বনানীর একজন ‘নির্দোষ ধর্ষক’!

​বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জন ছাত্রীকে ধর্ষণের অপরাধে অভিযুক্তদের একজন দাবি করেছে যে, সে বুঝতে পারেনি কারো সাথে জোরপূর্বক বা তার সম্মতি ছাড়া যৌন কর্ম সম্পাদন অপরাধ। বন্ধুদের সাথে এমনটা নাকি সে আগেও করেছে। তার কাছে কখনো এমন কাজ অপরাধ বলে মনে হয়নি। কর্মটি যে অপকর্ম এবং গর্হিত অপরাধ সে সম্পর্কে সে অবগত ছিল না!

বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জন ছাত্রীকে ধর্ষণের অপরাধে অভিযুক্তদের একজন দাবি করেছে যে, সে বুঝতে পারেনি কারো সাথে জোরপূর্বক বা তার সম্মতি ছাড়া যৌন কর্ম সম্পাদন অপরাধ। বন্ধুদের সাথে এমনটা নাকি সে আগেও করেছে। তার কাছে কখনো এমন কাজ অপরাধ বলে মনে হয়নি। কর্মটি যে অপকর্ম এবং গর্হিত অপরাধ সে সম্পর্কে সে অবগত ছিল না!

অপরাধীরা নিজেদের বাঁচাতে নানা ধরনের সাফাই গায়। ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত যুবকের সাফাইয়ের আইনগত দিক খতিয়ে দেখা যেতে পারে।

কোন ব্যক্তি তার কর্মের পরিণতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না থাকার অজুহাতে অপরাধ থেকে পার পেতে পারে না। তবে অপরাধ আইনে সে যদি নিজেকে প্রমাণ করতে পারে যে সে উন্মাদ বা নাবালক শিশু অথবা এমন কোন মানসিক রোগে আক্রান্ত যে তার নিজের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই তবে ওই অপরাধের দায় থেকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করতে পারে। এক্ষেত্রে অভিযুক্তকেই প্রমাণ করতে হবে সে উন্মাদ, নয়ত শিশু অথবা মানসিক রোগে আক্রান্ত।

বনানীর ঘটনায় অভিযুক্ত ধনীর দুলালটি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে কোনটাকে ঢাল হিসাবে বেছে নিতে চাইছে—উম্মাদ, শিশু নাকি মানসিক রোগ? সে উন্মাদ নয়, শিশুও নয়। তাহলে কি মানসিক রোগে আক্রান্ত, যে শুধু নারীদের সাথে বন্ধুত্বের নাম করে ফুসলিয়ে কোথাও নির্জনে ডেকে যৌন লালসা চরিতার্থ করতে চায়?

মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যক্তির নিজের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকার কথা নয়। কিন্তু তার হিতাহিত জ্ঞান আছে। যা বনানীর হোটেলের ঘটনা এবং পরবর্তীতে তার গাঢাকা দেওয়া প্রমাণ করে।

তাহলে দেখা যাচ্ছে ধর্ষণে অভিযুক্ত ধনীর দুলাল উন্মাদ নয়, শিশু নয় এমনকি জটিল কোনো মানসিক রোগেও আক্রান্ত নয়। তাহলে কেন সে নিজের কর্মের পরিণতি সম্পর্কে অবগত ছিল না? যে পারিবারিক পরিবেশে সে বেড়ে উঠেছে সেই পরিবেশ কি তাকে এমন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে তুলেছে? বাপের টাকার জোরে কি ন্যায়-অন্যায় ভুলে গেছে? বাপ নাকি প্রতি দিন তাকে দুই লক্ষ টাকা দিতো হাত খরচ হিসেবে! কোনো দিন টাকার হিসাব নিতো না। এমন বেপরোয়া সন্তানের জন্য কি বাপের দায় নেই?

কিন্তু দেখা যাচ্ছে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাপ আরো এক ধাপ উপরে। ১৩ মে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তার গুণধর পুত্রের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। “আরে মিয়া, আমার পোলা আকাম (ধর্ষণ) করছে তো কি হইছে। জোয়ান পোলা একটু-আধটু তো এসব করবই। আমিও তো করি। আমার যৌবন কি শেষ হয়ে গেছে? আমি এখনও বুড়া হইনি।”

এ যেন বাপ কা বেটা! বাপ নিয়মিত অর্থের জোগান দিয়েছে “ফুর্তি” করার জন্য। তাহলে বাপ তার অপকর্মের দোসর? অপরাধ সংঘটনে সহায়তাকারী? এমন বাপকে আইনের আওতায় আনা উচিত নয় কি?

কোনো পরিবারের “পরাক্রমশালী” পুরুষ কাউকে ধর্ষণ করলে, বা যৌন হয়রানি করলে শুধু ওই পুরুষ নয়, ওই পরিবারের সদস্যদেরকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। কেননা ওই পরিবারটি একজন ধর্ষককে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছে। ওই পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রমাণ করতে হবে যে তারা এমন অপকর্মকে কখনো সমর্থন করেনি।

রাষ্ট্রের যেমন দায় আছে নারী-শিশুদেরকে সম্ভাব্য ধর্ষক ও যৌন হয়রানিকারীদের থেকে রক্ষা করার তেমনি পরিবারেরও দায়িত্ব আছে পরিবারের সদস্যদের এমনভাবে গড়ে তোলা, শিক্ষিত করা যেন তাদের কাছে যেকোনো নারী ও শিশু নিরাপদ বোধ করে এবং পুত্রের যৌন অপরাধের সাফাই গেয়ে কোন বাবা ভবিষ্যতে এমন বক্তব্য না দিতে পারেন।

Comments

The Daily Star  | English
Onion price  Tk204 per kg | Onion prices surge in Dhaka after India’s export ban extension

Onion prices surge for supply squeeze after India’s export ban extension

Retailers were selling the homegrown variety of onion at Tk 200 a kg at Karwan Bazar today, compared with Tk 130 on Thursday

4h ago