মুক্তচিন্তার পথিক: নূরজাহান বোস

নূরজাহান বোস একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশি লেখক, যিনি বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধানে অবিচল সংকল্প ও দৃঢ় অঙ্গীকার দেখিয়েছেন। তিনি আজীবন বাংলাদেশে নারী অধিকার ও স্বাধীন চিন্তাধারার প্রচারণায় কাজ করে গেছেন।
নূরজাহান বোস
নূরজাহান বোস। স্কেচ: সজীব

প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছরে পদার্পণে বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার প্রচার ও প্রসারে নিরলস কাজ করা ১২ কীর্তিমানকে 'সেনটিনেল অব ফ্রিডম অব থট' সম্মাননা দিচ্ছে দ্য ডেইলি স্টার।

আজ শনিবার ঢাকার র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার পাটাতন তৈরিতে অগ্রগামী এবং চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারবন্ধ এই ১২ সূর্যসন্তানকে সম্মাননা দেওয়া হবে।

তাদেরই একজন নূরজাহান বোস

নূরজাহান বোস একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশি লেখক, যিনি বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধানে অবিচল সংকল্প ও দৃঢ় অঙ্গীকার দেখিয়েছেন। তিনি আজীবন বাংলাদেশে নারী অধিকার ও স্বাধীন চিন্তাধারার প্রচারণায় কাজ করে গেছেন।

১৯৩৮ সালে পটুয়াখালীতে জন্ম নেয়া নূরজাহান ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র হত্যার ঘটনায় তার নিজ বিদ্যালয়ে শোক প্রকাশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন। পুরো শিক্ষাজীবনজুড়ে তিনি বিশেষ আগ্রহ নিয়ে প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি কলকাতার শরণার্থী শিবিরে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি কবি সুফিয়া কামালের নির্দেশনায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদে যোগ দেন।

পরবর্তীকালে নূরজাহান বোস ওয়াশিংটনে পাড়ি জমান। সেখানেও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতি তার অঙ্গীকার কমেনি; বিদেশে বসেও তিনি এই সংস্থার জন্য তহবিল সংগ্রহে নিয়োজিত থাকেন। ১৯৮৪ সালে তিনি ওয়াশিংটনে 'সংহতি' নামে একটি সমাজকল্যাণ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থাটি বাংলাদেশের গৃহহীন নারীদের আশ্রয় দেওয়ার প্রকল্প রোকেয়া সদন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্তমানে সংহতি বাংলাদেশের ৪ জেলায় দুর্বল, প্রান্তিক ও নিপীড়িত নারীদের সেবা করছে।

১৯৮৯ সালে নূরজাহান বোস অলাভজনক সংস্থা 'আশা' প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের বাইরে থাকাকালীন যেসব দক্ষিণ এশীয় নারী নির্যাতনের শিকার হন, তাদের এই সংস্থাটি সহায়তা দেয়। বাংলাদেশে ফেরার পর তিনি বিশিষ্ট মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হন।

নূরজাহানের আত্মজীবনী 'আগুনমুখার মেয়ে' অত্যন্ত তাৎপর্যপুর্ণ। এই বইয়ে তিনি আগুনমুখা নদীর তীরে অবস্থিত একটি গ্রামে কৈশোরকাল কাটিয়ে পরবর্তী জীবনে নানা সংগ্রামের ভেতর দিয়ে সব বাধা-বিপত্তি জয় করে বেড়ে ওঠার চমকপ্রদ কাহিনীর বর্ণনা দেন। ২০১৬ সালে তিনি এই অসামান্য আত্মজীবনীর জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।

নারীর ক্ষমতায়ন এবং চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি আজীবন নিষ্ঠার জন্য নূরজাহান বোসকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে দ্য ডেইলি স্টার। তার নিরলস কাজ অগণিত মানুষের জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে, তাদের নিজেদের জীবন নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী গড়ে তোলার শক্তি দিয়েছে এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার সক্ষমতা দিয়েছে।

Comments