ঢাকা শহরের হাওয়া বদল দরকার!

আষাঢ়ের নির্ঘুম রাতে না হয় ক’ফোটা বেশি জল ঝরেছে আকাশের চোখ থেকে। তাই বলে কি শহরকে এমন অকৃতজ্ঞ হতে হবে! ক’ফোটা বেশি জল বুকে ধারণ না করে উল্টো রাজপথে উগরে দিতে হবে! মাথার উপর অনাদিকাল ধরে অভিভাবক হয়ে রয়েছে যে আকাশ, যে আকাশ কোনো দিন অভিভাবকের জায়গা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়নি কিম্বা শহরের মাথার উপর ভেঙ্গে পড়েনি, তার চোখের জল নিয়ে এমন পরিহাস করা এই শহরকে মানায় না!
Water-logging
সামান্য বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পরতে হয় রাজধানীবাসীকে। ছবি: আনিসুর রহমান

আষাঢ়ের নির্ঘুম রাতে না হয় ক’ফোটা বেশি জল ঝরেছে আকাশের চোখ থেকে। তাই বলে কি শহরকে এমন অকৃতজ্ঞ হতে হবে! ক’ফোটা বেশি জল বুকে ধারণ না করে উল্টো রাজপথে উগরে দিতে হবে! মাথার উপর অনাদিকাল ধরে অভিভাবক হয়ে রয়েছে যে আকাশ, যে আকাশ কোনো দিন অভিভাবকের জায়গা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়নি কিম্বা শহরের মাথার উপর ভেঙ্গে পড়েনি, তার চোখের জল নিয়ে এমন পরিহাস করা এই শহরকে মানায় না!

মাত্র ক’ফোটা বেশি জল ঝরেছে তাতেই কি শহরের রাজপথ, অলি-গলিকে নদী-নালায় পরিণত হতে হবে! অবস্থাটা এমন যেন পথ-হারা নদী শহরে ঢুকে পরেছে। তাই আমরা পেলাম নদীমাতৃক ঢাকা শহর!

মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কারণ তৈরি করতে আকাশের চোখের জলকে দায়ী করে, ভুক্তভোগীদের ক্ষেপিয়ে তুলে কিসের প্রতিশোধ নিতে চায় রাজধানী শহর? কিসের শক্রতা আকাশের সাথে তার? চোখের জলে কী শহরের শুধুই সর্বনাশ লেখা ছিল?

ঘুম ভেঙ্গে অফিস যাব বলে যারা বের হয়েছেন, ঘুম ঘুম চোখে আমাদের ভবিষ্যৎরা যখন স্কুল কলেজের পথ ধরেছেন, দিনমজুর, রিকশা-চালকেরা যে যার গতিতে চলতে শুরু করেই থমকে গেছেন। তখন একযোগে সবাই জানতে পারলেন প্রিয় শহরের অক্ষমতার কথা, অযোগ্যতার কথা। এতে কে বেশি লজ্জিত হলো - শহর না কি বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়া আকাশের ভালোবাসা?

তবে শহরে বাস করেও বাসিন্দারা পক্ষপাত দুষ্ট নন। তারা সত্য প্রকাশে দ্বিধা করেন না। দুঃখ-কষ্ট ভোগান্তি যতোই হোক না কেন তাদের রসিকতাবোধ যে কমেনি তা বোঝা যায় তাদের বৃষ্টি-স্নাত সকালের কাব্য দেখে! ফেসবুকের পাতা জুড়ে কত ছবি; কত শত মতের অবাধ প্রকাশ। গণতান্ত্রিক যুগে মুক্ত বাক-স্বাধীনতা। ৫৭ ধারার নেই কোন ভয়! রোমেন রায়হানের একটি দারুণ ছড়া ভেসে বেড়াচ্ছে ফেসবুকের পাতায়। “খুঁজিয়া পাইনা নগর পিতা কে, সাঁতরে পাইনা কুল/দক্ষিণে নেই সাঈদ খোকন, উত্তরে আনিসুল।”

বাদল দিনেই কেবল এমন কাব্য প্রতিভার এমন দারুণ প্রকাশ সম্ভব! এমন বর্ষণ মুখর দিনে রাজনীতিবিদেরাও আষাঢ়ে গল্পের ঝাঁপি খুলে বসতে পারেন। জলে ভেজা জনতার প্রতি তাদের ভেতরে জমতে জমতে জমাট বাঁধা পাহাড় সমান ভালোবাসার গল্প বলতে পারেন। এই শহরে দুখে-সুখে আমরা সবাই আছি পাশাপাশি।

আষাঢ়ে আকাশের চোখে যতো জল সব ঝরুক শহরে শহরে। জল কী শুধুই জল? জলের সাথে কি ভালবাসা ঝরে পড়েনি? চিকুনগুনিয়ার জন্য দায়ী মশাদের ভাসিয়ে নিয়ে, শহরকে ধুয়ে মুছে দুর্গন্ধযুক্ত করে নতুন রূপে সাজাতে আকাশের ভালবাসা বৃষ্টির মত ঝরেছে। রাজধানীর শরীরের জঞ্জাল, ময়লার ভাগাড় ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করতে জলের রং পাল্টে গেছে কতবার। এতো জল না আসলে এ শহর পরিষ্কার রাখতো কে? তবে এ শহর এত ভালবাসা পাওয়ার অযোগ্য; ধারণ ক্ষমতা অল্প-স্বল্প; তাই উপচে পরেছে ভালবাসা রাজপথে, অলিতে গলিতে।

আমাদের এই শহরে একদিন সাগরকে বেড়াতে আসার আমন্ত্রণ জানাতে হবে। অথবা শহরকে সাগরপাড়ে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে শহর বুঝতে পারবে কতটা গভীর হয়ে ভালবাসা ধারণ করতে হয়। এতে আরও একটি বড় লাভ হবে। শহরের হাওয়া বদল হবে। কয়েকদিন সাগরপাড়ের মিষ্টি হাওয়ায় অসুস্থ শহর খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠবে! সংকীর্ণ মানসিকতায় পরিবর্তন আসবে। সাগর পাড়ে, ভেজা বালিময় বিচে লাখো লাখো লোকসহ শহর হাঁটছে - কী দারুণ হবে। বিশ্ব রেকর্ড হবে। গ্রিনিচ বুকে নাম উঠবে। কেউ কোনোদিন ভাঙতে পারবেনা এ রেকর্ড।

যারা শহরকে নানাভাবে দখল, ভোগ-উপভোগ করে শহরকে নিঃস্ব করেছে, রিক্ত করেছে, বুক ভরে ভালবাসা ধারণে অক্ষম করে তুলেছে, সে সব তথাকথিত দখলদার নাগরিকদেরকেও সাগর পাড়ে নিতে হবে। তাদেরও হাওয়া বদল দরকার। তাদের মানসিকতাও রোগে আক্রান্ত। তারা শুধু দখল করতে চায়। শুধু খাই খাই করে সারা বেলা। ক্ষুধার জ্বালা তাদের ঘুমাতে দেয় না। জেগে জেগে সারাবেলা তারা শুধু ভাবে আর কী কী দখলে নিবে। তাদের ক্ষুধার কাছে বলি হয়েছে শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী, কত খেলার মাঠ, খাল, নালা, পুকুর আরও কত কী। আকাশ নেমে আসার খোলা জায়গাও গেছে তাদের ক্ষুধার অনলে। পূর্ণিমার চাঁদ আর নেমে আসেনা খোলা প্রান্তর হারানো এই শহরের। তাদের ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়; পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।

এ শহরকে, শহরের দখলদারদের সুস্থ করে তুলতে হাওয়া বদলের বিকল্প নেই। তাই একটি প্রস্তাব পাশ করে, দিন-ক্ষণ ঠিক করে যত দ্রুত সম্ভব হাওয়া বদলের জন্য শহরকে সাগর পাড়ে নিয়ে যেতে হবে। তাছাড়া, শহরকে বাঁচানোর আর কী উপায় আছে?

Comments

The Daily Star  | English

Export Data: BB finds 6 types of wrongdoing

The central bank discovered six types of statistical wrongdoing that inflated export data, a development that led to a multibillion-dollar correction.

35m ago