সবার জন্য বৃষ্টি আইন চাই!

সামান্য বৃষ্টিতেই কাজি নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ে জলাবদ্ধতা। ছবি: স্টার

একটু রোমান্টিক হলে রাজধানী শহরে থেকেও ‘এ ওয়াক ইন দি সী বীচ’ এর আনন্দ উপভোগ করা যেতেই পারে!

আমাদের জাতীয় সংসদ ভবন এর দক্ষিণ এবং আড়ং ইন্টারসেকশনকে আজ সী বীচ মনে হতে পারে। একটা করে বাস যেন সাগর সাঁতরে যাচ্ছে, আর ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে তীরে! পা ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে দাঁড়িয়ে থাকা পর্যটকদের। অন্যদের দেখে উৎসাহ বোধ করলাম। জুতা খুলে নিলাম হাতে, প্যান্ট একটু গুটিয়ে নেমে পরলাম সী বীচে। আহা! কি আনন্দ! ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে পায়ে, একটু একটু করে হাঁটছি ফার্মগেটের দিকে।

একটা রিকশা ডাকলাম, ফার্মগেট পর্যন্ত ভাড়া হাঁকল ৫০ টাকা। বললাম, আরে ভাই ১০০ টাকা দিব! তবুও বেচারা আসল না। অন্য জনকে ডাকলাম, সে চাইল ৭০ টাকা। এই পথে ভাড়া বেশী। দূরত্ব অনুযায়ী ২০ টাকা ভাড়া হতে পারে। কিন্তু বৃষ্টি বাদল না থাকলেও ভাড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা। কারণ, সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে রিকশা চলাচল বারণ। সেই ‘না’ কে ‘হ্যাঁ’ বানিয়েছেন রিকশাচালকেরা। কয়েক জনের সাথে কথা বলে জেনেছি রহস্য। যারা ট্রাফিক আইন প্রয়োগ করতে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকেন, তাদেরকে তারা ম্যানেজ করেছেন। অর্থাৎ কিছু টাকা দিয়ে আইনের প্রয়োগ বন্ধ করা হয়েছে।

যাই হোক, ভাবলাম যে আসাদ গেটে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছি পর্যটকদের অসম্ভব ভিড় আর জ্যামের কারণে, এখন সী বীচে এসে রিকশাতে না চড়ি। শুরু করলাম ফার্মগেট অভিমুখে পদযাত্রা। একটু এগিয়ে এসে দেখি সংসদের দুইটা প্রবেশ মুখ ডুবে আছে। অনেক বড় বড় গাড়ি হাঁকিয়ে দুই চারজন পানি তোয়াক্কা না করে ঢুকে পড়ছেন ভেতরে। গাড়ির ভেতরে এমপি মহোদয়রা আছেন মনে হল। আজ বিকালেই সংসদ অধিবেশনে কেউ দাবি তুলতেই পারেন যে, সংসদ ভবনের প্রবেশ মুখে পানি জমা বেআইনি ঘোষণা করে একটা আইন করা হোক! আইন প্রণয়নে সংসদের অনেক ক্ষমতা, চাইলেই তেমন আইন করতে পারে। তবে বেয়াড়া বৃষ্টি আইন ভাঙতে দক্ষ!

সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে লম্বা যানজট। পর্যটকে ঠাসা বাস মিনি বাস লাইন ধরে দাঁড়িয়ে গেছে। অপর পাশে সংসদ সদস্যদের আবাসিক এলাকা থেকে সাংসদদের নিয়ে সাঁই সাঁই করে দুইটা মস্ত গাড়ি আসলো, জ্যাম দেখে সেই গাড়িগুলো রং সাইড দিয়েই ছুটল ফার্মগেটের দিকে। মনে পড়ল নিন্দুকদের কথা, এমন কাজের জন্য তারা ল মেকারদের ল ব্রেকার বলেন!

ছাতা মাথায় বৃষ্টির মধ্যে চলতে চলতে মনে পড়ল ক্রিকেট খেলায় বৃষ্টি আইনের কথা। বৃষ্টি নামলে কখনও সীমিত ওভারের খেলা হয়, কখনো খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। রাজধানীবাসীর জন্যও বৃষ্টি আইন করার প্রস্তাব করতে পারেন আমাদের সংসদ সদস্যরা। সরকার একটু মানবিক দৃষ্টি দিলেই আইন পাশ হবে। বৃষ্টির পরিমাণ বুঝে ব্যবস্থা, ক্রিকেট খেলার মতো। কখনো সীমিত স্কুল কলেজ, অফিস। কখনও সব কিছু পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হবে। পরিত্যক্ত ঘোষণা হলে স্কুল কলেজ, অফিসগামীরা যে যার মতো শহরের সী বীচে সময় কাটাতে পারবেন। শুধু সংসদ ভবন এলাকা নয়, মেঘদূতেরা সাগর থেকে পানি বয়ে এনে রাজধানীর অসংখ্য জায়গায় এমন সী বীচের জন্ম দিচ্ছে। তাই সবার জন্য বৃষ্টি আইন চাই, আইনের সমান প্রয়োগ চাই!

Comments

The Daily Star  | English

Child rape cases rise nearly 75% in 7 months

Child rape cases in Bangladesh have surged by nearly 75 percent in the first seven months of 2025 compared to the same period last year, according to data from Ain o Salish Kendra (ASK).

5h ago