কলকাতায় মঙ্গল শোভাযাত্রা

বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব বাংলা বর্ষবরণ। বাংলাদেশের একদিন পর ভারতীয় পঞ্জিকা অনুসারে আজই (শনিবার) নববর্ষ পালন করছেন পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়সহ গোটা ভারতজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোটি কোটি বাঙালি।
পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় এবারই প্রথম ঢাকার চারুকলার আদলে তৈরি মঙ্গল শোভাযাত্রার ব্যবহৃত স্ট্যাচু-মুখোশ সংযুক্ত করে শোভাযাত্রা প্রদক্ষিণ করে। আর সেখানে পা মিলিয়েছেন হাজারো বাঙালি।
শুধু কলকাতা শহরে নয়, ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা, মেঘালয়ের শিলং শহরেও আজ বাঙালির মহা-উৎসব পালিত হচ্ছে শতভাগ বাঙালিয়ানার আবহে।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলী বাগান থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন-চার নম্বর গেটের মাঝে গিয়ে শেষ হওয়ার পর ওই শোভাযাত্রায় পা মেলানো শিল্পী-লেখক-গবেষক অংশ নেন সংক্ষিপ্ত বর্ষবরণের আলোচনা সভায়। হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি তুলে ধরেছেন ওই বক্তারা। সেখানে বক্তব্য রেখেছেন প্রখ্যাত চিত্র শিল্পী সমীর আইচ, শিক্ষাবিদ মিরাতুন নাহার, বাংলাদেশের বর্ষীয়ান সাংবাদিক উর্মি রহমান, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রো-ভিসি সিদ্ধার্থ দত্ত, অধ্যাপক ড. অভিজিৎ চন্দ্র প্রমুখ।
গাঙ্গুলী বাগানের মঙ্গল শোভাযাত্রার ব্যবহৃত স্ট্যাচু, মুখোশ কিংবা কুলো-পাখা-সরা তৈরিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সাহায্য করেছেন ঢাকার চারুকলার বেশ কয়েকজন প্রাক্তনী।
শুধু এদিন বেসরকারিভাবেই শোভাযাত্রা বের হয়েছে তা নয় বরং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অনেকটা চমক দেওয়ার মতোই শোভাযাত্রার আয়োজন করে। রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শোভাযাত্রায় হাঁটেন হাজারো মানুষ। মন্ত্রী বলেন, “এটা বাঙালির উৎসব। কোনও ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী নেই। শুধুমাত্র বাঙালিয়ানা এখানে মুখ্য।”
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশেই রাজ্য জুড়ে আজ তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে বৈশাখী মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান বর্ষীয়ান ওই মন্ত্রী।
মধ্য কলকাতার একামেডি অব ফাইন আর্টস-প্রাঙ্গণে বরাবরের মতো এবারও বর্ষবরণ উদযাপন করেছে ভাষা ও চেতনা সমিতি। মঙ্গল শোভাযাত্রা’র আদলে কোনও স্ট্যাচু-মুখোশের শোভাযাত্রার আয়োজন না করলেও বরাবরের মতোই বাঙালির ঐতিহ্য তুলে ধরে
নানা স্লোগান বুকে ঝুলিয়ে কলকাতার বাঙালিদের একটা বড় অংশ যুক্ত হয়েছিলেন তাদের উদ্যোগের সঙ্গেও।
ভাষা ও চেতনা সমিতির সম্পাদক ইমানূল হক বললেন, দুর্গাপুজো কিংবা ঈদ বাঙালির এই দুটি বড় উৎসবের চেয়েও বাঙালি হিসাবে এটাই আমাদের সর্ববৃহৎ উৎসব, সার্বজনীনও।
বৈশাখে ব্যতিক্রম আয়োজন করে এরই মধ্যে আলোচনায় এসেছেন কলকাতার একটি প্রথম সারির প্রকাশনী সংস্থা। বাংলা বছরকে তারা বরণ করছে প্রত্যেকের হাতে একটি গাছ উপহার দিয়ে। গাছই আমাদের প্রাণ- বাংলা বছরের প্রথম দিন একটি গাছ লাগান- এমন স্লোগান সামনে এনে এই আয়োজন হয়েছে কলকাতার অদূরে বারাসাতে।
Comments