আফ্রিকায় ৮ হাজার কিমি ‘সবুজ মহাপ্রাচীর’

Great Green Wall in Africa
আফ্রিকায় গড়ে তোলা হচ্ছে “সবুজ মহাপ্রাচীর”। ছবি: সংগৃহীত

আফ্রিকায় গত ১০ বছর ধরে ধীরে ধীরে অনেকটা নীরবেই গড়ে তোলা হচ্ছে “সবুজ মহাপ্রাচীর”। পৃথিবীর সব প্রাচীরের উদ্দেশ্য একই, শক্রকে ঠেকানো। আফ্রিকার মহাশক্র মরুকরণকে ঠেকানোই এই প্রাচীরের লক্ষ্য।

প্রথম দিকে মহাদেশটির ১১টি দেশ অংশ নিয়েছিলো এই মহাপ্রাচীর তৈরিতে। দেশগুলো হলো সেনেগাল, মৌরিতানিয়া, মালি, বুরকিনা ফাসো, নাইজার, নাইজেরিয়া, শাদ, সুদান, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া এবং জিবুতি। এরপর যোগ দেয় আরও ১০টি দেশ। প্রায় আট হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৫ কিলোমিটার প্রস্ত এই সবুজ বেষ্টনীতে রোপণ করা হবে ১১ মিলিয়ন গাছ।

পশ্চিম আফ্রিকার সেনেগাল থেকে শুরু হয়ে পূর্ব আফ্রিকার জিবুতি পর্যন্ত বিস্তৃত এই মহাপ্রাচীরের অফিসিয়াল নাম “দ্য গ্রেট গ্রিন ওয়াল ইনিশিয়েটিভ ফর দ্য সাহারা অ্যান্ড সাহেল”।

২০০৭ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের প্রস্তাব আসে আফ্রিকান ইউনিয়ন থেকে। তখন খরচ ধরা হয়েছিলো আট বিলিয়ন ডলার। প্রকল্পের অর্থায়ন ও অন্যান্য সহযোগিতায় রয়েছে বিশ্ব ব্যাংক, জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যে বোটানিক্যাল গার্ডেনগুলো।

মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন এর এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রায় ৫০ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে বনায়ন সম্ভব হবে। এর ফলে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন টন কার্বন শোষণ করা যাবে। এছাড়াও, খাদ্য নিরাপত্তা পাবে ২০ মিলিয়ন মানুষ। তৈরি হবে সাড়ে তিন লাখ মানুষের কর্মসংস্থান।

এদিকে, ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক ভিডিওচিত্রে দেখা যায় কীভাবে সুবিধা পেতে শুরু করেছে সবুজ প্রাচীরের দেশ সেনেগাল। দেশটির একটি গ্রামের প্রধান আবসামান মৌদুবা সংবাদমাধ্যমটিকে জানান, “এ অঞ্চলে যখন কোন গাছ ছিলো না তখন বাতাসে এখানে ভূমি-ক্ষয় হতো। এখন আমরা সুরক্ষিত অবস্থায় আছি। গাছের পাতা পচে সার হচ্ছে। গাছের ছায়ায় আবহাওয়া অনেকটা ঠাণ্ডা হয়েছে।”

সবুজ মহাপ্রাচীরের সুবিধাগুলো জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “আগের মতো পানির অভাব নেই। পুরনো কুয়াগুলো পানিতে ভরে উঠছে। ফলে, চাষাবাদও হচ্ছে আজকাল।”

Great Green Wall in Africa
আফ্রিকার “সবুজ মহাপ্রচীর” সৃষ্টি করছে কর্মসংস্থান। ছবি: সংগৃহীত

মৌদুবার মতে, সবুজ প্রাচীর তাঁর গ্রামের অর্থনীতি পাল্টে দিয়েছে। আগে মরুকরণের কারণে লোকেরা গ্রাম থেকে চলে যেত। এখন এখানে কাজ করার ক্ষেত্র তৈরি হওয়ায় গ্রামবাসীদের অভিবাসনের জন্যে অন্য কোথাও যেতে হচ্ছে না।

বিবিসির ভিডিওচিত্রে দেখানো হয়, অনেক গ্রামবাসী এখন সবজি চাষ করছেন। বিদ্যালয়গুলোতে ছেলে-মেয়েদের সংখ্যাও বুদ্ধি পাচ্ছে।

সবুজ মহাপ্রাচীরের জন্যে গাছ লাগান মৌদুবার গ্রামের একজন নারী আমিলি। তিনি জানান, “এই সবুজ দেয়াল তৈরির আগে আমাদের কোন কাজ ছিলো না। এখন আমি সবজি বাগান করে আয় করছি। বাচ্চারাও স্কুলে যাচ্ছে। গাছ লাগিয়ে আমি এই দেয়াল তৈরির কাজ করে যেতে চাই যা আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ পাল্টে দিবে।”

তবে, গত ১০ বছরে পুরো প্রকল্পের ১৫ শতাংশ কাজ শেষ হলেও বাকি কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে এবং টাকার অভাবে সে কাজ আটকে যাবে কী না তা নিয়ে দাতাদের মধ্যে জোর আলোচনা চলছে।

Comments

The Daily Star  | English

Made with US cotton? Pay less at US customs

Bangladesh is likely to benefit from reduced US tariffs on garment exports under a new clause that incentivises the use of American materials, potentially enhancing the country’s competitiveness in the US market.

8h ago