কানাডার উগ্রবাদীদের সাথে তামিমের যোগসূত্র

তার মুখটা খুব সুদর্শন | চোখ দুটো যেন স্বপ্নমাখা | কিন্তু ওই স্বপ্নমাখা চোখের পেছনে লুকিয়ে আছে একটি নিষ্ঠুর বিদ্বেষপূর্ণ আর বিকৃতমস্তিস্ক সন্ত্রাসী |

তার মুখটা খুব সুদর্শন | চোখ দুটো যেন স্বপ্নমাখা |

কিন্তু ওই স্বপ্নমাখা চোখের পেছনে লুকিয়ে আছে একটি নিষ্ঠুর বিদ্বেষপূর্ণ আর বিকৃতমস্তিস্ক সন্ত্রাসী |

এই ব্যক্তি তামিম চৌধুরী - জুলাই মাসে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সে সন্দেহভাজন | তার প্রায় এক সপ্তাহ পরেই, ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদ জামাতে আত্মঘাতী হামলায় পরিকল্পনাকারী ছিলেন তিনি |

দীর্ঘদিনের কানাডা প্রবাসী তামিমের ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর এবং আতঙ্কজনক নতুন সব তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে - তিনি এমন অনেকের সাথেই মিশতেন যারা পরবর্তীতে ইসলামিক স্টেটে যোগদান করেছেন, অনেকেই সিরিয়াতে পারি জমিয়েছেন |

তামিম এতটাই বিপজ্জনক ছিলেন যে, তার জন্মস্থান উইন্ডসরের ধর্মীয় নেতারা তাকে ২০১৩ সালে মসজিদে অল্প বয়সীদের সাথে কথা বলতে বারণ করেন, এই ভয়ে যে তামিম তাদেরকে উগ্রবাদীদের পথে নিয়ে যাবেন |

জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের উগ্রবাদ এবং চরমপন্থী বিষয়ের বিশেষজ্ঞ অমরনাথ আমারসিঙ্গাম, ২০১৫ সালে তামিমের ব্যাপারে জানতে পারেন যখন তিনি উইন্ডসরে বসবাসকারী জিহাদিদের নিয়ে একটি অনুসন্ধান করছিলেন |

তিনি আহমেদ ওয়াসিম ওরফে আবু তায়েব নামের এক সন্ত্রাসীর বন্ধুদের সাথে কথা বলেন, যিনি সিরিয়া যুদ্ধে আহত হয়ে কানাডায় ফিরে এসেছিলেন | সেখানেই তামিমের নাম উঠে আসে | ধরে নেয়া হয়েছিল, তামিম সন্ত্রাসী হতে সিরিয়াতে চলে গেছেন | কিন্তু অমরনাথ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারেন নি যে তামিম কবে সিরিয়া গেছেন |

ন্যাশনাল পোস্টের তথ্যমতে ওয়াসিমের মা তার আসল পাসপোর্ট নিয়ে নেবার পরে, সে একটি নকল পাসপোর্ট নিয়ে সিরিয়াতে প্রবেশ করেন |

ওয়াসিমের বন্ধুকে যখন অমরনাথ তামিমের বিষয়ে প্রশ্ন করেন, তখন সে একটু বিস্মিত হয়ে জানায় কানাডায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানির পরে তামিম তার মাতৃভূমি বাংলাদেশে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয় |

তখন থেকেই সে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ চালানোর জাল বুনে যাচ্ছে, কম বয়সী ছেলেদের রিক্রুট করছে, তাদের বিভ্রান্ত করে জঙ্গি বানাচ্ছে এবং নৃশংস সব হামলা পরিকল্পনা করে যাচ্ছে |

ক্যালগারির সাথে যোগসূত্র সন্ত্রাসবাদের সাথে কানাডার ক্যালগারির একটি বিশেষ যোগসূত্র আছে | কানাডিয়ান পত্রিকা ন্যাশনাল পোস্টের মতে, কয়েকজন তরুনের একটি দল ইতিমধ্যে ক্যালগারি ছেড়ে আইএস যোদ্ধা হতে সিরিয়াতে পারি জমিয়েছিলেন | ক্যালগারি মারাত্মক কিছু জিহাদির জন্মভূমি, যেমন ডেমিয়েন ক্লেয়ারপোর্ট, সালমান আশরাফি, গ্রেগরী, কোলিন গর্ডন এবং ফারাহ শিরডন |

২০১৪ সালের ৫ জুন সিবিসির প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, ২২ বছর বয়সী সালমান আশরাফি, ২০১৩ সালে ইরাকে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে ৪৬ জনকে হত্যা করেছে |

ন্যাশনাল পোস্ট অফ কানাডা জানায়, ২০১৪ সালের জুন মাসের শুরুর দিকে আইএস আশরাফের ছবির সাথে প্রশংসাবাণী প্রকাশ করে - যেখানে বলা হয় আশরাফি উত্তর বাগদাদে একটি গাড়ি বোমা হামলা চালিয়েছে |

১৭ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন ডেমিয়েন ক্লেয়ারমন্ট - তার বন্ধুদের মধ্যে একজন ছিলেন আশরাফি | ধর্মান্তরিত হয়ে ক্লেয়ারমন্টের নাম হয় মুস্তাফা-আল-ঘারিব | আশরাফি আর ক্লেয়ারমন্ট একই মসজিদে নামাজ আদায় করতেন, এবং ডাউনটাউন ক্যালগারিতে একই এপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে থাকতেন |

২০১২ সালে ক্লেয়ারমন্ট সিরিয়ার উদ্দেশ্যে ক্যালগারি ছাড়েন আল- কায়দা সংসৃষ্ট চরমপন্থী দল জাভাত আল নুসরার যোদ্ধা হবার জন্য | পরবর্তীতে সে একটি যুদ্ধে আহত হলে, ফ্রি সিরিয়ান আর্মির হাতে ধরা পরে এবং আলেপ্পো শহরে তার মৃত্যু হয় | ক্যালগারির এই ভয়ঙ্কর প্রভাবের মধ্যেই তামিমকে ঘুরতে দেখা যায় |

jihadology.কম -এ প্রকাশিত অমরনাথের প্রবন্ধ অনুযায়ী, ক্লেয়ারমন্ট আর আশরাফির বন্ধুরা তামিমকে চিনতে পারে | ১৯৮৬ সালের জুলাই মাসের ২৫ তারিখে তামিমের জন্ম হয়, সে কানাডিয়ান নাগরিক | অমরনাথের অনুসন্ধান মতে, তামিম সম্ভবত উইন্ডসরের ফর্স্টার সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল, এবং খেলাধুলায় খুব সক্রিয় ছিল |

তামিম ২০১১ সালে ইউনিভার্সিটি অব উইন্ডসর থেকে রসায়নে স্নাতক ডিগ্রী নেন এবং তারপর ক্যালগারিতে যান |

"তামিম কি ক্যালগারিতে একবারে চলে এসেছিলেন, নাকি কয়েকবার আসা-যাওয়া করেছেন সেটা বুঝে ওঠা কঠিন" - অমরনাথ লিখেছেন | "আমার মনে হচ্ছে তামিম আসা-যাওয়া করেছেন কারণ যাদের সাথে আমি কথা বলেছি তাদের বক্তব্যে মনে হয়েছে তামিমকে তারা থেমে থেমে মনে রেখেছেন | তামিম সম্ভবত একটু গুটিয়ে রাখতেন নিজেকে, এবং ক্যালগারির মুসলিম সমাজের সাথে খুব ঘনিষ্টভাবে মিশতেন না" |

" এক সূত্র আমাকে জানিয়েছে, তামিমকে ডেমিয়েন ক্লেয়ারমন্ট, সালমান আশরাফি, গ্রেগরী গর্ডন ওয়াসিম নামের এক ব্যক্তি (আহমদ ওয়াসিম নয়) এবং আরো কয়েকজনের সাথে ব্যক্তিগত ভাবে মিশতে দেখা গেছে | তাদের বন্ধুদের মতে, ডেমিয়েন এখানে নেতার ভূমিকা পালন করতেন, আবার এও হতে পারে যে তামিমও একই রকম প্রভাবশালী" |

তামিম তারপর সিরিয়াতে চলে যান, হয়তো ক্যালগারি থেকে অথবা উইন্ডসর থেকে - সম্ভবত ২০১২ সালের শেষের দিকে | কিন্তু অমরনাথের আরেকটি তথ্য প্রদানকারী বলেন ২০১৩ সালে তামিমকে ইউনিভার্সিটি অব উইন্ডসরে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে |

সিরিয়া থেকে তামিম সম্ভবত বাংলাদেশ চলে আসেন, কিন্তু এবার তার আগমনের কারণ সুস্পষ্ট নয় |

কিন্তু আসার পর থেকেই নানান ভাবে তামিম বাংলাদেশে অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছেন |

মনে করা হচ্ছে, তামিম নিজের নাম পাল্টে শেখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ নাম নিয়েছেন | এই নামের ছদ্দবেশে তিনি আইএস এর পত্রিকা দাবিককে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন |

"ভৌগোলিক দিক থেকে, খলিফা প্রতিষ্ঠার এবং বিশ্বব্যাপী জিহাদের জন্য বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা | বাংলাদেশে একটি শক্ত জিহাদি ভীত তৈরী করতে পারলে, ভারতে গেরিলা আক্রমণ করা সহজ হবে" তামিম বলে দাবিককে |

Comments

The Daily Star  | English

Mob justice is just murder

Sadly, when one lynching can be said to be more barbaric than another, it can only indicate the level of depravity of some our university students

1h ago