‘গরুচোর সন্দেহে’ গাজীপুরে ৩ পুলিশ সদস্যকে গণপিটুনি
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার দক্ষিণ ধনুয়া গ্রামে দুজন সোর্সসহ শ্রীপুর থানা পুলিশের সাদা পোশাকধারী তিন সদস্যকে ‘গরুচোর সন্দেহে’ গণপিটুনি দিয়েছে গ্রামবাসী।
এক জুয়াড়ীর কাছ থেকে নগদ টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয়ার পরও তাকে মারধোর করায় গ্রামের উত্তেজিত গ্রামবাসী রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পুলিশ সদস্যদের ‘গরুচোর’ বলে গণপিটুনি দেয়।
পরে স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করা হয়।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল ইসলাম সাদা পোশাকধারী ফোর্স নিয়ে সন্ধ্যার দিকে ওই গ্রামের যায়। তারা ধনুয়া গ্রামের মৃত হাতেম আলীর ছেলে সাইফুল ইসলামকে স্থানীয় পাথারপাড়ে জুয়াড়ী বলে ধরে হাতকড়া পড়ায়। এসময় তার কাছ থেকে নগদ কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে সেখানেই তাকে আরও টাকার জন্য মারধোর করতে থাকে।
এ দৃশ্য দেখে আশপাশের বাড়ির নারীরা ঝাড়ু-লাঠি নিয়ে বের হলে হাতকড়া খুলে পুলিশ দ্রুত সেই স্থান ত্যাগের চেষ্টা করে।
গ্রামাবাসীরা এসময় গরু চোর বলে চিৎকার দিয়ে পুলিশ সদস্য ও তাদের দু’জন সোর্সকে ধরে গণপিটুনি দেয়।
পরে, সোর্সসহ পুলিশ সদস্যদের আটক করে গ্রামবাসী। তারা স্থানীয় দক্ষিণ ধনুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা করে।
স্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তা ইসমাইল হাজী জানান, এসময় থানার একজন এসআই পুলিশ সদস্যদের আটকের কথা জানিয়ে তাদের উদ্ধারে সহায়তা চান। পুলিশের খবর শুনে তিনিও ঘটনাস্থলে গেলে তার উপস্থিতিতেই উত্তেজিত জনতা মারধোর করার সময় তিনিও আঘাত প্রাপ্ত হন। স্কুল মাঠে কমপক্ষে দুই হাজারের বেশি গ্রামবাসী উপিস্থিত ছিলেন।
ইসমাইল হাজী জানান, ধনুয়া, নগরহাওলাসহ আশপাশের গ্রামে কয়েকমাস যাবত গরু চোরের উপদ্রব বেড়েছে। টাকা ছিনিয়ে নেয়া ও সাদা পোশাকধারী হওয়ায় গরু চোর ভেবে পুলিশ সদস্যদের ওপর চড়াও হয়।
পুলিশের অভিযোগে অভিযুক্ত সাইফুল ইসলামের ভাই সফিকুল ইসলাম জানান, তার ভাই জুয়াড়ী নয়। রাস্তা থেকে ধরে হাতকড়া পরিয়ে টাকা, মোবাইল নেয়ার পরও পুলিশের লোকজন তাকে মারধোর করেছে। এসময় গ্রামবাসী পুলিশের পরিচয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি। পুলিশও গ্রামাবাসীকে তাদের পরিচয় দেয়নি। পরে গ্রামবাসী গরু চোর ভেবেই পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল ইসলাম জানান, তিনি ওই এলাকায় গিয়েছিলেন কিন্তু কাউকে হাতকড়া পরাননি। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জুয়াড়ীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় কোনো মামলা বা কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, ঘটনাটি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। এরকম হয়ে থাকলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
Comments