কট্টর হিন্দুত্বের কোপে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর!

Rabindranath Tagore
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

হিন্দুত্ব শব্দটিতে বরাবর আপত্তি ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির তাত্ত্বিক গুরু রাষ্ট্রীয় স্বংয় সেবক (আরএসএস) সংগঠনটির। কয়েক বছর ধরে দেশটিতে বেশ কিছু ঘটনা থেকে আরএসএসের অতি-প্রভাব প্রকাশ পাচ্ছে। আর এজন্য ভারতে আলোচনা যেমন হচ্ছে তেমন হচ্ছে সমালোচনাও।

সম্প্রতি অমর্ত্য সেনের জীবনী নিয়ে নির্মিত এক তথ্যচিত্রের কিছু শব্দে “বিপ” দেওয়ার সুপারিশ আরএসএসের অন্যতম প্রভাব প্রকাশের ঘটনা বলেই মনে করা হয়।

সেই বিতর্কের আগুনে এখনো জল পড়েনি। এরই মধ্যে নতুন বিতর্কও উসকে দিয়েছে ভারতের “শিক্ষা-সংস্কৃতি উত্থান ন্যাস” নামের একটি সংগঠন। শুধু কবিগুরুর লেখা বাদ দেওয়ার বিষয়টি এককভাবে সুপারিশে নেই। ন্যাসের সুপারিশে ইংরেজি, উর্দু, আরবি শব্দ বিভিন্ন লেখা থেকে বাদ দেওয়া, মির্জা গালিব এবং মুকবুল ফিদা হুসাইনের লেখা পুরোপুরি তুলে নেওয়ার কথাও সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

ন্যাস চাইছে, পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়ার হোক গুজরাট দাঙ্গায় ২ হাজার মুসলিমের প্রাণ হারানোর ইতিহাস, ১৯৮৪ সালে শিখ দাঙ্গার জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ক্ষমা চাওয়ার লাইন তাঁরই লেখা থেকে তুলে দেওয়ার পক্ষে সাওয়াল করেছে আরএসএস ঘনিষ্ঠ ন্যাস। ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি, “শিক্ষা-সংস্কৃতি উত্থান ন্যাস” আরএসএস-ঘনিষ্ঠ একটি সংগঠন।

ন্যাসের সভাপতি দীণনাথ দরবার দেশটির “ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং” এর কাছে দেওয়া সুপারিশে বলেছেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা সাহিত্যপাঠ একাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। কেননা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখায় জাতীয়তাবাদ ও মানবতাবাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করেছেন। দীণনাথের সুপারিশে পাঠ্যবই থেকে ইংরেজি, উর্দু এবং আরবি শব্দগুলোও প্রত্যাহার করার কথা বলা হয়েছে।

গতকাল সোমবার (২৪ জুলাই) এমন অভিযোগে রাজ্যসভায় তুমুল হট্টগোল করেন বিজেপি বিরোধী শিবির তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের সাংসদরা।

সেদিন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়ণ বলেন, “কবিগুরু দেশের সম্পদ। জাতীয় সংগীত রচনা করেছেন। তাঁকে পাঠক্রম থেকে বাদ দেয়ার হবে? এসব কি হচ্ছে?” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে রাজনীতির বিরুদ্ধেও তাদের অবস্থান বলেও সংসদে জানান তৃণমূলের সাংসদ-মুখপাত্র।

এদিকে ভারতের জাতীয় কবিকে এভাবে গৈরিকরণের প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও।

এই প্রসঙ্গে কলকাতায় কবি শঙ্খ ঘোষ বলেছেন, “জ্ঞান যেথা মুক্ত - এমন একটি দেশ যিনি দেখতে চেয়েছিলেন, সেই তিনি (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) তো আরএসএসের রোষানলে পড়বেনই। তাঁর মতে, এমন ভাবনাচিন্তার বাড়াবাড়ি নিয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে।”

শিক্ষাবিদ ড. পবিত্র সরকারের ভাষায়, কোনও মানুষ কি করে এমন অর্বাচীনের মতো করতে পারেন, ভেবে পাচ্ছি না। এই দেশের সংস্কৃতি বহুমুখী।

ভারতের কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফে জাতীয় পাঠ্যক্রম সংসদের পক্ষ থেকে পাঠ্যপুস্তক সম্পর্কে সবার মতামত চাওয়া হয়। প্রায় চার মাস আগে সরকারি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মতামত চাওয়ার পর প্রায় সাড়ে সাতশো মতামত সংশ্লিষ্ট পর্ষদের কাছে জমা পড়েছে। আরএসএস ঘনিষ্ঠ ন্যাসের মতামতও ওই সাড়ে সাতশো মতামতের একটি। সরকার অবশ্য মতামতগুলোর নিরিখে এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেনি বলে জানা গেছে।

ভারতের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সাহিত্যে নোবেল পেয়ে বিশ্বের কাছে ভারতীয়দের মাথা উঁচু করে গিয়েছেন। সেই রবি ঠাকুরকেই এখন জাতীয়তাবাদ ও মানবতাবাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরির অভিযোগে পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেওয়ার মতো প্রস্তাব দেওয়ার ঘটনাকে ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদের কোপ বলেই মনে করছেন অনেকে।

Comments

The Daily Star  | English
problems in filing complaints in police stations

No scope to verify authenticity when cases are filed: IGP

Instructions have already been issued to ensure that no one is arrested in a harassing manner, he says

2h ago