার ঘটে এডিস মশার মাধ্যমে। রোগের প্রধান লক্ষণগুলো হচ্ছে জ্বর, মাথা ব্যথা, হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা আর বমি বমি ভাব হওয়া। চিকুনগুনিয়ার জ্বর ২-৩ দিনের মধ্যে সেরে গেলেও শরীরে ব্যথা থেকে যায়।

ডাক্তাররা বলছেন, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তরা ব্যথায় যতই কষ্ট পান না কেন প্যারাসিটামল ছাড়া নাকি তেমন কোন ওষুধ নেই। জ্বর চলে গেলেও ব্যথা নিয়ে জীবনযাপন করতে হতে পারে দুই-তিন মাস। সর্বনাশ! এতো দেখি লিভিং উইথ পেইন অব চিকুনগুনিয়া!

এই রোগের প্রতিকার থেকে প্রতিরোধ নাকি সহজ। কারণ এডিস মশা দিনের বেলা কামড়ায়। তাই দিনের বেলা মশার কামড় থেকে সাবধান থাকতে হবে। প্রয়োজনে দিনের বেলাও মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। ঈদের ছুটিতে যারা একটু অলস দিন কাটাতে চাইছেন, সাবধান থাকবেন মশা থেকে। দিনের বেলায় মশারি না টাঙ্গিয়ে ঈদ ছুটি পার করবেন না। মশারি টাঙ্গিয়ে ঈদ উদযাপন করুন।

এমন দিনে ডাক্তারের চেয়ে বেশি প্রয়োজন তাহলে মশা মারার লোকের। আমাদের দুই মেয়র মহোদয় এখন আমাদের ভরসা। তাদেরকে মশা মারতে দক্ষ হতে হবে। মশা মারা যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ তা এখন রাষ্ট্রীয়ভাবেও স্বীকার করতে হবে। মশা মারা কেরানি বলে আর কাউকে হেয় করা চলবে না।

মেয়র মহোদয়ের লোকেরা মশা মারতে দক্ষ নন, তাই ঢাকা শহরে মশা বেড়ে গেছে। এমন করে মশা বেড়ে চললে মশা-ই আমাদের শহর দখল করে নিবে। আরো ভয়ের কথা হল, ঢাকা শহরের প্রায় অর্ধেক লোক চলে গেছে গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে। তারা থাকার সময় মশার কামড়গুলো সবাই ভাগ করে নেওয়া যেত! আগে ভাগে ১০টা কামড় থাকলে, ঈদের ছুটিতে খেতে হবে কমপক্ষে ২০টা। যারা নেই তাদের কামড়গুলো যারা ঢাকায় আছেন তাদেরকেই হজম করতে হবে। এখন দেখুন, শহরে অনেক বেশি লোক বাস করলে কিছু সুবিধাও পাওয়া যায়!

আমাদের আশঙ্কা হল ঈদ উদযাপনের সময়ে মশা মারার লোকজন ছুটিতে গেলে আরো মশার বিস্তার ঘটবে। মশা বেড়ে যাওয়া মানে হল চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হবার ঝুঁকিও বেড়ে যাওয়া। চিকুনগুনিয়ার দিনগুলোতে ঈদ আনন্দ কেমন হবে? যারা ইতিমধ্যে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত বা ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন তারা মাথা ব্যথা, হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা নিয়ে ঈদের দিন পার করবেন। তাদের কাছে ঈদ বানানে ‘ঈ’ বা ‘ই’ কোনো তফাত নেই।

দুই মেয়র মহোদয়কে ঈদ শুভেচ্ছার পাশাপাশি তাদের কাছে আবেদন, আপনারা মশা মারতে আরো তৎপর হউন। বেশি বেশি মশা মারুন, চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ থেকে আমাদের বাঁচান। আপনারা বলতেই পারেন, নির্বাচনের সময় চিকুনগুনিয়া থেকে আমাদের রক্ষা করতে কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি। তা ঠিক। তবে মশা মারার ওয়াদা করেছেন নিশ্চয়। তাই এখন মশা মারতে সর্বশক্তি নিয়োগ করুন, দরকার হলে কামান দাগান!

Comments

The Daily Star  | English
Dengue deaths in Bangladesh 2024

4 more die of dengue

660 patients were also hospitalised during this time

1h ago