ভূতে মারল ফখরুলকে!

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরের উপর হামলার নিন্দা জানানোর জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রশংসা করেছেন ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলটির এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি টুইটারে লিখেছেন, “রাজনীতিতে সহিংসতা ও ভাঙচুরের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখানো উচিত।” তার মতের সাথে দ্বিমত করার কিছু নাই। যেকোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এমনটাই প্রত্যাশা করেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরের উপর হামলার নিন্দা জানানোর জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রশংসা করেছেন ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলটির এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি টুইটারে লিখেছেন, “রাজনীতিতে সহিংসতা ও ভাঙচুরের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখানো উচিত।” তার মতের সাথে দ্বিমত করার কিছু নাই। যেকোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এমনটাই প্রত্যাশা করেন।

ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, “ওই ঘটনার সাথে যে, বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এমন আশ্বাস এবং আন্তরিকতার জন্য ওবায়দুল কাদের সাধুবাদ পেতেই পারেন।

তবে দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রথম পাতায় যে আলোকচিত্রটি প্রকাশিত হয়েছে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের সাহেবের প্রতিশ্রুতি কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে সংশয়ে ভোগা দোষের কিছু নয়। পত্রিকাটির খবরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ছাত্রলীগ, যুব লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারাও ফখরুলের গাড়িবহরে হামলায় জড়িত। আলোকচিত্রে দেখা যাচ্ছে, হামলার পর লাঠিসোটা নিয়ে মিছিল বের করা হয়েছে এবং পাশেই পুলিশের একটি ভ্যান।

অর্থাৎ লাঠি মিছিল হয়েছে পুলিশের নাকের ডগায় অথবা পুলিশ প্রহরায়। পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার বা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো তাগিদ বোধ করেনি। কেননা পুলিশ ভালো করেই জানে তারা ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। আর ক্ষমতাসীন দলের লোকজন যতই অপকর্ম, অপরাধ করুক, আইন ভঙ্গ করুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে শুধু আইনের শক্তিতে কাজ হয় না, উপর মহলের ইশারা ইঙ্গিত লাগে। হয়তো উপর মহলের কোনো ইশারা ছিল না বলেই হয়ত হামলার পর পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে পারেনি। আইন প্রয়োগে তাদের শক্তির অভাব ছিল।

ওবায়দুল কাদেরের আশ্বাস মোতাবেক হামলাকারীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে হলে পুলিশের সহযোগিতা লাগবে। অথচ ঘটনার সময় স্থানীয় পুলিশ হামলাকারীদের দেখেও দেখেনি। এখন তারা কিভাবে খুঁজে বের করবে দুষ্কৃতকারীদের? পুলিশ যদি পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন না করে, বা দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া না হয় তাহলে সুস্থ তদন্ত করে মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলাকারীদের খুঁজে বের করা সম্ভব নয়; শাস্তি দেয়া তো দূরের কথা। তাই ওবায়দুল কাদের যতই আন্তরিক হোন না কেন যে পুলিশ চোখের সামনে লাঠিসোটা নিয়ে মিছিলকারীদের দেখেও না দেখার ভান করেছিল, এবং যে পুলিশের স্থানীয় কর্তাব্যক্তিরা বলছেন যে বিএনপির নেতারা থানায় অভিযোগ দায়ের করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেই পুলিশ দিয়ে কি ওবায়দুল কাদেরের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা সম্ভব? দেশে দেশে গণতন্ত্রের উন্নতির জন্য গত কয়েক বছর ধরে অবিরাম কাজ করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুনাম অর্জনকারী সাবের হোসেন চৌধুরী তার নিজ দেশে গণতন্ত্রের এমন হাল দেখে যে প্রত্যাশার কথা টুইটারে বলেছেন সেটা কি পূরণ হওয়া সম্ভব?

নিকট অতীতে সরকারি দলের নেতা কর্মীদের অসংখ্য লাগামহীন, বেপরোয়া এবং আইন বিরোধী অপকর্মের বিরুদ্ধে পুলিশকে তেমন একটা ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। তাই বিএনপি মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলেও অবাক হবার কিছু নেই। ভদ্রলোক হিসেবে ওবায়দুল কাদের অথবা সাবের হোসেন চৌধুরী তাদের প্রতিশ্রুতি এবং প্রত্যাশা পূরণ না হলে বিব্রত বোধ করতেই পারেন। তাদেরকে বিব্রত করার জন্য মির্জা ফখরুল সাহেব একটু হলেও দায়ী!

রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে দুর্গতদের দেখতে যাওয়ার কী দরকার ছিল মির্জা ফখরুল এবং তার দলের অন্য নেতাদের? কয়েক দিন আগে আওয়ামী লীগের এক প্রভাশালী নেতা বলছিলেন বিএনপি ফটোসেশন করতে পাহাড়ে যেতে পারে। মির্জা ফখরুলরা তবে কি ফটোসেশন করতে যাচ্ছিলেন বলে রাঙ্গুনিয়ায় তাদেরকে থামিয়ে দেওয়া হল? তাই যদি হয় তাহলে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা নিশ্চয় একটা মহৎ কাজ করেছেন। সে জন্যই হয়তো পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন নেয়নি। দুর্গতদের নিয়ে রাজনীতি করা আসলেই চরম গর্হিত কাজ এবং অন্যায়।

তবে আওয়ামী লীগের রাঙ্গুনিয়ার স্থানীয় সংসদ সদস্য বলেছেন, ফখরুলের গাড়িবহরের ধাক্কায় নাকি দুজন লোক আহত হওয়ায় স্থানীয়রা হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনার সাথে ক্ষমতাসীন দলের কেউ জড়িত নয় বলেও তিনি দাবি করেন। তবে স্থানীয় হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কোনো গাড়ির ধাক্কায় আহত হয়ে কেউ চিকিৎসা নিতে আসেনি। মানে অমন ঘটনা আসলে ঘটেনি। কেউ যেহেতু আহত হয়নি, তাহলে স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলা চালায়নি।

আমরা যদি ধরে নেই ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের কেউ ফখরুলের গাড়িবহরে হামলার সাথে জড়িত ছিল না। গাড়ির ধাক্কায় কেউ যেহেতু আহত হয়নি, তাই স্থানীয় গ্রামবাসীর ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ ঘটেনি। তাই তারাও ফখরুলের গাড়ি ভাঙচুর করেনি, ফখরুলকে আহত করেনি, তাদের রাস্তা আটকে দেয়নি। তাহলে গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে কে? নিশ্চয় এটা এক দল ভুতের কাজ। আশপাশের কোন পাহাড় থেকে নেমে আসা ভুতেরা গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে। অথচ খালেদা জিয়া এবং তার দলের নেতার এই হামলার জন্য প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগকে দায়ী করে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছে! কোনো দুষ্কৃতিকারী হলে পুলিশ দেখতে পেতো, অ্যাকশন নিতো। দিনের আলোয় পুলিশ ভুতদের দেখতে পায়নি; তাই কারো বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এখানে পুলিশের দায়িত্ব পালনে কোনো গাফিলতি হয়নি। পুলিশ হাজার তদন্ত করলেও ভুতদের নাগাল পাবে না। ভুতরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। তবে ভুতেরা বিনপির উপর ক্ষিপ্ত কেন? বিএনপি কি অতীতে পাহাড়ের কোনো ক্ষতি করেছে, ভুতদের ক্ষতি হয়েছে যে জন্য?

হামলার পর ফখরুল বলেছেন তিনি জীবনে এমন হামলার শিকার হননি। অর্থাৎ ৬৫ বছর বয়সী ফখরুল এই প্রথম বার ভুতের মার খেলেন! প্রতিপক্ষ ফখরুল মার খেলে ক্ষমতাসীনদের খুশি হবার কারণ নেই। ওই ভুতরা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বা সরকারের বন্ধু নয়। কখনো বন্ধু ছিল না, কখনো বন্ধু হবে না। তাদের অপকর্মের দায়ভার সরকার ও সরকারি দলকেই নিতে হবে। এই পুলিশ দিয়ে ভুত তাড়ানো যাবে না, কেননা সরষের ভিতরেও ভুত আছে। ভুত তাড়াতে যদি জলদি ওঝা ডাকা না হয় তাহলে সরকার ও দলের আরো বদনামের কাজ তারা করবে। প্রতিপক্ষরা রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে। রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগকেই ওঝার দায়িত্ব পালন শুরু করতে হবে; অতি শিগগির। বাকি কাজ তাহলে পুলিশ করতে পারবে।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago