রাজা গেলে রাজা আসে, শরিফ গেলে শরিফ!

পাকিস্তানের রাজনীতিতে কাকতালীয় একটা ব্যাপার লক্ষণীয়: রাজা গেলে রাজা আসে, শরিফ গেলে শরিফ।

পাকিস্তানের রাজনীতিতে কাকতালীয় একটা ব্যাপার লক্ষণীয়: রাজা গেলে রাজা আসে, শরিফ গেলে শরিফ।

২০১২ সালে আদালত অবমাননায় দণ্ডিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ হারান ইউসুফ রাজা গিলানি। স্বল্প সময়ের মধ্যে সংসদ নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে। নতুন প্রধানমন্ত্রী হন-আরেক রাজা। গিলানির নামের মাঝে ছিল “রাজা”। আর সে সময়কার নতুন প্রধানমন্ত্রীর নামের শুরুতেই “রাজা”। তিনি রাজা পারভেজ আশরাফ।

চার বছর পর আবার আরেক প্রধানমন্ত্রীর বিদায় ঘণ্টা বাজাল আদালত। সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় তথ্য গোপন করার দায়ে দণ্ডিত হয়ে জুলাইয়ে বিদায় নিলেন নওয়াজ শরিফ। নওয়াজ এবং তার দল কালবিলম্ব না করে ঠিক করল, নতুন প্রধানমন্ত্রী হবেন আরেক শরিফ--শাহবাজ শরিফ, যিনি নওয়াজের ছোট ভাই। তবে বাধা হয়ে দাঁড়াল শাহবাজের এমপি না হওয়ার বিষয়টা। তাতে কি--একটা উপায় বের করা হল। কিছু দিনের জন্য অন্য একজন প্রধানমন্ত্রী হবেন। ব্যস, তাতেই কপাল খুলে গেল শহিদ খাকান আব্বাসির। তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন। তবে তার আয়ু মাত্র ৪৫ দিন। এই ৪৫ দিনের মধ্যে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন নওয়াজ সংসদ সদস্য থাকার অযোগ্য হয়ে পড়ায় সেই শূন্য আসনে উপ নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে। ঐ উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে এমপি হবেন শাহবাজ শরিফ। শাহবাজ সে জন্য পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন।

তবে শাহবাজ শরিফের রাজ কপাল বটে! পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন একদিন আগে নওয়াজের দল মুসলিম লিগকে নতুন নেতা নির্বাচন করতে বলেছে। কেননা রাজনৈতিক দল পরিচালনা আইন অনুসারে এমপি হবার অযোগ্য কেউ দলের প্রধান হওয়া তো দূরের কথা, দলের সদস্যও হতে পারবেন না। নওয়াজ আবার ভাইয়ের দিকে নজর দিলেন। শাহবাজ দলের প্রধানও হবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নওয়াজের মুসলিম লিগ। আর শাহবাজের ছেলে হবেন পাঞ্জাবের নতুন মুখ্যমন্ত্রী। তিনিও আরেক শরিফ--হামজা শাহবাজ শরিফ। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আদালত কর্তৃক নওয়াজের অপসারণের পর যারা মনে করেছিলেন এই বুঝি “পলিটিকাল ডাইন্যাস্টির” অবসান হতে চলেছে, তারা এখন নতুন শরিফের উত্থান দেখবেন। নতুন “পলিটিকাল ডাইন্যাস্টি”।

২০১২ সালে এবং ২০১৭ সালে পরপর দুজন প্রধানমন্ত্রী আদলত কর্তৃক অপসারিত হবার পর পাকিস্তানের ৭০ বছরের ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বজায় থাকল। ১৯৪৭ সালে জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত পাকিস্তানে দুই ডজনের বেশি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু কেউ তাদের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। তবে পাকিস্তানের গত সংসদ ৬৫ বছর পর প্রথম বারের মত মেয়াদ পূর্ণ করে। এই সংসদে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন দুই রাজা। বর্তমান সংসদও এখন পর্যন্ত মেয়াদ পূর্ণ করার পথে আছে। মেয়াদ পূর্ণ করতে পারলে এই সংসদ তিন জন প্রধানমন্ত্রী উপহার দেওয়ার রেকর্ড করবে।

পাকিস্তানের সাথে তুলনা করলে আমাদের জাতীয় সংসদ এক ধাপ এগিয়ে আছে বলতে হয়। আমাদের কোনো সংসদ প্রথম মেয়াদ পূর্ণ করে ২০০১ সালে। তারপর আরও দুইটা সংসদ মেয়াদ পূর্ণ করেছে। সর্বশেষ তিনটি সংসদের কোনটিকেই একাধিক প্রধানমন্ত্রী উপহার দিতে হয়নি। তবে কি আমরা দাবি করতে পারি যে, আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে ভালো? অনেকে উল্টা দাবি করেন যে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমাদের থেকে ভালো। এমন দাবির পেছনে তারা সেদেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল এবং তার নেতাদের মধ্যকার সুসম্পর্কের কথা বলেন। এই যুক্তি খণ্ডন করতে আমাদের দেশের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল এবং নেতাদের মধ্যকার সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করা সম্ভব হয় না।

আবার পাকিস্তানের উচ্চ আদালত পরপর দুজন প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করার পরও ক্ষমতাসীন দল ও তার নেতাদের অনেক সংযত প্রতিক্রিয়া লক্ষণীয়। আমাদের এখানে উল্টা চিত্র। আদালতের রায় পক্ষে গেলে স্বাগতম। বিপক্ষে গেলে, রায়ে সমালোচনা হলে, আদালতের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। স্বাধীন বিচারবিভাগকে বলা হয় গণতন্ত্রের ‘হলমার্ক’। স্বাধীন বিচারবিভাগ ছাড়া গণতন্ত্রের বিকাশ কল্পনাও করা যায় না। সে কথা আমরা অনেক সময় ভুলে যাই। গণতন্ত্রের কথা শুধু মুখে না বলে কাজেকর্মেও আমাদেরকে গণতান্ত্রিক হতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago