ইফতারে বিনামূল্যে দুধ খাওয়াবে বিজেপি

পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ইফতারের সময় বিনামূল্যে গরুর দুধ খাওয়াবে ভারতীয় জনতা পার্টির তাত্ত্বিক গুরু রাষ্ট্রীয় স্বংয় সেবক সংঘ বা আরএসএস। আর এতে সহযোগিতা করবে বিজেপির আদর্শে দীক্ষিত গো উন্নয়ন সেল।
গতকাল শনিবার এরই একটি মহড়া অনুষ্ঠিত হয়ে গেল কলকাতার চিত্তরঞ্জন এভিনিউর বিজেপির রাজ্য অফিসের সামনে।
এদিন সন্ধ্যায় বিজেপির গো উন্নয়ন সেলের পক্ষ থেকে ১ হাজার ৮০০ জন পথচলতি মানুষকে বিনামূল্যে গরুর দুধ খাওয়ানো হয়। উদ্যোক্তাদের দাবি, পরীক্ষামূলক দুধ বিতরণে ব্যাপক সাফল্য মিলেছে তাদের।
গো উন্নয়ন সেলের আহ্বায়ক সুব্রত গুপ্ত জানিয়েছেন, “রাস্তার সিগনালের দাঁড়িয়ে থাকা বাস, ট্যাক্সি, মোটরসাইকেল থেকেও বহু মানুষ নেমে স্বেচ্ছায় দুধ খেয়েছেন।”
বিজেপির রাজ্য অফিস লাগোয়া এলাকার আশেপাশে অনেক মুসলমান ইফতার করার পর রাস্তায় বেড়িয়েছিলেন শনিবার। তারাও বিজেপির দেওয়া বিনামূল্যের গরুর দুধ পান করেছেন বলে দাবি করেন সুব্রত গুপ্ত।
তিনি আরও জানান, “পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রবাদী মুসলিম মঞ্চ চলতি রমজান মাসে রাজ্য জুড়ে ইফতারের সময় গরুর দুধ খাওয়ানোর কর্মসূচি পালন করবে। এই কর্মসূচিতে গো উন্নয়ন সেল সহযোগী হিসাবে কাজ করবে।”
বিজেপির দলীয় সূত্র বলছে, গরুর মাংস না খাওয়ার প্রচারের অংশ হিসাবে গরুর দুধ খাওয়ানোর কর্মসূচি হাতে নিয়েছে রাজনৈতিক দলটি। ভারতের কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার ইতোমধ্যে গরু কেনা-বেচার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। সেই সঙ্গে গরুর শুমারি ছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যে প্রকাশ্যে গরুর মাংস বিক্রির ওপর অলিখিত বিধি-নিষেধ চলছে।
দলীয় সূত্র মতে, বিজেপির কট্টরপন্থী অংশের চাপে উদার ভাবাপন্ন শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ কিংবা গরু বিক্রির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেন না। তবে তারাও এসব খাদ্যাভ্যাসের বিষয়ে রাজনীতি না করার পরামর্শ দিচ্ছেন নীতিনির্ধারকদের।
তবে গরুর মাংস খাওয়া না খাওয়া নিয়ে বিজেপির এই রাজনীতি মানুষের স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসে ওপর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা বলে তৃণমূল, কংগ্রেস কিংবা বামপন্থী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অভিযোগ।
আরএসএসের রাজ্যস্তরের শীর্ষ নেতা যীষু বসু দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, রাষ্ট্রবাদী মুসলিম মঞ্চ এটা তাদের অঙ্গ সংগঠন না হলেও আরএসএসের সঙ্গে এদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সংগঠনটি প্রকৃত ভারত প্রেমীদের সংগঠন বলে দাবি করে ওই নেতা বলেন, একজন মুসলমান কী দিয়ে ইফতার করবেন সেটা হিন্দুর চেয়ে মুসলমানরাই ভালো জানেন। তাই রাষ্ট্রবাদী মুসলিম মঞ্চ নিজেরাই ঠিক করেছে যে ইফতারের সময় তারা দুধ দেবেন রোজদারদের।
এটাকে খুবই ভালো উদ্যোগ বলে উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, “এসবের মধ্যে ধর্ম নিয়ে কোনও রাজনীতি নেই। যাঁরা বলছেন, তাঁরাই বরং রাজনীতি করার জন্য অভিযোগ তুলছেন।”
বামফ্রন্ট নেতা তথা কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য দুবছর আগে কলকাতার ধর্মতলায় প্রকাশ্যে গরুর মাংস খেয়ে গরুর মাংসের ওপর অলিখিত ফতোয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
এদিন টেলিফোনে তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, “ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে মানুষের খাদ্যাভ্যাসের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ যাঁরা করছেন তাঁরা আসলে ধর্ম এবং বিজ্ঞান কিছুই বোঝেন না। মানুষ কী খাবে, কী খাবে না সেটা তাঁর একান্তই নিজের স্বাধীনতা।”
তৃণমূলের নেতা ও রাজ্যের পৌরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিব ববি এই প্রতিবেদককে বলেন, “কে কীভাবে তাঁর ধর্ম পালন করবেন সেটা একান্তই তাঁর নিজের ব্যাপার। বিজেপির মতো একটি সাম্প্রদায়িক দলের সামনে এটা রাজনৈতিক হবেই। তবে সাধারণ মানুষের কাছে খাদ্যাভ্যাসটা রাজনীতি নয়, এটা স্বভাব।”
তবে এসব শুনেও পরিষ্কার ভাষায় সুব্রত গুপ্ত বলছেন, “রাজ্য জুড়ে গো হত্যা রুখতেই আমরা গো রক্ষার এই বার্তা দিতে দুধ খাওয়ানোর কৌশল নিয়েছি। এবং সেটা চলতেই থাকবে।”
Comments