রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের এখনই সময়

UNSC

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিশ্বজুড়ে পছন্দ না করার অসংখ্য কারণ রয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই নানা অশোভন এবং আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে তিনি সমালোচিত এবং নিন্দিত। তার অনেক মন্তব্য মানবাধিকার বিরোধী হিসেবেও আখ্যায়িত হয়েছে। সেই ট্রাম্পও এখন রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলছেন।

ট্রাম্পের চরম শরণার্থী বিরোধী অবস্থানের কারণে আমাদের অনেকের ধারণাতেও ছিলো না যে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট সমাধানে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এতো জোরালো বক্তব্য দেবেন। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মঙ্গলবার দেওয়া তার প্রথম ভাষণে এ সংকট সমাধানে দ্রুত এবং জোরালো পদক্ষেপ নিতে তিনি নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। এ যেন “মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি”।

রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রশ্নে ট্রাম্পও মানবতার পক্ষ নিলেন। অথচ শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি ক্ষমতার মোহে এতটাই অন্ধ হয়ে রয়েছেন যে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটানোর দায়ে অভিযুক্ত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছেন। সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করতে গিয়ে সু চি মিথ্যাচার পর্যন্ত করছেন।

ট্রাম্পের আহ্বানের মধ্যে দিয়ে একটি বিষয় পরিষ্কার হলো: রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট সমাধানে মিয়ানমারের উপর নিরাপত্তা পরিষদের দ্রুত এবং জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্যোগ নিলে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকবে। পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে তিন সদস্য আমাদের পক্ষে রয়েছে। যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স আগে থেকেই রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ বন্ধ করতে মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করে যাচ্ছে। অন্য দুই সদস্যর বিরোধিতার কারণে তাদের সে উদ্যোগ কার্যকর হতে পারছে না। চীন এবং রাশিয়া আগে থেকেই মিয়ানমারকে সমর্থন দিচ্ছে। তারা আগে নিরাপত্তা পরিষদের কয়েক দফা উদ্যোগ ভেস্তে দিয়েছে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া ট্রাম্পের ভাষণের অন্যান্য বিষয়ে তার এবং তার সরকারের নীতির সঙ্গে আমাদের দ্বিমত থাকতেই পারে। সেসবের সমালোচনা হতে পারে। ট্রাম্প তার নিজের দেশে আর শরণার্থী চান না। এমনকি, তার দেশে বসবাসরত অনেককে বের করে দেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন। কেউ কেউ বলতে পারেন চীনকে শায়েস্তা করতেই ট্রাম্প রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের ভূমিকা প্রত্যাশা করেছেন। তবে সেসব প্রসঙ্গ টেনে এনে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট সমাধানে ট্রাম্পের আহ্বানের সমালোচনা না করাই ভালো। কেননা, আমরা কখনও বলিনি যে যুক্তরাষ্ট্রকে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী নিতে হবে। আমরা চাই রোহিঙ্গারা যেন তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন। নিজ দেশে নাগরিকত্ব ফিরে পান, এবং সেখানে নিরাপদে বসবাস করতে পারেন। তাই রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট সমাধানে ট্রাম্পের অবস্থানকে আমাদের পক্ষে কাজে লাগাতে হবে। আমরা যেন না বলি যে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে শরণার্থী বিরোধী ট্রাম্পের কাছে কোন সহযোগিতা চাই না। এমন অবস্থান ব্যক্ত করলে তা হবে আমাদের অপরিপক্ব কূটনীতির বহিঃপ্রকাশ। এই মুহূর্তে আমাদের এমন কোন ভুল পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে জরুরি দরকার হলো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সহযোগিতা।

সরকার তার কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এ তৎপরতাকে আরও জোরদার করতে হবে। আমাদের অবস্থান ন্যায্য এবং মানবতার পক্ষে। তাই কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য দেশকেও সম্মত করাতে হবে যাতে তারা আমাদের অবস্থানের পক্ষে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে। তারা যেন চীন এবং রাশিয়াকে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করাতে ভূমিকা রাখতে পারে।

চীন এবং রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক বিদ্যমান। এক বছর আগে চীনের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। চীন তার বাণিজ্যিক এবং সামরিক স্বার্থে মিয়ানমারকে সমর্থন অব্যাহত রেখেছে সেই ৯০ এর দশক থেকে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উচিত দ্রুত চীনে সফরে যাওয়া। সে দেশের নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে আলোচনায় বসে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তাদের অবস্থান শিথিল করতে হবে। এই অঞ্চলে তার নিজের বাণিজ্যিক স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখতে মিয়ানমারকে চীনের যেমন দরকার, তেমনি তার প্রয়োজন বাংলাদেশকেও। তাই আমাদের অবস্থানগত সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে চীনকে তার মিয়ানমার ঘেঁষা নীতি পরিবর্তন করাতে হবে। চীন অবস্থান শিথিল করলে রাশিয়ার অবস্থান স্বয়ংক্রিয়ভাবে বদলে যাবে। মিয়ানমার ইস্যুতে রাশিয়া কখনও চীনের অবস্থানের বাইরে যাবে না। তাই মিয়ানমার প্রসঙ্গে চীনকে তার কট্টর অবস্থান থেকে একটু সরাতে পারলেই নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট সমাধানে একটি যৌক্তিক প্রস্তাব পাশ করানো যাবে।

এখন বিশ্বজনমত মিয়ানমারের বিপক্ষে। রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নিধনের দায়ে মিয়ানমার সরকার এবং সামরিক বাহিনী সারা বিশ্বের কাছে অভিযুক্ত। মিয়ানমারের নৈতিক অবস্থান দুর্বল। পক্ষান্তরে, আমাদের নৈতিক অবস্থান অনেক মজবুত। চার লাখের বেশি শরণার্থীকে আমরা আশ্রয় দিয়েছি। নিজেদের সাধ্যের মধ্যে আমরা মানবিকতার অনন্য নজির স্থাপন করেছি। নৈতিকতার শক্তিতে বলীয়ান আমাদের কূটনীতি। গত কয়েক দশক ধরে জমে ওঠা রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের এখনই উপযুক্ত সময়। বিলম্ব হলে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি অন্য কোন দিকে সরে যেতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

10h ago