আওয়ামী লীগের জন্মে ঘড়ি, কলম বিক্রির টাকাও অবদান রেখেছে

একটি ঘোষণা এলো, টাঙ্গাইলের দক্ষিণের আসনে উপ-নির্বাচন হবে ১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে।
এক ঝাঁক তরুণ নেতা – যাঁদের অধিকাংশই এসেছিলেন মুসলিম লীগ থেকে – সিদ্ধান্ত নিলেন, দলের সাবেক নেতা সামসুল হককে অনুরোধ করবেন সেই আসনটিতে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্যে।
সামসুল হক নির্বাচন করতে রাজি হলেন। কিন্তু, তহবিল সংগ্রহের বিষয়টি একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো। তিনি ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল যান যখন তাঁর সমর্থকরা এর জন্যে টাকা তুলতে করতে শুরু করেন।
তাঁরা কয়েকশ টাকা তুলতে পেরেছিলেন। ছাত্র ও সামসুল হকের সমর্থকরা তাঁদের ঘড়ি, কলম বিক্রি করে কিছু টাকা তুলে তাঁর হাতে দিয়েছিলেন।
অন্যদিক, মুসলিম লীগের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা টাঙ্গাইল গেলেন টাকা হাতে, গাড়ি চড়ে। তাঁরা সেখানে গেলেন তাঁদের প্রার্থী খুররম খান পন্নীকে সমর্থন জানাতে।
ভোটারদের অনেকেই ছিলেন সেই জেলার নামকরা জমিদার পন্নীর প্রজা। তিনি খুবই শক্তিশালী প্রার্থী। কেননা, তাঁর দল ক্ষমতায় এবং তাঁর নিজেরও রয়েছে আর্থিক সামর্থ্য।
এদিকে, সামসুল হক ও তাঁর সমর্থকদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। কিন্তু, তিনি নিয়োজিত করলেন আদর্শবাদে বিশ্বাসী এক কর্মীবাহিনীকে। সে সময় কোনো রাজনৈতিক দল ছিলো না যে তাঁকে সাংগঠনিক বা আর্থিকভাবে সহযোগিতা করবে। তাঁর কর্মীরা পায়ে হেঁটে নির্বাচনী প্রচারণা করলেন। এমনকি, তাঁদের কাছে পর্যাপ্ত খাবারও ছিলো না।
১৯৪৯ সালের ২৬ এপ্রিলের উপনির্বাচনে টাঙ্গাইলের নাগরপুর, মির্জাপুর ও বাসাইল আসনে সামসুল হকের কাছে পরাজিত হলেন খুররম খান পন্নী।
মুসলিম লীগের এই পরাজয়ের জন্যে দায়ী করা হলো দলটির অপশাসন, দমন-নিপীড়ন এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনার অভাবকে।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সাধারণ জনগণের চাহিদা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
পরাজয়ের পর মুসলিম লীগ ঘোষণা দিলো যে সামসুল হককে সংসদে ঢুকতে দেওয়া হবে না। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি মামলাও ঠুকে দেওয়া হলো।
ঢাকায় সাধারণ ছাত্র-জনতা সাদরে বরণ করে নিলেন নব-নির্বাচিত সামসুল হককে। পুরাতন ঢাকার ওয়ারী এলাকার রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন একটি সভা ডাকা হলো সামসুল হকের সমর্থকদের একটি ভবিষ্যৎ দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্যে।
সেই সভায় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি করে এবং সামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করা হয়। তখন জেলে ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান; তাঁকে করা হলো দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
এভাবেই শুরু হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দলের যাত্রা। তারপর, সব ইতিহাস।
১৯৫৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত দলটির তৃতীয় কাউন্সিলে এর নাম থেকে “মুসলিম” শব্দটি বাদ দেওয়া হয়।
এই প্রতিবেদনটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” এবং বাংলাপিডিয়া থেকে নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে।
Comments